ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফের বাড়ছে রেমিটেন্স, মে মাসে এসেছে সর্বোচ্চ ১২৭ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৫ জুন ২০১৭

ফের বাড়ছে রেমিটেন্স, মে মাসে এসেছে সর্বোচ্চ ১২৭ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসী আয় আবার বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের মে মাসে প্রবাসীরা প্রায় ১২৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছে; যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে একক মাস হিসেবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এটি আগের মাস এপ্রিলের তুলনায় ১৬ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের (জুলাই-মে) হিসাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই কমার হার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশী টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলার ক্রমেই শক্তিশালী হওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। এছাড়া রমজান শুরু হওয়ায়ও প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে চলতি মাসে দেশে বড় অঙ্কের প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিটেন্সের প্রবাহে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এর জন্য কয়েকটি কারণকে দায়ী করে আসছেন বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে রয়েছে-বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে যাওয়া, ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান শক্তিশালী রাখা ও অবৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা অবৈধ উপায়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই সম্প্রতি ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বেশ কিছু উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-প্রবাসী আয় প্রেরণ ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে রেমিটেন্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে র্কমরত সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ দেশের ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধকরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসে প্রবাসীরা ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। সেখানে আগের মাস এপ্রিলে রেমিটেন্স আসে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এছাড়া গত বছরের মে মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইতে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে; যা বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। এর পর আগস্ট মাসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ ও অক্টোবরে আসে ১০১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স। নবেম্বরে তা ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল গত ৭২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর পর ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে। আর জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স আসার গতি আরেকটু বেড়ে আবার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর পরের মাস ফেব্রুয়ারি তা আবার কমে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল প্রায় ছয় বছরের মধ্যে সবনি¤œ। তবে মার্চে আবারও রেমিটেন্স প্রবাহ শত কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মোট রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার; যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩৪৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের এ সময়ে প্রবাসী আয় কমেছে ১৯১ কোটি বা ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এপ্রিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার। এছাড়া বেসরকারী ৩৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, বিদেশী নয় ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার ও বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এছাড়া বরাবরের মতো মে মাসেও সর্বোচ্চ ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ধারাবাহিক বৃদ্ধির পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কমে যায় প্রবাসী আয়। ওই অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
×