ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ জুন ২০১৭

দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় কাক্সিক্ষত ও মানসম্মত কর্মসংস্থান হচ্ছে না বাংলাদেশে। শ্রম খাতে কর্মক্ষম দেশীয় নারীর অংশগ্রহণের হার (৩৬ শতাংশ) বৈশ্বিক হারের (৪৯ শতাংশ) তুলনায় এখনো পিছিয়ে। এর ওপর গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের শিল্প খাতে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমছে। দেশের রফতানি শিল্প দীর্ঘদিন ধরে কেবল পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে একটি সমন্বিত কর্মসংস্থান নীতিমালা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে রফতানি বৈচিত্রকরণেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। সোমবার ‘বাংলাদেশ জবস ডায়াগনস্টিক’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত কর্মশালাটির প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। এ সময় প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনামিস্ট থমাস ফারলো এবং সিনিয়র ইকোনমিস্ট ওনইয়ং চো এবং আইএলও এর সিনিয়র এমপ্লয়মেন্ট স্পেশালিস্ট নোমান মজিদ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পার্লারকার এবং আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিবাস রেড্ডি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো, কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, তরুণদের কর্মবাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে অধিক প্রতিযোগিতা হ্রাস এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান গুটি কয়েক দেশে সীমাবদ্ধ না রেখে নতুন বাজার তৈরি। এগুলো ছাড়াও প্রত্যাশিত বিনিয়োগ না থাকা, পোশাক খাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) এবং কর্ম উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না উঠাকেও চ্যালেঞ্জ বলা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে প্যানেল আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকের চীফ ইকোনমিস্ট ফয়সাল আহমেদ, পলিসি রিসার্স ইনন্সিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রমুখ। প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে মানসম্মত চাকরির অভাব রয়েছে। বিশেষ করে কর্মক্ষম নারীর ক্ষেত্রে। কর্মক্ষম নারীদের ৬৩ শতাংশ কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যদিও ‘কৃষক’ হিসেবে তাদের স্বীকৃতি নেই। বিপরীতে কর্মক্ষম পুরুষদের মধ্যে ‘কৃষকের’ সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। তাছাড়া শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কিছুটা সমতা এলেও শ্রম বাজারে সার্বিকভাবে রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। অন্যদিকে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেই তুলনায় কর্মসংস্থান বাড়েনি। দেখা যায়, ২০০৩-২০১০ সাল পর্যন্ত সাত বছরে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে হয়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। আবার এমনিতেই চাকরি কম হচ্ছে, তার মধ্যে যাদের বয়স ৩০ এর বেশি, তাদের চাকরি পেতে তুলনামূলক সমস্যা কম হয়। কিন্তু ১৫ থেকে ২৯ বছরের যারা, তাদের ব্যাপক প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে। ফলে তরুণদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান কমলেও বিদেশে কর্মসংস্থান কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। যেমন, ২০০৮ সালে ২০ হাজার মহিলা শ্রমিক বিদেশে গেছে। ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিদেশে নতুন শ্রম বাজার তৈরি হচ্ছে না। সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সিঙ্গাপুর, ইউএইতে মোট বিদেশী শ্রমিক ৭১ শতাংশ যাচ্ছে। তাছাড়া শ্রমিকদের কাজের ধরনও পাল্টায়নি। কর্মশালায় রাজশ্রী পার্লারকার বলেন, সঠিক সমন্বিত নীতিমালা না থাকাটা কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম একটি বাধা। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না হলে প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না। পোশাক শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমছে। এক্ষেত্রে সামষ্টিক শ্রম কৌশলপত্র করতে হবে। এতে সরকারী, বেসরকারী, এনজিওসহ সব খাতের অংশগ্রহণ দরকার।
×