ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফের গোয়েন্দা জাল পেতেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

অল্পের জন্য ফসকে গেছে নব্য জেএমবি প্রধান আইয়ুব বাচ্চু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৬ জুন ২০১৭

অল্পের জন্য ফসকে গেছে নব্য জেএমবি প্রধান আইয়ুব বাচ্চু

শংকর কুমার দে ॥ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার এখন প্রধান টার্গেট হচ্ছে নব্য জেএমবির প্রধান আইয়ুব বাচ্চু। অল্পের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে ফসকে গেছে নতুন এ শীর্ষ জঙ্গী নেতা। যে কোন সময় নব্য জেএমবির জঙ্গীরা হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এজন্য পলাতক জঙ্গীদের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্রমতে, রাজধানীর অদূরে সাভার ও লক্ষ্মীপুর থেকে নব্য জেএমবির তিন সদস্য মনির হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম ও কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে মইনুল ইসলাম মুসা মারা যাওয়ার পর আইয়ুব বাচ্চুই নব্য জেএমবির আমিরের দায়িত্ব নিয়েছে। গত ২৭ মে সাভারের গেন্ডা ও ২৮ মে সাভারে দুই দফা অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযানের আগে সাভার এলাকায় আত্মগোপনে ছিল আইয়ুব বাচ্চু। পুলিশ অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সটকে পড়ে আইয়ুব বাচ্চু। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, আইয়ুব বাচ্চু ঢাকায় নামী একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি। দুই বছর আগে জঙ্গীবাদে জড়ায়। সাভারের গেন্ডার ওই বাসায় থাকত নব্য জেএমবির নতুন আমির আইয়ুব বাচ্চু। গ্রেফতার হওয়া মনির ও তৌহিদুল তার সহযোগী হিসেবে কাজ করত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় তারা। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়েই অভিযানের আগে আইয়ুব বাচ্চু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে পুলিশের ভাষ্য। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সিলেটের অভিযানে মইনুল ইসলাম মুসা নিহত হওয়ার পর আইয়ুব বাচ্চু নব্য জেএমবির আমিরের দায়িত্ব নেয়। আইয়ুব বাচ্চু তার সাংগঠনিক নাম। তার একটি ছবি আমরা পেয়েছি। প্রকৃত নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরী, মেজর জাহিদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম মারজান, আকাশসহ আরও বেশ কয়েক গুরুত্বপূর্ণ নেতা নিহত হওয়ার পরই মাইনুল ইসলাম মুসা নব্য জেএমবির হাল ধরে। এরপর গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সংগঠনকে নতুন রূপে সংগঠিত করার কাজ শুরু করে। মুসা নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর জেএমবির শক্তি বাড়াতে বড় আকারের বোমা তৈরির কাজ শুরু করে। বড় ধরনের হামলা চালিয়ে নতুন করে নব্য জেএমবিকে সামনে আনার চেষ্টা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সাভার, মৌলভীবাজার, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জঙ্গী আস্তানায় অস্ত্র, বিস্ফোরক, গ্রেনেড, বোমা, সুইসাইডাল ভেস্ট ইত্যাদির মজুদ ভা-ার গড়ে তোলে নব্য জেএমবি। এখনও বেশ কয়েকটি জঙ্গী আস্তানায় বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম মজুদ রয়েছে। মৌলভীবাজারের আস্তানায় মুসা মারা যাওয়ার পর নব্য জেএমবির হাল ধরে আইয়ুব বাচ্চু (সাংগঠনিক নাম)। তার নেতৃত্বে বড় ধরনের জঙ্গী হামলার জন্য পরিকল্পনা করছে নব্য জেএমবি। একজ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, নব্য জেএমবির জঙ্গীরা বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পলাতক নব্য জেএমবির সদস্যরা সংগঠিত হচ্ছে। গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছিল নব্য জেএমবির জঙ্গীরা। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় ওই হামলা চালানো হয়। বর্তমানে তামিম চৌধুরী না থাকলেও ঠিক একই কায়দায় তারা আবার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এ হামলার নীলনকশা করেছে নব্য জেএমবির বর্তমান আমির আইয়ুব বাচ্চু। নব্য জেএমবির জঙ্গীরা যাতে কোন হামলা করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় থেকে জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে, যার প্রধান টার্গেট আইয়ুব বাচ্চু। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর থেকে টানা অভিযান চালিয়ে নব্য ধারার জেএমবিকে অনেকটাই দুর্বল করা সম্ভব হয়েছে। সংগঠনটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেফতারের পাশাপাশি অভিযানকালে নিহত হয়েছে। যেসব জঙ্গী এখনও পলাতক তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের জঙ্গীবিরোধী অভিযান চলছে।
×