ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্তকারীরা বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নন

রূপগঞ্জে উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র কি জঙ্গীগোষ্ঠীর?

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৫ জুন ২০১৭

রূপগঞ্জে উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র কি জঙ্গীগোষ্ঠীর?

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর অদূরে রূপগঞ্জ থেকে উদ্ধারকৃত বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চোরাচালানি চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। চুনোপুুঁটি শ্রেণীর বাহক বা সোর্স ধরা পড়লেও চোরাচালানি চক্রের রুই কাতলারা ধরা পড়ার মতো কোন ক্লু এখনও পর্যন্ত পায়নি তদন্তকারীরা। আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চোরাচালানটি শেষ পর্যন্ত হাত বদল হয়ে জঙ্গী গোষ্ঠীর হাতেই চলে যেত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের আন্ডারওয়ার্ল্ডে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ চলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গীবিরোধী চলমান ব্যাপক তৎপরতার মুখে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ডোবার পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চোরাচালান ধরা পড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের নাশকতার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চালানটি যেই দেশ থেকে যারাই এ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চোরাচালান এনে থাকুক না কেন বর্তমানে দেশে জঙ্গী গোষ্ঠী ছাড়া আর কারও তা ব্যবহার করার মতো শক্তি বা সামর্থ দেখা যাচ্ছে না। কারণ দেশের মাটি থেকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার মেরুদ- অনেক আগেই ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকা তো দূরের কথা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও উলফার কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয় না। তবে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান বাংলাদেশের কোন পাহাড়ী এলাকার দুর্গম স্থানে পাঠানো হতো বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। রবিবার পর্যন্ত তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে রাজধানীর উত্তরা থেকে উদ্ধার করা অনুরূপ পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান উদ্ধারের পরও কারা কি উদ্দেশে অস্ত্রের চালান এনেছে সে রহস্য উদঘাটিত হয়নি। রাজধানীর উত্তরার ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় চোরাচালানি চক্রের মধ্যে যোগসূত্র থাকারও ইঙ্গিত বহন করছে। তবে এক বছর আগের উত্তরার অস্ত্রের চোরাচালানের রহস্যের উদঘাটন না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের অস্ত্রের চালানের রহস্য উদঘাটন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, কারা, কী উদ্দেশে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনল এ প্রশ্ন সামনে রেখেই তদন্ত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন হিসাব মেলাতে পারছেন না তদন্তকারীরা। কারণ যে চারজন ধরা পড়েছে তারা ছিঁচকে, মাদক ব্যবসায়ী, পুলিশ সোর্স ও দরিদ্র শ্রেণীর। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালানের উৎস খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর ও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে তদন্তকারীদের কারও কারও দাবি, এসব অস্ত্র চীনের তৈরি। আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেট বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এত বিপুল অস্ত্রের চালানের গন্তব্য যেখানেই হোক না কেন দেশের জন্য তা বড় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাকারবারিরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে এসব অস্ত্র এনে থাকতে পারে। অস্ত্র চোরাকারবারিরা বাংলাদেশে ছোট ছোট এজেন্টের মাধ্যমে অস্ত্র- গোলাবারুদ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে থাকে। দেশের অরক্ষিত সমুদ্র ও সীমান্ত পথগুলো দিয়ে অস্ত্র ও মাদক ঢুকছে। অতীতের নজির রয়েছে যে, চীন থেকে নির্ধারিত কিছু এজেন্টের মাধ্যমে এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ বাংলাদেশে এসেছে। অতীতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জন্য এখানে মজুদ করা হলেও এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তদন্তকারীরা বলছেন, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির অস্ত্রের চালান এবং রূপগঞ্জের অস্ত্রের চালানের মধ্যে বিশেষ যোগসূত্র থাকতে পারে। এসব অবৈধ অস্ত্রের চালানের ও পেছনে আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও শক্তিশালী চোরাচালানি নেটওয়ার্ক কাজ করছে। তারা অস্ত্র ব্যবসার রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশকে। তবে এ সুযোগে এসব অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষুদ্র একটি অংশ বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের হাতেও চলে যাচ্ছে বলে তাদের ধারণা। এছাড়া এ ধরনের অস্ত্রের চালান দেশে আরও রয়েছে বলে মনে করছেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ভেদ করে কিভাবে এত অস্ত্র দেশে ঢুকছে তাও এক বিরাট প্রশ্ন। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে অস্ত্রের চালান উদ্ধার হওয়ার আগে গত ১ জুন রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে অত্যাধুনিক ১০ অস্ত্র, ১০ রাউন্ড গুলি ও ৯ ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার অস্ত্র ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে অস্ত্র ও ম্যাগজিনগুলো বহন করছিল। এসব অবৈধ অস্ত্র বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢাকায় এনে উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করত। ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীর বাড়ি যশোর। এর আগেও মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় চেকপোস্টে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী ধরা পড়েছে। প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ৬২ এসএমজি, ৫১ ম্যাগজিন, ৫ পিস্তল, ২ ওয়াকিটকি, ২ রকেট লঞ্চার, ৫৪ গ্রেনেড, বিপুল গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়। বিশেষভাবে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে দড়ি দিয়ে এসব অস্ত্র গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের জুনে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে একটি খাল থেকে ৯৭ পিস্তল, ৪৯৪ ম্যাগজিন ও ১ হাজার ৬০ গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া শনিবার এ চালানের মধ্যে আরও পাঁচটি এসএমজি চায়নিজ রাইফেল শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার করা হয়।
×