ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নেতাদের ভোটের বাইরে রাখতে দ্রুতবিচার আইনে সাজা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৭ জুন ২০১৭

বিএনপি নেতাদের ভোটের বাইরে রাখতে দ্রুতবিচার আইনে সাজা বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে নির্বাচনের বাইরে রাখতেই দ্রুতবিচার আইনে সাজা বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার মন্ত্রিসভায় পাস করেছে দ্রুতবিচার আইনের সাজার মেয়াদ। আগে ছিল দুই বছর থেকে পাঁচ বছর কিন্তু এখন তারা আরও দুই বছর বাড়িয়ে দুই থেকে সাত বছরের সাজা করেছে। উদ্দেশ্য যেহেতু এখন নির্বাচনের কথা উঠেছে তাই এ সময়ে যদি বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে সাজা দিয়ে দেয়া যায়, তাহলে একা একা একটি নির্বাচন করতে পারবে। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এবার দেশের মানুষ আপনাদের ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে দেবে না। দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার আদায় করবে। সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। মন্ত্রিসভায় দ্রুতবিচার আইনের সাজার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের নেতাদের বিভিন্ন মামলায় সাজা দেখিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চাইছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাই তারা নির্বাচনের আগেই দ্রুতবিচার আইনের সংশোধনী এনেছে। ফখরুল বলেন, আমাদের অস্তিত্বের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য এবং জাতি হিসেবে টিকে থাকার জন্য এ সরকারকে পাল্টানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কারণ কোন জায়গায় সুস্থ অবস্থা নেই। দেশে আমরা কেউ নিরাপদ নই। বাবা-মারা এখন তাদের যুবক-তরুণ ছেলেমেয়েদের বাইরে বেরোতে দিতে চায় না, কখন তাদের ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে যাবে এবং বলবে জঙ্গী তারপর আবার ক্রসফায়ার। এ হচ্ছে দেশের অবস্থা। বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে ক্রসফায়ারে একটা, দুইটা, তিনটা খুন হচ্ছে। আবার নাটকও করে ভাল ভাল। বলে যে আশপাশের চারদিক ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। এনকাউন্টারে পুলিশের কয়েকজন আহত হয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে আবার আমরা কথা বললে পুলিশ বাহিনী মনোক্ষুণœ হয়। কিন্তু আমরা কেন প্রশ্ন করব না? সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা তো একটি জঙ্গীকে এখন পর্যন্ত বিচারের সামনে নিয়ে আসতে পারলেন না। দেখেন আর গুলি করে মেরে ফেলেন। বিচার হচ্ছে কোথায়? এ সমস্ত নাটক মানুষ বুঝে, বোকা বানানোর কোন কারণ নেই। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তাই বলছি ভালয় ভালয় নির্বাচন দিন। একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। তা না হলে অতীতে যে অবস্থা হয়েছে একনায়কদের সে অবস্থা আপনাদেরও হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে কোন দিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ করেছে। তিনি বলেন, যারা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, বাকশাল কায়েম করেছে তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে আমাদের হাসি পায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সবসময় সুষ্ঠু রাজনীতি করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভিশন ২০৩০’ দেশের ভবিষ্যতের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমানের ১৯ দফার বিষয়গুলো নিয়ে ভিশন প্রকাশ করেছেন। দেশের ভবিষ্যতের জন্য যা করা দরকার এখানে তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ সেøগান দিয়েছে গণতন্ত্রের আগে উন্নয়ন। কিন্তু এখন আর তারা এ সেøাগান দেয় না। কারণ, বেসরকারী খাতে কোন উন্নয়ন করছে না, পাবলিক খাতে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে, যাতে অর্থ হাতিয়ে নিতে সহজ হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশের উন্নয়নের সব কার্যক্রম শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা জিয়াকে নিয়ে যে বাজে মন্তব্য করেন তা লজ্জার। তারা অন্যায়ভাবে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করছেন। আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি ডাঃ আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ ড্যাবের মহাসচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডাঃ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলের সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ড্যাব নেতা ডাঃ আব্দুল মান্নান মিয়া, ডাঃ মোস্তাক রহিম স্বপন, ডাঃ মোহাম্মাদ আতিকুর রহমান প্রমুখ।
×