ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্যারিস চুক্তি থেকে ট্রাম্পের প্রস্থান

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ জুন ২০১৭

প্যারিস চুক্তি থেকে ট্রাম্পের প্রস্থান

বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে যেখানে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ঐকমত্য পোষণ করে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে সই করেছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১ জুন জানিয়েছেন ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে তার দেশ সরে যাবে। ট্রাম্প মনে করেন চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূলে নয়। অবশ্য ট্রাম্প অনতি অতীতে তার নির্বাচনী প্রচারের সময়ই এটি পরিত্যাগের অঙ্গীকার করেছিলেন, যার বাস্তব দৃষ্টান্তই এখন দেখছে বিশ্ব। অবশ্য ট্রাম্পের শীর্ষ জলবায়ু পরামর্শক স্কট প্রাইটের মন্তব্য এক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচ্য। তিনি বলেছেন, আমরা যখন প্যারিস চুক্তিতে যোগ দেই তখন গোটা বিশ্ব প্রশংসা করেছিল। কেন জানেন? আমার মনে হয় এ যোগদান এ দেশকে একটা লোকসানে ফেলবে, সেজন্যই তারা খুশি হয়েছিল। আমরা এই চুক্তিতে থাকি তা ইউরোপীয় নেতারা কেন চাইছেন? তারা জানেন এটা আমাদের অর্থনীতির গতি ব্যাহত করবে। এখন প্রধান বিবেচ্য, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিন্দা-সমালোচনা ভ্রƒক্ষেপ না করে প্যারিস চুক্তি থেকে ট্রাম্পের এই প্রস্থান বিশ্ববাসীকে কতটা হতবাক করেছে। যদিও ধরিত্রী মাকে বাঁচাতে চীন এবং ইউরোপ এক জোট হয়ে কাজ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে বড় ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইইউ নেতা ডোনাল্ড টাস্ক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২ জুন বলেছেন সবচেয়ে যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত কথা। তিনি বলেছেন, ‘পরিবেশ দূষণের কোন অধিকার আমাদের নেই। সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীর অধিকার সবার আছে। আমরা তা কেড়ে নিতে পারি না।’ জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল যেমনটা বলেছেন, আমাদের ‘ধরিত্রী মা’ এই মাকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব সবার। যে বা যারা এ দায়িত্ব পালনে অস্বীকার করে তারা যে ধরিত্রী মায়ের ভাল চান না তা সহজেই অনুমেয়। হোয়াইট হাউস যতই বলুক না কেন, ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে আটকে দিতে চাইছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা স্বীকার করছে না। এ যে প্রকৃত সত্যের কত বড় অপলাপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা তার দেশের স্বার্থ দেখে, বিশ্বের স্বার্থ নয়। যে কারণে ধরিত্রী মাকে বাঁচানোর প্রয়াস থেকে দূরে সরে থাকতে চায়। লক্ষণীয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুসৃত সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের গবর্নররা। ইতোমধ্যে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য একটি জলবায়ু জোট গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এই বিবেকী ও মানবিক অবস্থানের জন্য তারা ধন্যবার্দাহ। আসলে বিবেকবান মানুষ মাত্রই চাইবে ধরিত্রী মাকে বাঁচাতে। শুধু বিবেকহীনরা এর বিপক্ষে কুযুক্তি দাঁড় করাবে। যেমনটি দেখছি ট্রাম্পের বেলায়। ফ্রান্স যেমনটা বলেছে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ও নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী লড়াইয়ে অংশ নেবে, বিশ্ব নেতাদেরও উচিত এর সঙ্গে ঐকমত্য ঘোষণা করা এবং অংশ নেয়া। তা হলে আমেরিকার ভেতর থেকেই ট্রাম্পবিরোধী জনমত তৈরি হবে। ট্রাম্পকে একঘরে করে তোলার ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃত্বকে একযোগে কাজ করতে হবে। ঘরে-বাইরে তার নীতির নিন্দা-সমালোচনা করে তাকে সুন্দর পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা প্রয়োজন।
×