ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলে ফলে ভরা গাছ বনজ ফলদ ঔষধি বৃক্ষের চারা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৭ জুন ২০১৭

ফুলে ফলে ভরা গাছ বনজ ফলদ ঔষধি বৃক্ষের চারা

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ দুপুরের রোদ। ভ্যাপসা গরম। যানজট। অসহনীয় অবস্থা। এরপরও বৃক্ষমেলায় প্রবেশ করতেই মন শান্ত হয়ে গেল। ফুলভর্তি গাছ। ফলভর্তি গাছ। আর যে গাছের ফুল কিংবা ফল নেই সেটি পাতার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে। চেনা সব গাছ আছে। অচেনা অল্প চেনা গাছও বাদ যায়নি। ফলদ বনজ ঔষধি বৃক্ষের বিপুল সমারোহ এখন বাণিজ্যমেলার মাঠে। এখানে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে বন অধিদফতর। গত রবিবার মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রায় একশ’র মতো স্টল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নার্সারি মালিকরা স্টল সাজিয়েছেন। অংশ নিয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এভাবে খোলা জায়গাটি সবুজ উদ্যানে পরিণত হয়েছে। শহরের নিসর্গপ্রেমীরা প্রিয় বৃক্ষের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন। গাছ দেখা জাত চেনার পাশাপাশি চলছে কেনাকাটা। অনেকেই ঝুড়িভর্তি করে চারা কিনে বাড়ি ফিরছেন। তৃতীয় দিন মঙ্গলবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি জমে উঠেছে। প্রতিটি স্টল গাছ এবং গাছের চারায় পরিপূর্ণ। খুব নজর কাড়ে ফলের গাছ। ছোট ছোট গাছ। অথচ ফলের ভারে নুয়ে পড়ছে। আমের মৌসুম এখন। কত জাতের আম যে ধরে আছে গাছে! পাকা আম। এখনই খাওয়ার উপযোগী। কিন্তু স্টল মালিকদের কেউ খাচ্ছেন না। ক্রেতাকে দেখাচ্ছেন। এই দেখা এবং দেখানোটা আনন্দের বৈকি! নরসিংদীর খাদিজা রাবেয়া নার্সারির স্টলের দায়িত্বে থাকা মুক্তার হোসেন জানালেন, দেশীয় সাধারণ জাতের আম তাদের আছে। একটি আমের নাম নাকি থ্রি টেস্ট। মানে, একই আমের তিন স্বাদ! এটি নাকি স্পেশাল। ফলসহ গাছের দাম ৩ হাজার টাকা। বারো মাস ধরে এমন আমের চারাও দেখা গেল। একইভাবে ধরে আছে পেয়ারা, ডালিম, জামরুল, জাম্বুরা, করমচা। সবই ওই অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমি সব ফুলও ফুটে আছে টবে। এখন বেলি ফোটার সময়। দারুণ সুন্দর ফুটে আছে। কাছে গেলেই মিষ্টি ঘ্রাণ। এ্যারোমেটিক জুঁই খুব দেখা গেল। নাকে এসে লাগছিল ঘ্রাণ। মেলায় আছে দৃষ্টিনন্দন অর্কিড। একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না। ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশনের স্টলের পুরোটা অর্কিড দিয়ে সাজানো। স্টলের দায়িত্বে থাকা হুমায়ুন রশিদ জানালেন, অর্কিডের সৌন্দর্যটা মুগ্ধ করে রাখে। চাহিদাও বেশি। এ কারণেই তারা অর্কিড করেন। স্টলটিতে ফুল ফুটে থাকা অর্কিড যেমন আছে, তেমনি আছে চারা। ক্যাকটাসও বেশ আকর্ষণীয়। বিভিন্ন স্টলে বাহারি ক্যাকটাসের সংগ্রহ। রাশেদ নার্সারির স্টলের সামনে গিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। অবাক চোখে দেখছেন বিশালাকার ক্যাকটাস। ষাট বছর বয়সী ক্যাকটাসের দাম হাঁকা হচ্ছে ৩ লাখ টাকা! ছোট ক্যাকটাসও আছে বিভিন্ন স্টলে। লাল হলুদ কমলা রঙের ক্যাকটাস স্টলের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বনসাইও দেখা গেল প্রচুর। লিভিং আর্ট নামের একটি স্টলে কে এম সবুজের বনসাই। শিল্পী বললেন, বনসাই আসলে শিল্পকর্ম। অন্যরকম প্রেম দিয়ে গড়ে নিতে হয়। সাধনা ধৈর্য ছাড়া হয় না। রুচিশীল মানুষ বনসাই খুব পছন্দ করেন বলে জানান তিনি। ঔষধি বৃক্ষের খুঁজেও অনেকে মেলায় আসেন। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও বলধা গার্ডেনের স্টলের সামনে তেমন একটি বাগান। এখানে ছোট ছোট চারা। দেখে তেমন চেনা যায় না কিছু। তবে চারার গায়ে নাম লেখা। কত কত নাম! ঘৃতকুমারী, শ্বেত চন্দন, বিশকাঠালী, স্বর্পগন্ধা, বেড়েলা, তিতি বেগুন, চিনিগুড়া, অশ্বগন্ধা, গুলঞ্চ, শতমূলী, অনন্তমূল, পাথরচুনা, তুড়িচ-ল, উদাল, ময়নাকাটা, কর্পূর, ভাট, ইস্টভিয়া; সবই কোন না কোন রোগের পথ্য। এসবের বাইরে মেলায় আছে বনজ বৃক্ষের চারা। যার যা দরকার, নিয়ে নিচ্ছেন।
×