ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদদ দেয়ার অভিযোগ;###;আলোচনার প্রস্তাব ইরান ও তুরস্কের

কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন উপসাগরীয় পাঁচ দেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৬ জুন ২০১৭

কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন উপসাগরীয় পাঁচ দেশের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লাগাতার মদদ দেয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে উপসাগীয় পাঁচ দেশ। সোমবার সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন তেলসমৃদ্ধ কাতারের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এছাড়া উপসাগরের বাইরে লিবিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মালদ্বীপও সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে দোহার সম্পর্ক নিয়ে দেশগুলো বরাবরই সরব ছিল। কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডসহ অন্য জঙ্গী দলগুলোকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ সৌদি আরব, মিসর, ইয়েমেন, বাহরাইন সংযুক্ত আরব আমিরাতের। সৌদি সরকারী সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, রিয়াদ কাতারের সঙ্গে নিজের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং জল, স্থল ও আকাশপথে দুই দেশের যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বিচ্ছিন্ন করেছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই কাতারের সঙ্গে আকাশ পথ ও বন্দরসমূহ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছে। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটিতে নিযুক্ত কাতারের কূটনীতিকদের দেশত্যাগের ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে। আর বাহরাইন অভিযোগ করছে, দেশটির নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছিল কাতার। প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার পদক্ষেপকে দুঃখজনক অভিহিত করে কাতার বলেছে, অসত্য ও অতিরঞ্জিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেশী দেশগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওদিকে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান এই সমস্যা সমাধানে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে ইরান ও তুরস্ক। কাতার যুক্তরাষ্ট্রে বৈরী প্রচারের শিকার হচ্ছে এ ধরনের অভিযোগ দেশটি গত মাসের শেষের দিকে করেছিল। অন্যদিকে সম্প্রতি কাতারের সরকারী ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। এসব ঘটনার পরপরই প্রতিবেশী দেশগুলো কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল। ওয়েবসাইট ফাঁস হওয়ার পর দেখা গেছে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির বরাতে এমন অনেক বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে যেগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের জন্য অবমাননাকর। এর প্রতিক্রিয়া সৌদি আরব ও আরব আমিরাত নিজ নিজ ভূখ-ে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। উল্লেখ্য, কাতারের সম্প্রসারিত আল উদাইদ সামরিক ঘাঁটিটি মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডেরও প্রধান ঘাঁটি। কাতার ও মার্কিন বিমানবাহিনী যৌথভাবে ঘাঁটিটি ব্যবহার করছে। প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সৈন্য ঘাঁটিটিতে অবস্থান করছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কোন প্রভাব মার্কিন অভিযোগের ওপর পড়বে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। পাঁচ দেশের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের কোন প্রতিক্রিয়া এখনও সেন্ট্রাল কমান্ডের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। কাতার ইসলামপন্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় এই অভিযোগে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন গত কয়েক বছর ধরেই ছিল। বিশেষ করে মিসরে মোহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বাধীন ব্রাদারহুড সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। ২০১৪ সালের মার্চে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইন কাতার থেকে নিজ নিজ রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নেয়। এর এক বছর আগে মিসরের সেনাশাসক আবদেল ফাত্তাহ আসসিসি শক্তি প্রয়োগে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে না জানিয়ে সৌদি আরব একতরফাভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে সৌদির বিরুদ্ধেও চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো সহায়তা করার অভিযোগ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এমন অভিযোগ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন অবশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। বিবদমান দেশগুলো আলোচনায় বসতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করতে রাজি আছে বলে তিনি জানান। এদিকে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কাতার এয়ারওয়েজের স্পন্সরশিপ বাতিল করেছে সৌদি ফুটবল টিম আল আহলি ক্লাব। ইরান বলেছে, সম্পর্ক ছিন্ন করা ও সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া কোন সমস্যার সমাধান নয়।
×