ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পপি দেবী থাপা

কর্মক্ষেত্রে নারীর পোশাক

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৫ জুন ২০১৭

কর্মক্ষেত্রে নারীর পোশাক

সকল পিছুটান ভীতি এবং কুসংস্কারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রের সকল সেক্টরে নিজেকে সংযুক্ত করে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে নারী। সর্বক্ষেত্রেই সাহসিকতার সাথে স্বমহিমায় তার যোগ্যতার প্রকাশ নারীকে দিয়েছে গৌরবের জয়মাল্য। আর কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষ এক যোগে এগিয়ে না এলে দেশ জাতির উন্নয়নও সম্ভব নয়। নিজের মনুষ্যত্ববোধকে সদা জাগ্রত রাখতে , সমাজের অদৃশ্য সীমারেখার গন্ডী পেড়িয়ে বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজের নেতৃত্বে নারী তার যোগ্যতাকে তুলে ধরছে সফলতার সাথে । দৈনন্দিন জীবনে কর্মক্ষেত্রে তার পোশাকের সুবিধা ও গুরুত্ব তুলে ধরতেই আমাদের আজকের বিষয়ারোপ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে পোশাকের ক্ষেক্রে ও কাপড় নির্বাচনে ঋতু বৈচিত্র্য কে বিবেচনায় রাখতেই হবে। কর্মক্ষেত্রে পোশাক হওযা উচিত রুচিশীল মার্জিত এবং যা পরে আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন । আবার এদিকটাও খেয়াল রাখা উচিত দেখতে যেন দৃষ্টিকটু না হয়। কেননা এখানে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার সুযোগ কম। যদি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন , আপনি স্বেচ্ছাধীন পোশাক পরতে পারেন তবে এটাও খেয়াল রাখা উচিত ওটা আপনার অফিস। বাংলাদেশে নারীর অফিসিয়াল পোশাক মূলত শাড়ী হওয়াটাই গ্রহণযোগ্য , অধিক মানানসই এবং বাঙালীয়ানা। কর্মক্ষেত্রে আপনাকে স্মার্ট , রুচিশীল , সুন্দর এবং পদমর্যাদার সাথে আপনার গুরুত্ব ও সম্মান বজায় রাখতে পোশাকে ,শাড়ীর বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। এক্ষেত্রে সুতি প্রিন্ট , কোঁটা , এক রঙের উপর পছন্দসই পাড়ওয়ালা শাড়ি , সুতি কাপড়ের উপর ব্লক , বাটিক , স্কিন প্রিন্ট , এ্যাপলিক , এ্যামব্রোডারী , হাতের কাজ অথবা তাঁতের শাড়ি আপনার সাথে বেশ মানিয়ে যাবে। আর গরমের দিনে হবে আরামদায়ক। যা নারীর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও মনকে রাখবে কর্মচঞ্চল । বাড়িয়ে তুলবে কর্মোদ্দীপনা এবং নতুন কাজকে সাহসিকতার সাথে গ্রহণ করার মানসিকতা। যার প্রভাব প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য কর্মে ভাবনার নতুন দাঁড় খুলে দিবে। কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতা প্রমানে নিজেকে আরও সক্রিয় করে তুলবে। তবে নাগরিক ব্যস্তজীবনের ব্যস্ত সময়ে প্রত্যহ গুছিয়ে শাড়ী পরায় সময় হয়ে ওঠে না। তাই শাড়ি যদি হয় জর্জেট , সিল্ক ,তসর সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও দ্রুততার সাথে পড়া যায়। এসব শাড়ী ধোয়া সহজ আর সুতি শাড়ির মত মাড় দেওয়ার ঝামেলা থাকে না । বর্ষার দিনে বৃষ্টির ছিটায় ভিজে গেলেও তা সহজে শুকিয়ে যায়। বর্তমানে কিছু শাড়ী এসেছে যা যত্নের সাথে ধুতে পারলে আয়রন করার ঝামেলা থাকে না। ফলে আপনি সংসার ও অফিস সময়ের মাঝখানে কিছুটা সময় বেশি পচ্ছেন। যে সময়টা আপনি বাসায় দিতে পারেন অথবা যাওয়ার সময় যে তাড়াহুড়া থাকে সেখানে কিছু সময় যোগ করে ধীর স্থির ভাবে নিজেকে সুন্দর করে গুছিয়ে , টেনশন ফ্রি হয়ে অফিসে যেতে পারেন। যা দিনের কর্মের শুরুতেই আপনার কর্মোদ্দীপনা বাড়িয়ে তুলবে। অফিসিয়াল গেটাপে নিজেকে মার্জিত দেখানোর জন্য শাড়ীর ব্লাউজ হাফ হাতা অথবা থ্রি-কোয়ার্টার হাতা বেছে নেওয়াটাই শোভনীয়। শাড়ি পরিধানের সময় টিপটপ করে নিজেকে গুছিয়ে এবং চলার ক্ষেত্রে যাতে করে সহজ বোধ্য হয় সে রকম ভাবে পিন-আপ করে চলতে হবে। তবে শাড়ী পড়ে বাইরে বাসে অথবা রিক্সায় ওঠা নামা অর্থাৎ যাতায়াত করা ততটা সহজ নয় । আর যারা শাড়ি পরায় অভ্যস্ত নন তাদের জন্য বধ্যতামূলক শাড়ী পড়া এবং তা পরে যাতায়াত করা বিশেষ করে গরম কালে খুবই কষ্টসাধ্য। তবে যাদের নিজেস্ব গাড়ী রয়েছে অথবা অফিসের গাড়ীতে যাতায়াতের বিশেষ সুবিধা পান তাদের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। আর শীতে শাড়ীর রং এর সাথে মিলিয়ে কোট অথবা কার্ডিগান মানিয়ে যায় সহজেই। যদি শাড়ি পরার জন্য অফিসে বাধ্যগত কোন নিয়ম না থাকে সেক্ষেত্রে সহজে, সব সময় মুভমেন্ট করার জন্য স্যালোয়ার কামিজ পরাই উত্তম। রুচিশীল এবং যা আপনার সাথে মানিয়ে যায় এমন রঙের কামিজ পরা যেতে পারে। কামিজের সাথে অফিস গেটাপে সালোয়ারই মানায় ভালো তবে জিন্সের প্যান্টও পরা যেতে পারে। পোশাক এবং পোশাকের রঙ নির্ধারনের ক্ষেত্রে সব সময় খেয়াল রাখা উচিত তা আফিসের পরিবেশ , পদমর্যাদা , রুচি এবং আপনার সাথে কতটা মানানসই। কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি সেক্টরেই নারী সফলতার সাথে তার যোগ্যতা প্রমাণ করে চলেছে। তাই কখনও তাকে ছুঁটে যেতে হচ্ছে মার্কেটিং এর কাজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আবার কখনওবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোকাবেলা করতে হচ্ছে পরিস্থিতির। এক্ষেত্রে যদি নির্ধারিত পোশাক থাকে তাহলে তা পরা উচিত অথবা নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা যায় তবে জিনস ফতুয়া পরা যেতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে কোথায় , কোন পরিবেশে , কাদের সাথে কাজ করা হচ্ছে তার উপর। এক্ষেত্রে আপনি দিব্যি সেলোয়ার কামিজও পরতে পারেন। আবার কখনও কাজের অংশ হিসাবে শাখা-অফিসগুলি পরিদর্শনের প্রয়োজন হতে পারে সেক্ষেত্রে নিজের এবং পদমর্যাদার স্বকিয়তা বজায় রাখার জন্য শাড়ি পরাই ভালো। তবে তা নির্ভর করছে আপনি কত দূরত্বে যাচ্ছেন , এবং যাতায়াতে কি ব্যবহার করছেন তার ঊপর। আপনি যদি শিক্ষক হয়ে থাকেন তাহলে শাড়ীটাই শোভনীয়। আপনি যদি কোন চ্যানেলে কাজ করেন সেক্ষেত্রে কাজের ধরনের উপর নির্ভর করবে অপনি কোন ধরনের পোশাক পরবেন। যদি রিপোর্টার হন , অথবা বায়িং হাউজ , অথবা কোন র্কপোরেট কাজের দায়িত্বে থাকেন সে ক্ষেত্রে কাজের সুবিধার্থে ও আপনার স্বাচ্ছন্দ্য বোধের জন্য সেলোয়ার কামিজ, জিন্স ফতুয়া পরা যায়। বর্তমানে ব্যাংকিং জবে কিছু কিছু ব্যাংক কর্মক্ষেত্রে তাদের নির্ধারিত পোশাক নির্ধারন করে দিয়েছে। এর বাইরে শাড়ি অথবা সেলোয়ার কামিজ পরা যেতে পরে। আইন পেশায় কর্মক্ষেত্রে সাদা পোশাকাই নির্ধারিত এবং শাড়িই প্রধান্য পায়। যদি কোন গূরুতর কারন বসত তা পরা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সাদা-কালো অথবা খুবই হালকা রঙের শাড়ী পরা যেতে পারে। তবে প্রতিনিয়ত তা পরা ঠিক না। আমাদের দেশের গার্মেন্টস্ শিল্পকে বিশ্বের দ্বার গোঁড়ায় সুখ্যাতি অর্জনের পিছনে দেশের নারীর হাতের আঙুলের সুক্ষ কারুকাজের ভূমিকা সর্বাধিক। আর যে নারীদের হাত ধরে অর্থনীতির এ সাফল্যের আগমন তাদের পোশাকের উপর আমাদের যতœশীল হওয়া উচিত সর্বাগ্রে। এ ক্ষেত্রে যদি গার্মেন্টস্ ফ্যাক্টরির নিজেস্ব পোশাক থাকে যা গার্মেন্টেস্ এর প্রত্যেকটি পর্যায়ে কাজের নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয় তাহলে তা পরেই কাজ করা উচিত। এবং প্রত্যেকটি গার্মেন্টস্ ফ্যাক্টরির উচিত মাল উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে শ্রমিকের নিরাপত্তার স্বার্থে পোশাক নির্ধারন করা। আর অফিসে যাওয়া এবং অফিস চলাকালীন অন্যান্য সময়ে সেলোয়ার কামিজ পরাই সুবিধাজনক। নিজ তথা জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে নারীর অংশ গ্রহণ সদা জাগ্রত থাকুক। কর্মের এ ¯্রােতধারাকে গতিশীল রাখার জন্য রুচিশীল , এবং স্বাচ্ছন্দসই , নিরাপদ পোশাক পরিধানে হওয়া উচিত যত্নশীল।
×