ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৬ জুন ২০১৭

 বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান

পল গার্ডনার এ্যালেন, একজন মার্কিন উদ্যোক্তা, পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পল এ্যালেন যে কারণে প্রযুক্তির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন, তা হলো তিনি মাইক্রোসফটের অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা। বিল গেটসের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করতে তার ভূমিকাও অনস্বীকার্য। পল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৩ সালের ২১ জানুয়ারি। সিয়াটলের লেকসাইড স্কুলে পল পড়ালেখা করেছেন। ওই স্কুলেই পড়তেন বিল গেটস। গেটস পলের চেয়ে বয়সে তিন বছরের ছোট হলেও কম্পিউটারে আগ্রহ দুই জনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি করে। লেকসাইড স্কুলের টেলিটাইপ টার্মিনাল ব্যবহার করে এই দুজন হাত পাকান কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে। স্যাট পরীক্ষায় ‘পারফেক্ট ১৬০০’ স্কোর করে পল ভর্তি হন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। তবে দুই বছর পড়ার পরেই তিনি কাজ শুরু করেন হানিওয়েল নামক একটি প্রতিষ্ঠানে। প্রোগ্রামার হিসেবেই কর্মজীবন শুরু হয় তার। ওই সময়ে বিল গেটস হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী থাকলেও দুই বছর পর গেটসও পড়ালেখা ছেড়ে দেন এবং দুজনে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠায়। তার পরের ইতিহাস তো সবারই জানা। এবারে আবার পল গার্ডনার এ্যালেনের স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তার স্বপ্নের প্লেন সাধারণ কোন প্লেন নয়, এ হলো যাকে বলে ‘সুপার প্লেন’। পোশাকী নাম স্ট্র্যাটোলঞ্চ কেরিয়ার এয়ারক্রাফট। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া মরুভূমিতে বেশ চুপিসারেই তৈরি হচ্ছিল বিমানটি। গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো কারখানা থেকে বের করা হয়েছে স্ট্র্যাটোলঞ্চ নামের বিমানটি। স্ট্র্যাটোলঞ্চ নামের এই বিমানটিকেই বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান। নির্মাণের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর ফুয়েল টেস্টের জন্য এটি হাঙ্গার থেকে বের করা হয়েছে। চার বছর ধরে গোপনে নির্মাণ করা হয়েছে স্ট্রাটোলঞ্চ নামের এই বিমানটি। ফুয়েল টেস্টের পর উড্ডয়ন পরীক্ষা শেষে এয়ারফিল্ডে নামানো হবে বিমানটি। বিমানটির নক্সা করেছে ট্রাটোলঞ্চ সিস্টেমস নামে প্রতিষ্ঠান। এর ডানা একটি ফুটবল মাঠের চেয়েও বড়। বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোসফিয়ারে নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত সেখানে রকেট বহন করে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানের দাবিদার এই বিমানের ওজন ৫ লাখ পাউন্ড। আর বহন করতে পারবে ৫ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। এর ডানার দৈর্ঘ্য ৩৮৫ ফুট। এর আগে সবচেয়ে বড় ডানার যে বিমানটি অন্তত একবার উড্ডয়ন করেছে, সেটি ছিল হাওয়ার্ড হাগ’স স্প্রুস গুজ, যার ডানা ছিল ৩১৯ ফুট লম্বা। ২৮ চাকাবিশিষ্ট বিমানটি ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ বিমানের ইঞ্জিনের সমান ক্ষমতাবিশিষ্ট ইঞ্জিন দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আছে ছয়টি জেট ইঞ্জিন। এটি এতই বড় যে এর নির্মাণকাজ চলার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়েছিল। পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বিমানটি। পল এ্যালেন কেন এত বিশাল আকারের বিমান তৈরিতে আগ্রহী হলেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে যাত্রী বহনের কাজে এটি ব্যবহৃত হবে না। মূলত রকেট বহন করবে স্ট্র্যাটোলঞ্চ। এর পেটের কাছাকাছি রকেট লাগানোর জায়গা আছে। ৩৫ হাজার ফুট ওপরে উঠে এই রকেট ছেড়ে দেয়া হবে। এতে করে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণসহ সামগ্রিক মহাকাশ অভিযান আরও সাশ্রয়ী হবে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ছোট আকারের কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে স্থাপনের খরচ কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্ট্র্যাটোলঞ্চের প্রধান নির্বাহী জিন ফ্লয়েড এক বিবৃতিতে বলেছেন, তার কোম্পানি মহাকাশ অভিযানে গ্রাহকদের কম দামে বেশি সুযোগ দিতেই এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই নতুন বিমানটি পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে অংশ নেবে। ২০১৯ সালের প্রথমদিকে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
×