ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তোফায়েল আহমেদ

ছয়-দফা ॥ শহীদের রক্তে লেখা

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৭ জুন ২০১৭

ছয়-দফা ॥ শহীদের রক্তে লেখা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ জুনের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৬৬-এর এই দিনে মনু মিয়া, মুজিবুল্লাহসহ অসংখ্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছয় দফা। এই ছয় দফার পথ পেরিয়ে পরবর্তীকালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিচক্ষণ নেতা ছিলেন। তাঁর হৃদয়ের গভীরে সততই প্রবহমান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার বাইরে তাঁর অন্য কোন চিন্তা ছিল না। জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গেছেন। তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা। এজন্য তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে জনগণের আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে। কেউ কারও ধর্ম পালনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এই অভিপ্রায় থেকেই তিনি জাতির উদ্দেশে ছয় দফা কর্মসূচী প্রদান করেছিলেন এবং পরবর্তীতে যা এক দফা তথা স্বাধীনতায় উন্নীত হয়। বাংলার গণমানুষ ’৬৬-এর ৭ জুন স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী হরতাল পালন করেছিল। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে সংখ্যাগুরু বাঙালী জাতিকে গোলামীর শৃঙ্খলে চিরস্থায়ীভাবে শৃঙ্খলিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। এর বিপরীতে, বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ’৬৬-এর ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলসমূহের এক কনভেনশনে বাংলার গণমানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি সংবলিত বাঙালীর ‘ম্যাগনাকার্টা’ খ্যাত ঐতিহাসিক ছয়-দফা উত্থাপন করে তা বিষয়সূচীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু সভার সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ছয়-দফা দাবি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ও ২০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে ছয়-দফা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেন। অতঃপর ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ছয়-দফা দলীয় কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ছয়-দফা প্রচার ও প্রকাশের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট উপ-কমিটি গঠন করা হয় এবং তাঁরই নামে পুস্তিকাটি মুদ্রিত হয়। বাংলার মানুষের মুক্তিসনদ ছয়-দফা ঘোষণার পর জনমত সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু তাঁর সফর সঙ্গীসহ ’৬৬-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় ছয়-দফাকে ‘নূতন দিগন্তের নূতন মুক্তিসনদ’ হিসেবে উল্লেখ করে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘একদিন সমগ্র পাক-ভারতের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসনব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলের বীর সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। আমি চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামবাসীরা চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন।’ চট্টগ্রামের জনসভার পর দলের আসন্ন কাউন্সিল সামনে রেখে ছয়-দফার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে তিনি একের পর এক জনসভা করেন। এরই অংশ হিসেবে ২৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর মাইজদি, ওইদিনই বেগমগঞ্জ, ১০ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ১১ মার্চ ময়মনসিংহ সদর ও ১৪ মার্চ সিলেটে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনতার দরবারে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। একই বছরের মার্চের ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখ ছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। এদিন কাউন্সিল সভায় পুস্তিকাটি বিলি করা হয়। দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গীত হয়। বাঙালীর বাঁচার দাবি ছয়-দফাকে উপলক্ষ করে ’৬৬-এর মার্চে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশনটি ছিল সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেদিনের সেই কাউন্সিল সভায় আগত ১৪৪৩ জন কাউন্সিলর বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে। ছয়-দফার ভিত্তিতে সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্রের একটি খসড়াও অনুমোদন করে। ছয়-দফা কর্মসূচী প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে ছয়-দফার ভিত্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্ব নির্বাচনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তা পরবর্তীকালে ছয়-দফার চূড়ান্ত পরিণতি এক দফা তথা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ইঙ্গিতবাহী ছিল। ছয়-দফা কর্মসূচী দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিশেষ করে আমাদের মতো অপেক্ষাকৃত তরুণ ছাত্রলীগ নেতৃত্বের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ছয়-দফা এতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, বাংলার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই এই পুস্তিকা সযতেœ রক্ষিত হয়েছিল। ছয়-দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ বস্তুত, ছয়- দফা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর। কাউন্সিল অধিবেশনের শেষদিন অর্থাৎ ২০ মার্চ চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভায় দলীয় নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকারের এই বাণী লয়ে আপনারা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানিয়ে দিন, দেশের জন্য, দশের জন্য, অনাগতকালে ভাবী বংশধরদের জন্য সবকিছু জেনে-শুনেই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা এবার সর্বস্ব পণ করে নিয়মতান্ত্রিক পথে ছয় দফার ভিত্তিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য এগিয়ে আসছে।’ আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল অধিবেশনটি ছিল বাঙালীর ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তন। যা ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন ও ’৭১-এর মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল। কাউন্সিল সভার সমাপনী জনসভায় বঙ্গবন্ধু মুজিব বলেছিলেন, ‘ছয়-দফার প্রশ্নে কোন আপোস নেই। রাজনীতিতেও কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ নেতার দল নয়-এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রতিষ্ঠান। শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই ছয়- দফা আদায় করতে হবে। কোন হুমকিই ছয়-দফা আন্দোলনকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। ছয়-দফা হচ্ছে বাঙালীর মুক্তি সনদ।’ স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের-‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’-উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘এই আন্দোলনে রাজপথে যদি আমাদের একলা চলতে হয় চলব। ভবিষ্যত ইতিহাস প্রমাণ করবে বাঙালীর মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।’ বঙ্গবন্ধু জানতেন ছয়-দফাই কেবল বাঙালীর স্বাধিকার তথা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে অখ- পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ পাঞ্জাবীরা ছয়-দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংখ্যাগুরু বাঙালীর রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণ ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে-যা পরিণামে স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। সফলভাবে সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের পর বঙ্গবন্ধু সারাদেশ চষে বেড়ান। ২৬ মার্চ সন্দ্বীপ এবং ২৭ মার্চ সাতকানিয়া বিশাল জনসভায় ভাষণদান করেন। এরপর উত্তরাঞ্চল সফরে যান ’৬৬-এর ৭ এপ্রিল। ঐদিন পাবনা ও নগরবাড়ির জনসমাবেশে তিনি বক্তৃতা করেন। অতঃপর একই মাসের ৮ তারিখ বগুড়া, ৯ তারিখ রংপুর, ১০ তারিখ দিনাজপুর, ১১ তারিখ রাজশাহী, ১৪ তারিখ ফরিদপুর, ১৫ তারিখ কুষ্টিয়া, ১৬ তারিখ যশোর এবং ১৭ তারিখ খুলনায় বিশাল সব জনসভায় ছয় দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ বক্তৃতা করেন। এভাবে সারাদেশে ৩৫ দিনে মোট ৩২টি জনসভায় তিনি বক্তৃতা করেন। বিপুল সংখ্যক জনতার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত লাগাতার জনসভায় বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় ছয় দফার সপক্ষে জনমত প্রবল হয়ে ওঠে। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ওপর নেমে আসে স্বৈরশাসক আইয়ুবের নির্মম গ্রেফতার-নির্যাতন। প্রত্যেক জেলায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রদত্ত বক্তৃতার প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধুকে প্রত্যেক জেলা থেকে জারিকৃত ওয়ারেন্ট বলে গ্রেফতার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এপ্রিলের ১৭ তারিখ রাত ৪টায় খুলনায় এক জনসভায় ভাষণদান শেষে ঢাকা ফেরার পথে রমনা থানার জারিকৃত ওয়ারেন্ট অনুযায়ী পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৪৭ (৫) ধারা বলে পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। যশোর মহকুমা হাকিমের এজলাস হতে তিনি জামিন পান। এরপর সেদিনই রাত ৯টায় সিলেটে গ্রেফতার, পুনরায় জামিনের আবেদন, ২৩ তারিখ জামিন লাভ। ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহে গ্রেফতার, ২৫ এপ্রিল জামিন। ছয়-দফা প্রচারকালে তিন মাসে বঙ্গবন্ধুকে সর্বমোট ৮ বার গ্রেফতার করা হয়। এভাবেই আইয়ুবের দমননীতি অব্যাহত থাকে। একই বছরের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’ স্মরণে শ্রমিক জনতার এক বিরাট সমাবেশে শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুকে বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে এবং পাটের মালায় ভূষিত করে। ভাষণদান শেষে রাত ১টায় তিনি যখন বাসায় ফেরেন তখন পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৩২ (১) ‘ক’ ধারা বলে তাঁকেসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। ছয়-দফা দেয়ার অপরাধে বঙ্গবন্ধুকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এরপর দেশরক্ষা আইনের আওতায় চলতে থাকে আওয়ামী লীগের ওপর অব্যাহত গ্রেফতার-নির্যাতন। সামরিক সরকারের এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে সমগ্র প্রদেশে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। প্রতিবাদ দিবসের জনসভায় ছয়-দফার প্রতি গণমানুষের বিপুল সমর্থন প্রকাশ পায়। কয়েক সহস্র শ্রমিক এদিনে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে এবং পল্টনে অনুষ্ঠিত জনসভায় উপস্থিত হয়ে সরকারের দমন নীতির তীব্র প্রতিবাদ করে। এর পরপরই দলের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করা হলে সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০ মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ৭ জুন হরতাল আহ্বান করা হয়। ৭ জুনের হরতালে সমগ্র পূর্ব বাংলা যেন অগ্নিগর্ভ। বিক্ষুব্ধ মানুষ সেদিন স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রলীগের সার্বক্ষণিক কর্মী, ইকবাল হল (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি। শেখ ফজলুল হক মণি, আমাদের প্রিয় মণি ভাইসহ সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, আমীর হোসেন আমু, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, নূরে আলম সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে-আমরা সেদিন হরতাল কর্মসূচী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার স্মৃতিপটে এখনও ভাস্বর হয়ে আছে সেদিনটি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মণি ভাই এসেছেন হরতালের পক্ষে প্রচার কাজ চালানোর জন্য। তিনি তখন ছাত্র নন। ড. ওদুদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ছিলেন। তিনি মণি ভাইকে বললেন, ‘মণি, তুমি এখন ছাত্র নও। তুমি ক্যাম্পাসে অবস্থান কর না, চলে যাও। তুমি যদি না যাও তবে আমার চাকরি যাবে।’ মণি ভাই স্যারের কথায় সবিনয়ে সম্মতি জানিয়ে আমাদেরকে হরতাল কর্মসূচী যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সেদিনের হরতাল কর্মসূচীতে ধর্মঘটী ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। ফলে তেজগাঁয় শ্রমিক মনু মিয়া, মুজিবুল্লাহসহ এগারো জন শহীদ হন এবং প্রায় আট শ’ লোককে গ্রেফতার করা হয়। তেজগাঁ শিল্পাঞ্চলে হরতাল সফল করার দায়িত্বে ছিলেন ছাত্রনেতা খালেদ মোহাম্মদ আলী ও নূরে আলম সিদ্দিকী। তাঁরা সেখানে বক্তৃতা করেন। প্রকৃতপক্ষে সাতই জুন ছিল স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথের আরম্ভস্থল তথা যাত্রাবিন্দু। আর আমরা যারা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, আমাদের রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তিও স্থাপিত হয়েছিল এদিনটিতেই। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬২-এর ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৭ জুন ছয়-দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর ১৭ থেকে ২৪ জানুয়ারির গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থান। ৯ ফেব্রুয়ারি ১১-দফা বাস্তবায়ন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে শপথ দিবস পালন। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি লাগাতার সংগ্রাম শেষে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রদান। অতঃপর ২২ ফেব্রুয়ারি সকল রাজবন্দীর মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি লাভ। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মুক্ত মানব শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান। পঞ্চাশের দশক থেকে বাঙালীর জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে গড়ে তোলা সকল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রলীগ। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক তথা নিয়মতান্ত্রিক আচরণ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জয় করে নিয়েছিল বাংলার মানুষের হৃদয় আর সৃষ্টি করেছিল ইতিহাস। অতীতে আমাদের সময়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতি বছর ২১ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। তা না হলে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কাছে নেতৃত্ব তুলে দিতে হতো। এটাই ছিল বিধান এবং গঠনতান্ত্রিক বিধি-বিধানের অন্যথা হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। বিধান মোতাবেক ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং আসম আবদুর রব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এক বছর পরে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২১ মার্চের মধ্যে সম্মেলন করে নূরে আলম সিদ্দিকী এবং শাজাহান সিরাজের কাছে নেতৃত্বের দায়িত্বভার অর্পণ করে আমাদের কমিটি বিদায় নেয় এবং ২২ মার্চ হল ত্যাগ করে গ্রীন রোডে একটি বাসা ভাড়া করে আমি এবং রাজ্জাক ভাই বসবাস শুরু করি। আজ অতীতের সেই সোনালি দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে তাকাই স্মৃতির পাতায় দেখি, সেদিনের ছাত্রলীগ ছিল বাংলার গণমানুষের অধিকার আদায় তথা মুজিবাদর্শ প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড। মূলত বঙ্গবন্ধু মুজিবের নির্দেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্বই সেদিন সারাদেশে ৭ জুনের কর্মসূচী সফলভাবে পালন করে স্বাধিকারের পথে এক অনন্য নজির স্থাপন করে। আর বাংলার মেহনতী মানুষ আত্মত্যাগের অপার মহিমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীসহ সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রদত্ত ছয়-দফাই হচ্ছে বাঙালীর জাতীয় মুক্তির একমাত্র পথ। ছয়-দফাকে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু ছয়-দফার প্রতি বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় স্থির-প্রতিজ্ঞাবোধ তাঁকে জনমনে জনগণমন অধিনায়কের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। ’৬৬-এর ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েও ছয়-দফার আন্দোলনকে যখন রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে চিরতরে তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলা দেন। ছয়-দফা দাবি আদায়ে এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে বাংলার সর্বস্তরের মানুষসহ আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তারা ’৬৯-এর জানুয়ারির ৪ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছয়-দফাকে দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসমেত এগারো দফায় অন্তর্ভুক্ত করে সারা বাংলার গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে-কলে-কারখানায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। ফলে এগারো দফা আন্দোলনের পক্ষে সারাদেশে যে গণজোয়ার তৈরি হয় তাতে দেশে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। এমতাবস্থায় শাসকশ্রেণী আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে আমাদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করে। তাদের এই অপপ্রয়াসের সমুচিত জবাব দিতে ’৬৯-এর ৯ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শপথ দিবসের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু মুজিবের নির্দেশে বলেছিলাম, ‘পূর্ব বাংলার মানুষ কোনদিন বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় দেয়নি এবং বিচ্ছিন্নতায় বিশ্বাসীও নয়। কারণ তারা সংখ্যায় শতকরা ৫৬ জন। যদি কারও পূর্ব বাংলার সঙ্গে থাকতে আপত্তি থাকে তবে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।’ নেতার এই নির্দেশ আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মেনে চলেছি। পাকিস্তানীরা গণহত্যা চালানোর আগ পর্যন্ত কোনরকম উগ্রতাকে অতি বিপ্লবীপনাকে আমরা প্রশ্রয় দেইনি। নিয়মতন্ত্রের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগে আমাদের কখনোই অভিযুক্ত করা যায়নি। আমরা আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ন্যায্যতা প্রমাণ করে মুক্তিসংগ্রামী হিসেবেই এগিয়ে গেছি। আর এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে ৭ জুনের কর্মসূচী পালনকালে শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্মদান। ৭ জুনের হরতাল সম্পর্কে শ্রদ্ধাভাজন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া দৈনিক ইত্তেফাকে লেখেন, ‘যদিও প্রতিক্রিয়াশীলরা অতীতের মতই বিধি-নিষেধ আরোপ ব্যবস্থাদির পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে এবং মাত্র একটিবারের জন্য হলেও ইতিহাসের পুরনো পাতার প্রতি দৃক্পাত মাত্র না করেই ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে তবু এবার জনগণ তাদের পূর্ণ অধিকার আদায়ে সংকল্পবদ্ধ।’ ছয় দফার পক্ষে ৭ জুনের হরতাল এতটাই সর্বব্যাপী ছিল যে, এ সম্পর্কে কোন রকম প্রতিবেদন মুদ্রণ ও প্রকাশের ওপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও মানিক মিয়া তাঁর কলামে লেখেন ‘ছয় দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গৃহীত নিষ্ঠুর ব্যবস্থাদির কারণে মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে একমাত্র সান্ত¡নার বিষয় হলো এই যে, জনসাধারণ ছয় দফা আন্দোলন তথা আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে তাদের নিজেদের আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছে।’ ছয় দফার পক্ষে, ৭ জুনের সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচীর পক্ষে জনমত তৈরিতে ইত্তেফাকের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ’৬৬-এর ১৬ জুন পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধির ৩২ (১) ধারার আওতায় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেফতার এবং দ্য নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াফত করে। পরবর্তীতে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক এবং বাজেয়াফতকৃত নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসটি ফেরত প্রদানে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়েছিল। মূলত ছয় দফা দাবি আদায় ও পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন থেকে মুক্তির জন্যই ৭ জুন আমরা হরতাল পালন করেছিলাম, সংগ্রাম করেছিলাম। ৭ জুনে যে সার্বভৌম পার্লামেন্টের দাবিতে আমরা ছয় দফার পক্ষে সংগ্রাম করেছিলাম সেই কর্মসূচীর ফলই হচ্ছে আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। ৭ জুন ছিল এর সূচনা বিন্দু। আজ ভাবতে কত ভাল লাগে যে, আমাদের জাতীয় জীবনে শত শহীদের রক্তে লেখা এদিনটি চেতনায় জাতীয় মুক্তির যে অগ্নিশিখার জন্ম দিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ’৭০-এর ঐতিহাসিক এই ৭ জুনে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে এবং তাঁরই নির্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। আমি হই আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী। আওয়ামী লীগে যোগদানের পর বঙ্গবন্ধু আমাকে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে মনোনয়ন দেন এবং মাত্র সাতাশ বছর এক মাস পনেরো দিন বয়সে আমি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। যা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। এরপর ’৭১-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও নির্দেশে মুজিব বাহিনীর চার প্রধানের অন্যতম হয়ে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৪ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় আমাকে তাঁর রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেন। আজ ৭ জুনে অতীতের অনেক স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর স্নেহে আমার জীবন ধন্য। ৭ জুনের চেতনাবহ এই দিনটি আমার জীবনে অম্লান হয়ে আছে। ৭ জুনে যে সকল শহীদ ভাইয়েরা তাঁদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে, বাংলার মানুষের মুক্তির পথকে প্রশস্ত করে গিয়েছেন, আজ তাঁদেরকে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। তাঁদের অমর প্রাণের বিনিময়ে সংগ্রাম পরম্পরায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম হয়েছে। শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জাতির পিতার সংগ্রামী চেতনার ভিত্তিতে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমরা উন্নয়নের নবদিগন্তের সূচনা করেছি। প্রকৃতপক্ষে ঐতিহাসিক ৭ জুন ছিল আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনার প্রারম্ভ বিন্দু। এই দিনটিতে ৭ জুনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কর্তব্য বলে মনে করি। লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, বাণিজ্যমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার [email protected]
×