ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা ভাগ্যবান ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৭ জুন ২০১৭

আমরা ভাগ্যবান ॥ মাশরাফি

এত বাজে ব্যাটিং করেও হার হয়নি। এরচেয়ে ভাল ভাগ্য আর কি হতে পারে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাই বলেছেনও, ‘আমরা ভাগ্যবান।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ এক পয়েন্ট পেয়েছে। সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ আছে। টুর্নামেন্টেও টিকে আছে। অসিদের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে মাশরাফি এমনটি বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার যে পেস আক্রমণ, সেখানেই মূলত পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। মাশরাফি যেন সেই ইঙ্গিতই দিলেন, ‘আমরা খেলেছি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ২০১১ সালে সর্বশেষ খেলেছি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া আসলে ভাল খেলেছে। বোলিংটা তো দুর্দান্ত করেছে। তামিম ছাড়া কেউ ভাল খেলেনি। আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ পুরোই ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের অতিরিক্ত পেস আছে। এটাই অস্ট্রেলিয়াকে অন্য দল থেকে আলাদা করে রেখেছে।’ সেমিফাইনালে ওঠার আশা আছে মাশরাফির। পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে চান, ‘কেউ জানে না। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক পয়েন্ট পেয়েছি। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি। এবারও সেই রকম সুযোগই মিলেছে। সেইসময় এক পয়েন্ট আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। আমরা নিউজিল্যান্ডকে হারাতে চাই। একটা ফল চাই। জানি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি কঠিন হবে। তবে আমরা যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভাল খেলতে পারি তাহলে সেমিফাইনালে জেতেও পারি।’ আবহাওয়া নিয়ে জানান, ‘অস্ট্রেলিয়া আমাদের চেয়ে অনেক দূরে ছিল। এগিয়ে ছিল। এটা মানতেই হবে। শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে ছিল। আবহাওয়ার ওপর কোন হাত নেই। এখন শেষ ম্যাচে যদি আমরা নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারি তাহলে পরের ধাপে যেতেও পারি।’ যখন ১৬ ওভার পর খেলা বন্ধ হলো তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও কি চিন্তায় ছিলেন না। আর ৪ ওভার কোনভাবে খেলা হলেই যে হেরে যাবে বাংলাদেশ। মাশরাফি জানান, ‘সত্যি কথা বলতে কি ১৬ ওভার যখন হয়ে যায়, তখন মনে হচ্ছিল আরও এক দুই ওভার হবে কিনা। বা আম্পায়াররা চালিয়ে নিয়ে যাবে কিনা। পানি বিরতি যখন পাই তখনও জানি না খেলা বন্ধ করে দিচ্ছে। তারপর যখন খেলা বন্ধ হয় তখনও জানি না আবহাওয়া বার্তা কি আছে। তবে আমরা জানতাম সাড়ে ছয়টার দিকে বৃষ্টি হতে পারে। শেষ পর্যন্ত খেলাই হলো না। আমরা এও চিন্তা করছিলাম যে খেলাটা যতদূর চালিয়ে যাওয়া যায়।’ ভাগ্যবান কিনা? এমন প্রশ্ন উঠতেই মাশরাফি জানান, ‘অস্ট্রেলিয়ার দুর্ভাগ্য। আমরা ভাগ্যবান। এই ম্যাচ থেকে একটা পয়েন্ট পেয়েছি। আমরা যদি এখন এ পয়েন্টটাকে ব্যবহার করতে পারি সামনের ম্যাচে জিততে পারি। তবুও জানি না জিতলে যাব কিনা। তবে এই পয়েন্টটা আমাদের জন্য অনেক লাকি পয়েন্ট। ম্যাচটা পুরোটা অস্ট্রেলিয়ার দিকেই ছিল। হয়ত বা আর ৪ ওভার খেলা হলে আর ১ রান না করলেও অস্ট্রেলিয়া জয় পেয়ে যেত।’ আবহাওয়ার বার্তায় বৃষ্টি থাকার পরও কেন ব্যাটিং নেয়া হলো? সেই প্রশ্নও উঠল। মাশরাফি বলেন, ‘এরকম অনেক ম্যাচ গিয়েছে, আবহাওয়া বার্তায় আছে বৃষ্টি। একরকম দেখা গেছে। হয়েছে আরেক। ভাল উইকেটে বৃষ্টি আছে কি নেই, এরকম নির্ভর করা যায় না। অস্ট্রেলিয়াও ব্যাটিংই নিত। আগের দুইদিন যদি বৃষ্টি হত তাহলে ভিন্ন বিষয় ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল আগের ম্যাচের মতো হয়ত ৩০০ রান করা লাগবে না। ২৭০ বা ২৮০ রান করলেই ভাল খেলা হতে পারে। আমরা ওই পথেই ছিলাম। সাকিবের আউটটা না হলে তামিমের সাথে থাকলে হয়তবা ২৫০-২৬০ রান হত। ব্যাটিং আগে করাটাই ভাল সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।’ বৃষ্টি কী আনন্দ বয়ে আনল? মাশরাফি বলেছেন, ‘অস্বীকার করার কোন সুযোগই নেই যে অস্ট্রেলিয়া আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। আর ৪টা ওভার হলে অস্ট্রেলিয়া ২টা পয়েন্ট নিয়ে যেত। একটা পয়েন্ট পেয়ে আমাদেরও খুব ভাল লাগছে। আমাদের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। ম্যাচের শুরু থেকে হলে হয়ত কোন দলই চাইত না খেলা না হোক। এ পজিশন থেকে একটা দলই চেয়েছে খেলা হোক। আমরা কোথাও ছিলাম না। আমরা এক পয়েন্ট পেয়ে খুশি।’ তামিম দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৫ রান করেছেন। তামিমকে নিয়ে মাশরাফি জানান, ‘তামিমের ব্যাটিংটা নিয়ে বলব, বিশ্বের সেরা দুইটা দলের বিপক্ষে ও যেভাবে ব্যাটিং করেছে সে দেখিয়েছে কি ফর্মে আছে। শেষ ৮-৯টা ইনিংস দেখলেও বোঝা যাবে, পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছে, শ্রীলঙ্কায়ও করেছে। আবার এখানে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করার একেবারে সামনেই ছিল। ওয়ার্ল্ড ক্লাস ব্যাটসম্যানরা ফর্মে থাকলে যেভাবে খেলে ও ঠিক সেভাবেই খেলছে। ওর অনুভূতিও অন্যান্য ব্যাটসম্যানের চাইতে আলাদা। তামিম এক্সট্রা অর্ডিনারি ফর্মে আছে। আমাদের দলের সেরা ব্যাটসম্যানও সে।’ একাদশ নির্বাচন নিয়েও কথা ওঠে। মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে ঠিক একাদশই ছিল। কোন চয়েজই ছিল না। মিরাজকে খেলাতেই হত। একজন বোলার থাকলে আগের ম্যাচটাতে ভাল হত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয়ত ২৬০-২৭০ করতাম তাহলে মিরাজ অনেক কাজে দিত। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু মাঝখানে ভাল করতে পারিনি।’ বাংলাদেশ ১৬ ওভারের মধ্যে ১৫ ওভারই পেসার দিয়ে করেছে। সময় অতিক্রম করার চেষ্টাই করেছে। মাশরাফিও তাই বোঝান, ‘প্রথমত হচ্ছে সাব্বির সর্বশেষ আট নয়টা ইনিংস ৩ নম্বরে খেলেছে। ইমরুলের গড়টা অনেক ভাল। এই ধরনের উইকেটে আমরা চাচ্ছি না যে উইকেট তাড়াতাড়ি পড়ুক। রুম্মন শট খেলতে পারে। উইকেট ধরে রাখার চেষ্টা করছি। পাঁচজন বোলার নিয়ে খেলতে হবে। ১৬ ওভারের ১৫ ওভারই পেসার দিয়ে করানো হয়েছে। চিন্তাই ছিল ম্যাচে পেছনে চলে গিয়েছি। কামব্যাক করার চেষ্টা করতে হবে। আমি তাই একটু দূরে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা থেকেই পেসারদের দিয়ে বেশি বল করিয়েছি।’
×