ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উগ্রপন্থী কানাডীয় তরুণ সালমানকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৭ জুন ২০১৭

উগ্রপন্থী কানাডীয় তরুণ সালমানকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক সালমান হোসাইন নামে এক উগ্রপন্থী তরুণ কানাডীয় পুলিশের গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি হয়ে ইন্টারপোলের রেড নোটিস মাথায় নিয়ে বাংলাদেশে আসার খবর পেয়ে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উগ্রপন্থী এই তরুণ ইহুদী গণহত্যার উস্কানিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত বলে কানাডার ন্যাশনাল পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের দাবি। সালমান হোসাইন নামে উগ্রবাদী এই তরুণের অবস্থান শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কানাডার টরোন্টোতে বসবাস করা ৩২ বছর বয়সী সালমান হোসাইনকে গত রবিবার ঢাকার গুলশানের একটি কফিশপের সামনে দেখা গেছে। রূপালী রঙের একটি টয়োটা করোলায় চড়ে তিনি ওই কফিশপে গিয়েছিলেন। সেখানে তার একটি ছবিও তুলেছেন এক আলোকচিত্রী। ঢাকায় তার অবস্থান সম্পর্কে এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম কানাডার ন্যাশনাল পোস্ট। আলোকচিত্রীর ভাষ্যের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, বনানীর একটি অভিজাত হোটেল ও উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকাতেও তাকে দেখা গেছে। ওই আলোকচিত্রী সালমানের কিছু সাম্প্রতিক ছবি কানাডিয়ান ন্যাশনাল পোস্টকে দিয়েছেন। কানাডা ওন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশের স্টাফ সার্জেন্ট পিটার লিওঁ কানাডার ন্যাশনাল পোস্টকে বলেছেন, সালমানের বিরুদ্ধে গণহত্যায় উস্কানির মামলার তদন্ত করছেন কানাডিয়ান পুলিশ। সালমানের নামে এখানে পরোয়ানা রয়েছে। কানাডার ন্যাশনাল পোস্ট লিখেছে, সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের কিছুদিন আগে সালমান কানাডা ছেড়ে গেলেও নিজের উপস্থিতির প্রমাণ রেখেছেন তিনি ইন্টারনেটে। গত সেপ্টেম্বরে একটি ছাগল জবাই করার সময় ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তাকে বাংলায় কথা বলতে শোনা যায়। ইউটিউব পোস্টে লেখা হয়, বিশ্বের যেখানেই ইহুদী, তাদের সহযোগী বা দাসদের পাওয়া যাবে, সেখানেই তাদের এভাবে নিধন করা দরকার। দায়েশ (আইএস), তোমরা কি ইসরাইল ও ইহুদীদের প্রতি তোমাদের দায়িত্বের কথা ভুলে গেছ? কানাডার ন্যাশনাল পোস্ট একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, তিনি সালমানের বিষয়ে বিস্তারিত না জেনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বন্ধু হয়েছিলেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সালমান ডজনখানেক নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মকা- চালান এবং তিনি ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিংয়েও জড়িত। সালমানের দেয়া ঢাকার একটি ফোন নম্বরও ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী ন্যাশনাল পোস্টকে দিয়েছেন। পত্রিকাটির পক্ষে একজন সাংবাদিক ওই নম্বরে ফোন করে নিজের পরিচয় দিলে অপর প্রান্ত থেকে ইংরেজীতে বলা হয়, তিনি ভুল লোককে ফোন করেছেন এবং তারপর লাইন কেটে দেয়া হয়। ন্যাশনাল পোস্ট লিখেছে, ইহুদীদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সালমানের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। তখন তিনি ইহুদীদের গণহারে হত্যার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য প্রচার শুরু করেন। ২০১০ সালের জুলাইয়ে কানাডার পুলিশ মামলা করার কিছুদিন আগে তিনি কানাডা ছেড়ে পালিয়ে যান। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সালমান হোসাইনই প্রথম ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে কানাডায় প্রথমবারের মতো গণহত্যার উস্কানি দিয়ে প্রচার চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১০ সালের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের কিছুদিন আগেই সালমান টরোন্টো থেকে লাপাত্তা হয়ে যান। পরে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস জারি করা হয়। তার অনুপস্থিতিতেও বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৬ বছর পর্যন্ত জেল খাটতে হতে পারে বলে কানাডিয়ান ন্যাশনাল পোস্ট পত্রিকার দাবি। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মোঃ মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই ধরনের খবরটি আমরাও জেনেছি। পুলিশ ইতোমধ্যেই খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধের বিপক্ষে। কানাডা সরকার কোন সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানালে তা বিবেচনা করবে। তবে সালমানকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার কোন আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় তাকে সেখানে প্রত্যর্পণ করার বিষয়টি জটিল, কঠিন। তাকে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টিও অনিশ্চিত। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল ডেস্কের একজন কর্মকর্তা জানান, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হলেই আসামিকে গ্রেফতার করে ফিরিয়ে নেয়া যাবে- এমন নিশ্চয়তা নেই। ইন্টারপোলের সদস্য দেশগুলো নিজেরাই ঠিক করে নিবে- কোন রেড নোটিসের ক্ষেত্রে তারা কতটা গুরুত্ব দেবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া উইং এর ডিসি মোঃ মাসুদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক সালমান হোসাইন নামে এক উগ্রপন্থী তরুণ কানাডীয় পুলিশের গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি হয়ে ইন্টারপোলের রেড নোটিস মাথায় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার বিষয়ে তারা জেনেছেন। খবরটির সত্যতা যাচাই-বাছাই পূর্বক তার অবস্থান শনাক্তের জন্য খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। তবে কানাডার সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও ইন্টারপোল ডেস্কের সহায়তা চাইতে হবে।
×