ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নজিরবিহীন দুর্নীতি

এবার আরডিএর প্লট হরিলুট

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৬ জুন ২০১৭

এবার আরডিএর প্লট হরিলুট

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ এবার খোদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হরিলুট হয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) আওতাধীন ‘বনলতা’ বাণিজ্যিক এলাকা সম্প্রসারণ ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের প্লট। আবেদনকারীদের বঞ্চিত করে প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে আরডিএর কর্মকর্তা, কর্মচারী এমনকি পিওন ও গাড়ির চালক পর্যন্ত। নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ৩১টি প্লট নিজেদের নামে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন তারা। এ নিয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদকেও নালিশ জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। শর্ত অনুযায়ী লটারির কথা বলা হলেও কোন লটারি হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই অধিকাংশ প্লট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। এছাড়া কতিপয় প্রভাবশালীও হাতিয়েছে কিছু প্লট। জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল বনলতায় ৩২টি প্লটের বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে আরডিএ। প্লট বরাদ্দের নোটিশে বলা হয়, যেসব শ্রেণী কোটা অপূর্ণ রয়েছে সেগুলোর প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। জানা যায়, নির্ধারিত দিন ২৫ মে পর্যন্ত ৩২ প্লটের বিপরীতে ১৫৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীও ছিলেন। ভুক্তভোগীরা জানান, আবেদনপত্র জমার শেষদিন ২৫ মে আরডিএর নোটিশে বলা হয়, ৩১ মে সকাল সাড়ে ৯টায় লটারি হবে এবং ওই সময় আবেদনকারীদের আরডিএ ভবনে উপস্থিত থাকতেও অনুরোধ করা হয়। তবে ওই দিন আরডিএ ভবনে কোন লটারি অনুষ্ঠিত হয়নি। লটারি হবে জেনে যারা উপস্থিত হয়েছিলেন, আরডিএর এস্টেট শাখা থেকে তাদের বলা হয়, লটারি পরে হবে। অভিযোগে জানা যায়, গত ৩১ মে দিনভর আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের কক্ষে বসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্লট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। এদিন প্লটের আয়তন কম হওয়ায় কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামান। আরডিএর কর্মচারীরা শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিশাল আয়তনের প্লট বরাদ্দ নেয়ার প্রতিবাদও করেন। ১ জুনও তারা প্লটগুলোর মধ্যে কে কত কাঠা করে নেবেন, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এদিকে অধিকাংশ প্লট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি শেষে ২ জুন আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান রাজশাহী ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩২টি প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ৩১টির বরাদ্দ হয়। প্লট বরাদ্দের তালিকা অনুযায়ী আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নিজেই নিয়েছেন ৬ কাঠার একটি প্লট। চেয়ারম্যানের প্লট নম্বর-১৮৯ (সি)। প্লট বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক ও আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস নিয়েছেন ৫ কাঠার প্লট। এস্টেট অফিসার ও প্লট বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব বদরুজ্জামান নিয়েছেন ৬ কাঠার প্লট। প্রকৌশল শাখার কর্মচারী শামসুন্নাহার নুন্নী নিয়েছেন সাড়ে ৩ কাঠার প্লট। শুধু নিজেরাই নয়, নিজেদের ড্রাইভার-পিয়নসহ অধীনস্ত কর্মচারীদেরও দিয়েছেন প্লটের ভাগ। আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলারঞ্জন দাসের গাড়ির ড্রাইভার শরিফুল ইসলাম পেয়েছেন পৌনে ২ কাঠার প্লট। চেয়ারম্যানের পিয়ন ইউনুস আলী পেয়েছেন পৌনে ২ কাঠার প্লট। আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদের পিয়ন রেজাউল করিম পেয়েছেন সাড়ে ৩ কাঠার প্লট। সরকারী কর্মকর্তা শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছেন ৪ কাঠার প্লট। এভাবে প্লট নিয়েছেন আরও কয়েক আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদিকে শুধু আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই শুধু নয়, এ তালিকায় রয়েছেন আরও বেশ কয়েক প্রভাবশালী। নিজেদের নামে বহুতল ভবন থাকলেও শর্ত ভেঙে অনেকেই নিয়েছে প্লট। আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের পাঁচতলা বিশাল বাড়ি রয়েছে তালাইমারী এলাকায়। এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামানেরও বাড়ি রয়েছে নগরীতে। এক্ষেত্রে তারা প্লটের জন্য কীভাবে আবেদন করলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বঞ্চিত লোকজন। অভিযোগে জানা গেছে, বনলতা বাণিজ্যিক এলাকার আলোচিত ৩১টি প্লট শ্রেণী ও ক্যাটাগরিভিত্তিক বরাদ্দের কথা নোটিশে বলা হলেও এক্ষেত্রে প্লট প্রাপ্ত আরডিএর শীর্ষ কর্মকর্তারা কোন ক্যাটাগরিতে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা শর্তও লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীরা একাধারে আরডিএর আবাসিক এলাকা পদ্মা, চন্দ্রিমা, মহানন্দা ও এর আগে বনলতার ১৯০ প্লটে কোটার অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে নেয়া এসব প্লট তাদের অনেকে চড়া দামে বিক্রি করেও দিয়েছেন। এসব নিয়ে দুদকের তদন্ত চলমান রয়েছে। এবার বনলতার প্লট নিয়েও দুদকের দ্বারস্থ হবে ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে আরডিএর এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামান দাবি করেন, নীতিমালা অনুযায়ী তারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি আরডিএ চেয়ারম্যান বজলুর রহমান।
×