ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাসের সোনালী পাতায় জিদান

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৫ জুন ২০১৭

ইতিহাসের সোনালী পাতায় জিদান

গোলাম মোস্তফা ॥ রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকেই উড়ছেন জিনেদিন জিদান। প্রথম বছরেই তিন তিনটি শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, উয়েফা সুপার কাপের পর সর্বশেষে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতেন রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরাসী কোচ। এ বছরও পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তিনি। গত মাসে স্পেনের লা লিগা জয়ের পর শনিবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপাও নিজেদের শোকেসে তুললেন রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরাসী কিংবদন্তি। অসামান্য এই কীর্তি গড়েই নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন জিনেদিন জিদান। ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩ জুন। এই সময়ের মধ্যেই দু’টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, একটি করে স্প্যানিশ লা লিগা, উয়েফা সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের স্বাদ পান জিনেদিন জিদান। এর ফলে রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসী কোচও ঢুকে গেছেন এলিট কোচদের দলে। খেলোয়াড় হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদকে নবম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতাতে জিদানের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টে রিয়াল মাদ্রিদ যখন দশমবার চ্যাম্পিয়ন হয় জিদান তখন সহকারী কোচ। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ১১তম শিরোপাটা রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান কোচ হিসেবেই জেতেন তিনি। শনিবার কার্ডিফে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের অবিশ্বাস্য কীর্তিও গড়লেন ৪৪ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি কোচ। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ যুগে যা আর কোন কোচই করতে পারেননি জিনেদিন জিদান এবার তাই করে দেখালেন। শুধু তাই নয়, ৫৯ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম একই মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের বিরল রেকর্ড গড়লেন জিদান। এর আগে ১৯৫৬/৫৭ এবং ১৯৫৭/৫৮ মৌসুমে এই রেকর্ড গড়েছিল স্পেনের জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম কোচ হিসেবে রিয়ালকে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জেতানোর অভিজ্ঞতা কেমন? ম্যাচ শেষে জিদান বলেন, ‘আমি তো আনন্দে নাচতে শুরু করছিলাম। মনে হচ্ছিল আমি এই (রিয়াল মাদ্রিদ) বাড়িরই মানুষ। এই ক্লাবটা সত্যিই আমার হৃদয়ে। এখন আমরা উপভোগ করতে চাই। রিয়াল মাদ্রিদ এবং তার সমর্থকদের জন্য এই দিনটা সত্যিই ঐতিহাসিক।’ ফুটবল বিশ্বে শেষ কয়েকটা বছর রাজত্ব করছে তার খেলোয়াড়রা। কার্ডিফে শেষ হাসি হেসে জিজু বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য দুর্দান্ত একটা বছর। আমি সব ফুটবলারকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমি জানতাম এরকমভাবে কাজ করলে সাফল্য আসবেই।’ এর মাঝেই জিজুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনিই কি বিশ্বের সেরা কোচ এখন? লাজুক হাসিতেই সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী জিদান বলেন, ‘না, না, একেবারেই তা নয়। আমি অত্যন্ত খুশি। একটা অদ্ভুত তৃপ্তি আসছে ভেতর থেকে। এখন আমাদের আনন্দ করার সময়।’ ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। ২০০৬ সালে টাইব্রেকার ভাগ্যে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপাটা জিততে পারেননি। জিনেদিন জিদান ফুটবল প্রতিভা, ক্রীড়াশৈলী বিবেচনায় খেলোয়াড় হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসেছেন অনেক আগেই। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলের কোচের গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেয়ার মাত্র ১৭ মাসের মধ্যেই যে তিনি কোচ হিসেবে ‘অমরত্বের’ তালিকায় নাম লেখাবেন, সেটি বোধ হয় ভাবতে পারেননি ফরাসী কিংবদন্তি নিজেও। ২০০২ সালে বেয়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে তার গোলেই জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ১৫ বছরের মাথায় কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতে আরিগো সাচ্চির পর প্রথম কোচ হিসেবে টানা দুবার ইউরোপ সেরা দলের কোচ জিদান। যে কৃতিত্ব স্যার এ্যালেক্স ফার্গুসন, জোশে মরিনহো কিংবা পেপ গার্ডিওলাদের নেই, সেই কৃতিত্ব জিদান নিজের করে নিলেন রিয়ালের ‘বি’ টিমের সহকারী কোচের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই। ভাগ্যের বরপুত্র বোধ হয় জিদানদেরই বলে। জিদান অবশ্য এতকিছু হাতে পেয়েও অসম্ভব বিনয়ী, ‘ফার্গুসন, মরিনহো, গার্দিওলা যে কোচদের নাম নেয়া হচ্ছে, তারা সকলেই দুর্দান্ত কোচ। আমি তাদের চেয়ে সেরা এটা বলার সাহস আমার নেই। আমি দুর্দান্ত একটা দল পেয়েছি। এটাই আমার সাফল্যের মূল।’
×