ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৫ জুন ২০১৭

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ একে একে পার হয়ে যাচ্ছে রহমতের দশক। আগামী পরশু থেকে শুরু হবে মাগফিরাতের বারতাবাহী মধ্যম দশক। তিনটি দশক বা তিনটি সময়ের সীমারেখার গুরুত্ব নানা সৌন্দর্য ও রহস্যে ভরা। ইসলাম সময়কে চেনার ওপর গুরুত্বারোপ করে বেশি। ইসলামের ইবাদতগুলো সময়নির্ভর। মাহে রমজানের সেহরি অনুষ্ঠান, ইফতার মাহফিল, তারাবীহ তাহাজ্জুদ, ইতেকাফ, শবে কদর সব ইবাদত বন্দেগী সময়ের ভিত্তিতে আবর্তিত। সাধারণত কা-জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা জানেন সময় কত বেশি মূল্যবান। একটি প্রবাদ আছে, সময় হলো সোনার মতো দামী’। অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করেন। আর ইসলামে সময় স্বর্ণ কিংবা বিশ্বের যে কোন মূল্যবান বস্তুর চেয়ে বেশি দামী। এ সময় বা কালের গুরুত্ব অনুধাবন করব আজ আমরা এ কলামে। কুরআন ও সুন্নাহ্, উভয়েই মুসলমানদের নির্দেশ দেয় সময়ের ব্যাপারে সচেতন হতে। আমাদের মনে করিয়ে দেয়া হয় যে, এ পৃথিবীর জীবন অস্থায়ী ছাড়া কিছু নয়। আমরা জানি না, কখন আমাদের মৃত্যুর সময় নির্ধারিত হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমাদের অবশ্যই সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সাফল্যের প্রয়োজনেই আমরা কখনও সময়ের অপচয় বা অপব্যবহার করতে পারি না। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের জন্য দুটি আশীর্বাদ রয়েছে যা অনেকেই হারিয়ে ফেলে। এগুলো হলোÑ ভাল কাজের জন্য স্বাস্থ্য ও সময়। (বুখারী শরিফ ৮/৪২১)। মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী (স.) অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার প্রশংসাগুলোকে মহিমান্বিত করুন এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। আর প্রতিপালকের ইবাদত করুন, যে পর্যন্ত না আপনার কাছে নিশ্চিত কথা আসে। (সূরা হিজর, আয়াত ৯৮Ñ৯৯)। কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে আরও জানার জন্য আমাদের সময়কে কাজে লাগাতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) আমাদের কি করার আদেশ দিয়েছেন, সে সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে অবশ্যই। একই সঙ্গে, তারা আমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য কি কি করণীয়, তাও সঠিকভাবে জানতে হবে। এটা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক যাতে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরষ্কার লাভ করতে পারি। পরম মর্যাদাবান আল্লাহ বলেছেন‘ হে বিশ্বাসীগণ, আল্লাহকে মেনে চল, আর মান্য কর বাণীবাহককে (মুহাম্মদ) এবং তোমাদের কাজকর্ম বৃথা যেতে দিও না।’ (সূরা মুহাম্মদ,্ আয়াতÑ৩৩)। ‘কালের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে, তারা ছাড়াÑ যারা ঈমানদার, সৎ কর্মশীল, পরস্পরকে সত্যনিষ্ঠার নির্দেশ প্রদানকারী এবং ধৈর্য ধারণকারী ও অবিচল।’ (সূরা আসর)। কুরআনের ওপরে বর্ণিত নির্দেশ মোতাবেক, সময়ের মূল্যকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের নিজেদের সুশৃঙ্খল করে তুলতে হবে। সৎ কাজে আমাদের অবশ্যই দ্রুতগতি থাকতে হবে। এতে আমাদের ঈমান বাড়বে। ফলে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও ক্ষমা অর্জনের যোগ্যতা আমরা পারব হাসিল করতে। আমাদের মনে রাখা উচিত, শেষ বিচারের দিনে আমাদের জিজ্ঞেস করা হবেÑ আমরা আমাদের জীবন, সম্পদ ও জ্ঞান কিভাবে ব্যয় করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (স.) বলেছেনÑ মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন দিবসে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। তার জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কিভাবে তা ব্যয় হয়েছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে বলা হবে, কেমন করে সে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে? সম্পদের বিষয়ে প্রশ্ন হবে, এ সম্পদ সে অর্জন করল কোত্থেকে? যদি আমরা নিজেদের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করি, তাহলে বলতে হয়, আমরা কি সর্বশক্তির অধিকারী আল্লাতায়ালাকে খুশি করার জন্য আমাদের সময়কে বুদ্ধিমত্তাসহকারে ব্যয় করে আসছি? আমরা কি বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুসারী? আমাদের ক’জনই বা মুমিন বা ঈমানদার কিংবা মুত্তাকী, অর্থাৎ আল্লাহর ভয় পোষণকারী? সফল হতে হলে আমাদের সময়কে আমরা যেন প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজে লাগাই। মাসব্যাপী সিয়াম-সাধনার মাহাত্ম্য এখানেই ।
×