ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তামিমের ৫ রানের আক্ষেপ, ১৮২ রানে অলআউট বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৬ জুন ২০১৭

তামিমের ৫ রানের আক্ষেপ, ১৮২ রানে অলআউট বাংলাদেশ

আবারও ব্যাটিং ঝলক দেখিয়েছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। বাংলাদেশী দর্শকদের মন ভরিয়ে দিয়েছেন। তবে মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারলেন না, সেই আক্ষেপ থেকেই গেল তার। তামিম ব্যাট হাতে না দাঁড়ালে বাংলাদেশ ১৫০ রানও করতে পারত কিনা শঙ্কা ছিল। তবে ১৮২ রানে অলআউট হয়ে সার্বিকভাবে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে বিপাকে পড়ে। মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউড ও পেট কামিন্সের গতি এতটাই ভুগিয়েছে, রানই নেয়া যায়নি, আবার উইকেটও হারাতে হয়েছে। ৩৭ রানের মধ্যেই সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে হারায় বাংলাদেশ। স্টার্ক একদিকে গতির ঝড় তোলেন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চরম চাপে রাখেন। আরেকদিকে হ্যাজলউড ও কামিন্স মিলে সুবিধা পেয়ে উইকেট শিকার করেন। যখন এ তিনজনকে থামিয়ে দিয়ে স্পিনার (ট্রেভিস হেড) আনা হলো, তখনও চাপেই থাকলেন ব্যাটসম্যানরা। মাঝখানে মোজেজ হ্যানরিকস এসে মুশফিককেও আউট করে দেন। ৫৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু একজন ঠিকই ধৈর্য্য ধরে খেলে চলেন। উইকেটে আঠার মত লেগে থাকেন। কখনো বাউন্স পান। কখনো শট বল পান। সেই বলগুলোতে খুব ভালভাবে সামলান। দেখতে দেখতে তামিম হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফেরেন, তখন তামিম ৬৯ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন। একটা সময় ৬৩ বলে তামিমের ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে ৩৪ রান জমা ছিল। তামিম ততক্ষণে উইকেটে জমে গেছেন। বুঝতে পেরেছেন, এবার একটু মারমুখী হয়ে খেলা উচিত। এমনই মার শুরু করলেন, পরের ৫ বলেই দুই ছক্কা ও এক বাউন্ডারির সঙ্গে এক রান নিয়ে ১৫ রান করে ফেললেন। হ্যানরিকসের বলগুলোকে এমন শাসন করলেন, ব্যাটসম্যানদেরও যেন সাহস বেড়ে গেল। চাপ থেকে স্বস্তি এলো। সাকিবকে নিয়ে এরপর এগিয়ে যেতে থাকলেন তামিম। কিন্তু যেই ৬৯ রানের জুটি হলো, দলের স্কোর ১২২ রানে গেল; তখনই হেডের বলে এলবিডবলিউ হয়ে গেলেন সাকিব। তামিমকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন। ২৯ রানও করে ফেলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, সাকিব দুর্দান্ত খেলার পথেই আছেন। কিন্তু আউট হয়ে গেলেন। ১১ রানে একবার ক্যাচ আউট হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সাকিব রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। সাকিব ্আউট হয়ে গেলে দল আবারও চাপে পড়ে। এরপরও তামিম যেন একাই লড়াই করে যেতে থাকেন। হেডের দুই বলে বিশাল ছক্কাও হাঁকান। সাকিবের আউটের পর সাব্বির রহমান রুম্মন ব্যাট হাতে নামেন। কিন্তু গুগলি বোলার এ্যাডাম জামপার দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ আউট হয়ে যান। ততক্ষণে তামিম ৭৮ রানে চলে যান। সেঞ্চুরি হতে আর ২২ রান বাকি তখন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচেই ১২৮ রান করেছিলেন তামিম। ওভালেই সেই সেঞ্চুরিটি ছিল। ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান ওয়ানডেতে প্রথমবারের মত সেঞ্চুরি করে। দ্বিতীয় ম্যাচেও সেঞ্চুরি করে দেখালেন তামিম। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন। একাই দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। একেকটি করে উইকেট পড়েছে। তার সামনে দিয়ে একেকজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও আউট হয়েছেন। কিন্তু তিনি ঠিকই অবিচল থেকেছেন। যত ঝড়ই আসুক। যত চাপই আসুক। সব সামলে এগিয়ে গেছেন বাংলাদেশ ওপেনার। যেভাবে খেলছিলেন, তাতে সেঞ্চুরি হওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার। মাত্র ৫ রানের দরকার ছিল। ‘ইংল্যান্ডের মাটি তামিমের ঘাঁটি’- সেঞ্চুরি হলেই তা লেখা হয়ে যেত। ওভালের রাজাও হয়ে যেতেন তামিম। টানা দুই ম্যাচে ওভালে যে কোন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ইংল্যান্ডে ২০১০ সালে সিরিজ খেলতে এসে টানা দুই টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি ছিল তামিমের। এবারও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তামিম টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির সুযোগ পেলেন। কিন্তু দলের ১৮১ রানের সময় ১১৪ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৫ রান করে আউট হয়ে গেলেন তামিম। দলকে শেষপর্যন্ত টানলেন। কিন্তু শেষটা আর করে দেখাতে পারলেন না। তামিমের আউটের পর মুহুর্তেই কোন রান যোগ না হতেই আরও দুই উইকেট পড়ে গেল। স্টার্ক এক ওভারেই তিন উইকেট নিয়ে নিলেন। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ ১৮২ রান করতে পারল। যে আলোটা এতক্ষন তামিমের ওপর ছিল। শেষে গিয়ে পড়ল স্টার্কের ওপর। শেষের চার উইকেটই যে স্টার্ক শিকার করলেন। তবে ৯৫ রানে আউট হয়ে তামিম যখন মাঠ ছাড়ছেন, তখন যে সবাই দাঁড়িয়ে অসাধারণ ইনিংস খেলা এ ব্যাটসম্যানের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সেটিই সবার মনে গেঁথে থাকল। বাংলাদেশকে দ্রুত অলআউট হওয়া থেকে তো তামিমই রক্ষা করলেন।
×