রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুতেও ১৫ ভাগ ভ্যাট বসানো হয়েছে। আগামী পহেলা জুলাই থেকে গ্রাহকপর্যায়ে এ ভ্যাট কার্যকর করতে চায় সরকার। এর আগে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতে ৫ ভাগ ভ্যাট দিতে হতো। কিন্তু এখন এর পরিমাণ আরও ১০ ভাগ বাড়ছে। এতে গ্রাহকের বিদ্যুত বিলও ১০ ভাগ বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এভাবে গ্রাহকের বিদ্যুত বিল বৃদ্ধি করা আইনগতভাবে সম্ভব নয়।
দেশে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩-কে অনুসরণ করা হয়। এ আইনে বিদ্যুতের দরবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিতরণ সংস্থাকে কমিশন বরাবর আবেদন করতে হয়। কমিশন আবেদন যাচাই-বাছাই করে গণশুনানির ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শুধুমাত্র কোম্পানি বা সংস্থা ব্রেক ইভেন পয়েন্টে (লাভ-লোকসানের সমতা বিন্দু) থাকে এ পর্যন্ত দরবৃদ্ধি করা হয়। প্রচলিত আইনে অন্য কোন পন্থায় বিদ্যুতের দর নির্ধারণ করার কোন সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আইনগতভাবে এভাবে গ্রাহকের বিদ্যুত বিল বৃদ্ধির সুযোগ নেই। বিদ্যুত বিল বৃদ্ধি করতে হলে এর সুস্পষ্ট ঘোষণা গ্রাহককে আগেই দিতে হবে। এর জন্যও নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। তাদের উচিত ছিল আগেই বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করা। ইউনিটপ্রতি মূল দাম ঠিক রেখে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়।
ভ্যাট নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করা হবে। ধরা যাক এক ইউনিট বিদ্যুতের দর ৬ টাকা। এক্ষেত্রে ১৫ ভাগ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করে ইউনিটের দর নির্ধারণ করা হবে ৬ দশমিক ৯ টাকা। গ্রাহকের কাছে বিক্রির আগেই উৎপাদনপর্যায়েই এ ভ্যাট কেটে নেবে এনবিআর, পরবর্তী পর্যায়ে যা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হবে। এতে গ্রাহকের ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করার জন্য বিতরণ কোম্পানিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের দ্বারস্থ হতে হবে। কিন্তু এখনও বিতরণ কোম্পানিগুলো বিইআরসির সঙ্গে আলোচনাই করেনি। যদিও এনবিআর বলছে, এমআরপি নির্ধারণের জন্য বিদ্যুত বিভাগকে তারা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এনবিআর সম্প্রতি এক চিঠিতে তাদের আলোচনার জন্য ডেকেছে। সেখানে তারা বলছে, পিডিবি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং তেল আমদানিতে কর রেয়াত পেয়ে থাকে। এ রেয়াতের পরিমাণ যদি মোট আদায় হওয়া ভ্যাটের সমান হয় তাহলে আর অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পিডিবি বার্ষিক যে পরিমাণ কর রেয়াত পায় তার পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার মতো। কিন্তু বিদ্যুত খাত থেকে ১৫ ভাগ হারে ভ্যাট আদায় করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা। এখানে আরও দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকার সঙ্কট থাকে। বিপুল পরিমাণ এ লোকসানি অর্থ পিডিবির পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছি। আশা করছি সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে বিদ্যুতের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করবে। নয়ত দাম বৃদ্ধি করে এ অর্থের সংস্থান করা ছাড়া কোন বিকল্প থাকে না।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বিদ্যুতের ওপর ভ্যাট ৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১৫ ভাগ করার প্রস্তাব করেছেন। ভ্যাট যেহেতু গ্রাহককেই দিতে হবে তাই একবারে এতে গ্রাহকের বিদ্যুত বিলও বেড়ে যাবে। গ্রাহকের প্রতি ১০০ টাকা বিদ্যুত বিলে ১০ টাকা বেশি দিতে হবে। এখাবে এক হাজার টাকা বিদ্যুত বিলের ক্ষেত্রে আবাসিক গ্রাহকে এক হাজার ১০০ টাকা দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ছাড় পাবেন।
গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের দরবৃদ্ধির যে ধাপ তাতে কোন সময়ই বিদ্যুতের দাম একবারে ১০ ভাগ খুচরাপর্যায়ে বৃদ্ধি করা হয়নি। এবার বিদ্যুতের দর ১০ ভাগ বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকও আতঙ্কে রয়েছে। বিদ্যুতের দরবৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পাবে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজারদর বৃদ্ধি পাবে।
জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামসুল আসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, একদিকে সরকার লাইফ লাইন ট্যারিফ (প্রান্তিক মানুষের জন্য বিদ্যুত) দিচ্ছে। অর্থাৎ দেশে প্রান্তিক মানুষ রয়েছে বলেই তো বিইআরসি এ প্রথা চালু রেখেছে। সেখানে আবার তাদের কাছ থেকেও ১৫ ভাগ ভ্যাট আদায় তো নবাবী আচরণের মতোই। তিনি বলেন, ভারতের অনেক রাষ্ট্রেই বিদ্যুতের ওপর শূন্য ভ্যাট রয়েছে। যেসব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেশি তাদের কাছ থেকে বিদ্যুত, গ্যাস, পানির মতো জরুরী পণ্যে ভ্যাট আদায় করা যায়। আমাদের এখানে কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: