ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে সম্পূরক বাজেট আলোচনা

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ জুন ২০১৭

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার দাবি

সংসদ রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ২৭টি মন্ত্রণালয় বরাদ্দকৃত অর্থের চাইতে বেশি খরচ করেছে। অর্থমন্ত্রী অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কীভাবে হ্রাস করতে হয় সেটা ভালভাবেই জানেন। তবে যেসব মন্ত্রণালয় বরাদ্দকৃত অর্থ কেন খরচ করতে পারলো না- সে ব্যাপারে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। তবে আবগারি শুল্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পর সেই টাকা কেটে নিয়ে যাবে এনিয়ে মানুষ আতঙ্কিত। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০১৬-১৭ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম মিলন। আজ মঙ্গলবার সংসদে সম্পূরক বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বরাদ্দকৃত অর্থের চাইতে বেশি খরচ করেছে ২৭টি মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনের নিরিখেই খরচ হয়েছে। আমরা যথেচ্ছভাবে খরচ করিনি। যেখানে যেটা প্রয়োজন সেখানে সেটা খরচ করা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানের মতো বলেননি- ‘মানি ইজ নো প্রোবলেম’। তিনি প্রতিটি পাই পয়সা চিন্তা করে খরচ করেন। আমরা ইচ্ছা করলে সবগুলো মন্ত্রণালয় সব টাকা খরচ করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাভাবনা সেটা না। আর আমাদের অর্থমন্ত্রী তো অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কিভাবে রাশ টানতে হয় সেটা ভালভাবেই জানেন। তবে যেটা প্রয়োজন ছিল সেটা খরচ করার ক্ষেত্রে তিনি কার্পণ্য করেননি। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের চাইতে বেশি খরচ করেছে। এসব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে খরচের উচ্চ বৃদ্ধি হারে রয়েছে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, সুরক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত বিভাগ। এর কোন্টিকে আমরা অপ্রয়োজনীয় মনে করব? কোনটিকে আমরা বলব না এগুলো আমাদের দরকার ছিল না? তাই প্রয়োজনের নিরিখেই ব্যয় করা হয়েছে। বেশি খরচের কারণ উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মান্ধাতা আমলের শিক্ষা হিসেবে রাখা হয়েছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আসতে চান। সেজন্যই ব্যয় বেড়েছে। আমরা মামলা করে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এই সমুদ্রসীমা কী আমরা সাম্পান নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে রক্ষা করব? সমুদ্রের সম্পদ রক্ষা করতে আকাশ-স্থল-পানিতে আধুনিক যা যা প্রয়োজন তাই আনব। এজন্য ব্যয় তো বাড়বেই। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন আলোচনায় অংশ নিয়ে সম্পূরক বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। আর শেষ দুই মাসে কীভাবে ৪১ শতাংশ কাজ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর ৩৫টি মন্ত্রণালয় বরাদ্দকৃত টাকা কেন খরচ করতে পারল না- তার জবাব অবশ্যই দিতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেল। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, সাগরচুরি হয়েছে। এখনই শক্তহাতে তা বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে মহাসাগর চুরি হবে ব্যাংক থেকে। আবগারি শুল্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে হুইপ শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ব্যাংকে ১ লাখ টাকা জমা রাখলে ৮০০ টাকা কর দিতে হবে অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা প্রত্যাহার করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসার অনুরোধ করছি। একইসঙ্গে সোলার প্যানেলের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আবগারি শুল্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পর সেই টাকা কেটে নিয়ে যাবে এনিয়ে মানুষ আতঙ্কিত। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা বলছি না। আবগারি শুল্ক যেন আগের অবস্থায় থাকে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে কতিপয় ব্যক্তি অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির মাধ্যমে তার প্রচেষ্টাকে ব্যহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেক মন্ত্রণালয় কেন বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে পারল না- অবশ্যই তার জবাব দিতে হবে জনগণের কাছে। আর সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সন্ত্রাসী, লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজদের ধরে কড়া শাস্তি দিতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন। জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, অর্থমন্ত্রী বিশাল বাজেট দিয়ে ভীষণ খুশি। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো। অগ্রগতি খুবই নগণ্য। আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার অভাব রয়েছে প্রচুর। গৃহায়নসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় মনে হয় ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন।
×