ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিডিআর বিদ্রোহ ॥ ৫৮৯ আসামির সর্বোচ্চ সাজার আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৭ জুন ২০১৭

বিডিআর বিদ্রোহ ॥ ৫৮৯ আসামির সর্বোচ্চ সাজার আবেদন খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের মৃত্যুদ- ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- ও খালাসপ্রাপ্ত ৫৮৯ জন আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা তিনটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। অন্যদিকে ধানম-ির আবাসিক এলাকায় আবাসিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করায় সেখানকার তিনটি রেস্টুরেন্টের চার মালিকের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। চট্টগ্রাম মহানগরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল কুদ্দুস কসাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছে। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা তিনটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপীল বিভাগ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপীল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীল খারিজ করে দেন। এ সময় আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও জাহিদ সরোয়ার কাজল। রাষ্ট্রপক্ষ বিলম্বে আপীল করার যথাযথ যুক্তি দেখাতে না পারায় গত ১৩ এপ্রিল বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চ সরকারের তিন আপীল খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের এ খারিজাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ওই আপীলও খারিজ করে দেয় আপীল বিভাগ। নিম্ন আদালত ১৫২ জনকে মৃত্যুদ-, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- এবং ২৭৭ জনকে খালাস দেন। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫ জন মারা গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। এছাড়া ১৩৭ জন ফাঁসির আসামী আপীল করে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সকলেই আপীল করলেও রাষ্ট্রপক্ষ শুরুতে কোন আপীল করেননি। কিন্তু বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে তিনটি আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে (পিলখানা) সংঘটিত ট্রাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এরপর ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর রাজধানীর লালবাগের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচার করা হয়। বিচার শেষে ২০১৪ সালের ৫ নবেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। মামলার আসামি ছিল ৮৪৬ জন। এ মামলায় উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদ-, বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু (কারাগারে মৃত্যু), স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে আরও ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ২৭৭ জন। আদালত অবমাননার রুল ধানম-ির আবাসিক এলাকায় আবাসিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করায় সেখানকার তিনটি রেস্টুরেন্টের চার মালিকের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। ক্যাফে সোই থ্রি’, ‘বিটার সুইট’ ও ‘ফর্ক নাইফ’ নামক এসব রেস্টুরেন্টের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ রুল জারি ররা হয়। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে এ সংক্রান্ত এক আবেদনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আদালতের আদেশের পর এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, ধানম-ির আবাসিক এলাকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে সেখানে বসবাসকারীদের জীবনযাত্রা বিঘিœত হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১২ সালে হাইকোর্ট এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ধানম-ির আবাসিক এলাকা থেকে সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের ওই আদেশ অমান্য করা ব্যবসায় পরিচালনা করা এমনকি গত ১ জানুয়ারি তারিখে আইনি নোটিস পাওয়ার পরও প্রতিষ্ঠান সরানোর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাই বিষয়টি সোমবার আদালতে শুনানি শেষে আদালত গতকাল মঙ্গলবার এ রুল দেন। কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ চট্টগ্রাম মহানগরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল কুদ্দুস কসাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির বলেন, চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল কুদ্দুস একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় আগাম জামিন নিতে আসেন। কিন্তু আদালত জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে হত্যাচেষ্টা মামলার আদালতের নির্দেশে এজলাসে আটকে থাকতে হয়েছিল বাসেত মজুমদারকে; ক্ষমা চেয়ে সেই আসামিকে পুনরায় ফেরত এনে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর ছাড়া পান জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী।
×