অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কুমিল্লার কারখানায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন মেশিনে এ্যাক্রিলিক সুতার পরিবর্তে কটন সুতা উৎপাদন করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে ১ মাসের উৎপাদন ও বিপণনে সফলতা ফিরে পাওয়ায় মুনাফায় ফিরেছে কোম্পানিটি।
মার্চের শুরুতে কটন ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয় কোম্পানিটির। যে কারণে তিন প্রান্তিক শেষে ১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা মুনাফা করে। নতুন ইউনিটে মাত্র এক মাসের উৎপাদনে লোকসান কাটিয়ে উঠেছে।
হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত আরএন স্পিনিংয়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে কোম্পানিটির পণ্য রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ১৪০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির পণ্য বিক্রি বেড়েছে ৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা বা ৬৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী আরএন স্পিনিংয়ের মুনাফায় উল্লম্ফন ঘটেছে মূলত সর্বশেষ প্রান্তিকে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোম্পানির মোট পণ্য রফতানির পরিমাণ ৯৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যেখানে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরের একই সময়ে মোট রফতানি ছিল ৪৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের তিন প্রান্তিকে মোট পণ্য রফতানি ৫২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ১১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে কোম্পানিটির।
পণ্য রফতানি বাড়ার আগে লোকসানে থাকলেও চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মুনাফায় ফিরেছে আরএন স্পিনিং। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা লোকসান ছিল কোম্পানিটির। বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট লোকসান ছিল ১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা মুনাফা দেখিয়েছে আরএন স্পিনিং, যেখানে আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৬৫ পয়সা। ৩১ মার্চ এর এনএভিপিএস দাঁড়ায় ২৪ টাকা ৮৭ পয়সা।
জানা গেছে, শতভাগ রফতানিমুখী আরএন স্পিনিং বর্তমানে ১৬ ধরনের এ্যাক্রিলিক ও দুই ধরনের কটন সুতা উৎপাদন করে। আগের বছরগুলোয় কোম্পানির উৎপাদন ও রফতানি ধারাবাহিক থাকলেও ২০১৪ সাল থেকে তাদের রফতানিতে ধস নামে।
মূলত, এ্যাক্রিলিকের চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সাল মিলিয়ে তিন বছরে রফতানি কমেছে ৬৫ শতাংশের বেশি। ২০১৩ সালে কোম্পানিটির মোট পণ্য রফতানি ছিল ৩৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আর ২০১৬ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া সর্বশেষ হিসাব বছরে পণ্য রফতানি ১২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় নেমে আসে।
২০১৫ সালের অক্টোবরে কারখানা সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয় আরএন স্পিনিং। মোট ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সম্প্রসারণ কাজ শেষ করার জন্য ১০ মাস সময়সীমা ঘোষণা করে। প্রকল্প ব্যয়ের ৬৫ কোটি টাকা কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ন এবং ৩৫ কোটি টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
২০১৬ সালের শুরুর দিকে সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু করার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে কারখানা উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করতে পারে তারা। পরবর্তীতে অন্যান্য জটিলতা শেষে চলতি বছরের মার্চের শুরুতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে কোম্পানিটি।
২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আরএন স্পিনিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। রিজার্ভ ২৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রতিষ্ঠান ১৩ শতাংশ দশমিক ৬২ ও বাকি ৪৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: