ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ মন কাড়ছে সবার

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৭ জুন ২০১৭

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ মন কাড়ছে সবার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত এতদিন সত্যি অবহেলিত ছিল। রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থেকেও উন্নয়নে নজর দেয়নি অতীতের রাজনৈতিকদলগুলো। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে তারা শুধু নজর দিয়েছিল সমুদ্র লাগোয়া সরকারী সম্পদ (গণপূর্তের প্লট) দলীয় লোকজন ছাড়া যেন অন্য কেউ না পায়। কক্সবাজারে অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন ছিল না তেমনি ছিল না ভালমানের যোগাযোগ ব্যবস্থাও। ওই সময় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার রাস্তার যে বেহাল দশা ছিল, সেটা চিন্তা করলেই ভ্রমণের আনন্দ অনেকটা ম্লান হয়ে যেত ভ্রমণপিপাসুদের। বর্তমান সরকারের ঐকান্তিকতায় একদিকে সবুজঘেরা পাহাড়, অন্যদিকে সমুদ্রের ঢেউ পর্যটকদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সমুদ্রের তীর আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তৈরি ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ (মেরিন ড্রাইভ) নিঃসন্দেহে পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ মে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের পর কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। এ মেরিন ড্রাইভ দেশের পর্যটন শিল্পে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এক হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়কের দুপাশে রয়েছে ওয়াকওয়ে, পর্যটকদের সুবিধার্থে রয়েছে সড়কজুড়ে ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, শেড, গাড়ি পার্কিং ও মহিলা পর্যটকদের চেঞ্জিং রুম। ৮০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তিনটি বড় আরসিসি সেতু, ৪২টি কালভার্ট, ৩ হাজার মিটার সসার ড্রেন ও ৫০ হাজার মিটার সিসি ব্লক ও জিও টেক্সটাইল রয়েছে। সত্যি সকলের মন কাড়ছে টেকনাফ-কক্সবাজার স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার সাগরের নীল জলরাশি আর সুউচ্চ সবুজ পাহাড়ের ছায়াঘেরা বিশাল এ মেরিন ড্রাইভ সড়ক যেন প্রকৃতির রানী। ১৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কঠোর ও নিরলস পরিশ্রমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। পর্যটন শহরের কলাতলী থেকে টেকনাফ সাবরাংয়ে প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত প্রায় ৮০কি. মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬মে উদ্বোধনের পর বলতে গেলে বিশ্ব পর্যটনের দুয়ার খুলেছে। রমজান মাসেও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভ্রমণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঈদের পর মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে বলে ধারণা হোটেল-মোটেল জোন এলাকার ব্যবসায়ীদের। মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের পর ওইদিন সুধী সমাবেশে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত তীরবর্তী শহর কক্সবাজারকে নিয়ে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছেন শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, তার মধ্যে এ স্বপ্ন সৃষ্টি করেছিলেন তার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৬২ এবং ১৯৬৪ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ করতে এসেছিলাম। তখন আমার বাবা সৌন্দর্যময় এ সমুদ্রসৈকতকে নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা বলতেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। তবে এরপরও সমুদ্রসৈকতকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে আমার ভেতরে স্বপ্ন তৈরি হয়। এ স্বপ্ন আমি বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ও জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আ জ ম মঈন উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নেয়ার নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজে গ্রহণ করায় এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তারা বলেন, জেলাবাসীর চির আরাধ্য উন্নয়নের ধাবমান মহারথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং চালিকার দায়িত্ব নেয়ায় কক্সবাজারবাসী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। স্থানীয়রা বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক এখন শুধু কক্সবাজার বা গোটা দেশের নয়, বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় ও নান্দনিক একটি সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কটি উখিয়া- টেকনাফের মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে দেবে। পিছিয়ে থাকা এই জনপদ সমৃদ্ধ হবে অর্থনৈতিকভাবে। পুরো দেশের পর্যটনের বিকাশের ক্ষেত্রে এই সড়ক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
×