ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুগ্ধ চোখে দেখা মহাস্থানের নিদর্শন

কালো পাথরের মূর্তি পোড়ামাটির ফলক স্থাপত্যাংশ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৫ জুন ২০১৭

কালো পাথরের মূর্তি পোড়ামাটির ফলক স্থাপত্যাংশ

মোরসালিন মিজান ॥ প্রাচীন বাংলার রাজধানী শহর মহাস্থান। প্রসিদ্ধ নগরীর আলোঝলমলে ইতিহাস আজ কারও অজানা নয়। আনুমানিক আড়াই হাজার বছর পূর্বে গড়ে উঠেছিল সভ্য জনপদ। পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের প্রাদেশিক রাজধানী। পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজারাও মহাস্থানকে রাজধানী হিসেবে বেছে নেন। বহুকাল আগের ইতিহাস খোঁজ করতে ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ। পাকিস্তান আমলেও অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশ জন্মের পর গতি পায় প্রতœতাত্ত্বিক খননের কাজ। পাওয়া যায় অসংখ্য নিদর্শন। আকস্মিকভাবেও অনেক কিছু পাওয়া গেছে। উল্লেখযোগ্য নিদর্শন চলে আসে জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে। এখনও স্থায়ী গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে এর বাইরেও জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে অনেক নিদর্শন। সে সবের ১৭৪টি নিয়ে নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে চলছে বিশেষ প্রদর্শনী। বগুড়ার মহাস্থানকে গত বছর সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করা হয়। এই স্বীকৃতি উদ্যাপনের অংশ হিসেবে জাতীয় জাদুঘর ‘মহাস্থান’ শিরোনামে প্রদর্শনীর আয়োজন করে। দেশের অন্যতম প্রধান প্রতœতাত্ত্বিক এলাকা থেকে সংগৃহীত নিদর্শন দিয়ে সাজানো হয়েছে নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারি। কালো পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন রাজাদের ব্যবহৃত মুদ্রা, স্থাপত্যাংশ ইত্যাদি দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। সে সময়ের ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি, মানুষের উন্নত রুচি শিল্পবোধ ও আভিজাত্যকে প্রকাশ করছে অমূল্য স্মারক। গ্যালারির দেয়াল ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির মূর্তি। অখ- কালো পাথরের শিল্পকর্ম দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজ। একটি সূর্য মূর্তি ৯১ সেন্টিমিটার উঁচু। বগুড়ার কৌশল্যাতলা থেকে পাওয়া। আনুমানিক ১১ থেকে ১২ শতকের নিদর্শন। সদ্যোজাত শিব মূর্তি সংগ্রহ করা হয় নন্দীগ্রাম থেকে। আছে ধ্যানী বুদ্ধ। প্রদর্শনীতে আছে কুশান যুগের পোড়ামাটির সিল। মৌর্যযুগের উত্তর ভারতীয় মসৃণ মৃৎপাত্র। মৌর্য শুঙ্গ যুগের পোড়ামাটির দৃষ্টিনন্দন ফলক। স্থাপত্যাংশও রাখা হয়েছে। ট্যাংরা এলাকা থেকে পাওয়া একটি স্থাপত্যাংশ দেখে সে সময়ের মানুষের রুচি ও শিল্পবোধ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ১০ কিংবা ১১ শতকের কাজ। গ্লাস শোকেসেও বেশ কিছু উপস্থাপনা। অধিকাংশই পোড়ামাটির ফলক। এখানে দশ মস্তকযুক্ত রাবণ। ছোট পরিসরে চমৎকার রিলিফ ওয়ার্ক। আনুমানিক ১৭ থেকে ১৮ শতকের কাজ। হরিপুর থেকে সংগৃহীত। আছে লিপিযুক্ত ফলক। রামচন্দ্র ও লক্ষণের সঙ্গে পশুরামের তর্ক ফলকে তুলে ধরা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতকের পোড়ামাটির ফলক পলাশবাড়ি থেকে সংগৃহীত। পাশের আরেকটি লিপিযুক্ত ফলকে দশরথের কাছে কৈকেয়ীর পূর্ব প্রতিশ্রুত বর প্রার্থনার দৃশ্য। এটিও ষষ্ঠ অথবা সপ্তম শতকের। পলাশ বাড়ি থেকে পাওয়া। সব মিলিয়ে মহাস্থানকে দেখা। মুগ্ধ চোখে। ১৯ মে শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ৭ জুন পর্যন্ত।
×