ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোরার ছোবলে এখনও নিখোঁজ ৪৫

মহেশখালীর জেলেপল্লীতে থামছে না কান্না

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৫ জুন ২০১৭

মহেশখালীর জেলেপল্লীতে থামছে না কান্না

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ ঘূর্ণিঝড় মোরার ছোবলে পড়ে চারটি ট্রলারের ৪৫ জেলের হদিস মেলেনি এখনও। সপ্তাহ ধরে মৃত বা জীবিত স্বজনকে না পেয়ে ওসব জেলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সারা রাত দরজা খোলা রেখে পথ চেয়ে বসে থাকে নিখোঁজ গৃহকর্তার পরিবারের লোকজন। ১ জুন ভারত থেকে বাংলাদেশে ত্রাণবাহী নৌ-জাহাজ সুমিত্রা ৩৩ জেলেকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করলেও ৪৫ জনের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ ৪৫ জনের বাড়ি মহেশখালীর পুঠিবিলা গ্রামে। গত ২৯ মে মোরার কবলে পড়ে ৪টি ট্রলারে তারা বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায়। এরপর থেকে মহেশখালীর জেলে পল্লীতে কান্নার রোল পড়ে আছে। মহেশখালীর পুঠিবিলা এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় শুরুর অন্তত ৫-৬ দিন আগে পুঠিবিলা এলাকার স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আব্দুস শুক্কুরের মালিকানাধীন এফবি সায়েদ, এফবি ওয়ালিদ-১, এফবি ওয়ালিদ-২, ও একই এলাকার নুরুল আলম প্রকাশ বাঁশি মাঝির মালিকানাধীন এফবি গাউছিয়া নামের ৪টি ফিশিং ট্রলারে করে ৮২ জন মাঝি মাল্লা সাগরে মাছ ধরতে যায়। ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার ছোবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে ৪টি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। জেলেরা সাগরে ভাসমান ও সাঁতার কেটে যে যেদিকে পারে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা চালায়। ১ জুন ভারত থেকে বাংলাদেশে ত্রাণবাহী নৌ-জাহাজ সুমিত্রা ৩৩ জন জেলেকে সাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এদের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে। উদ্ধার করা ৩৩ জনের মধ্যে আবু ছিদ্দিক নামে ১ জেলে মৃত্যুবরণ করে। এদিকে ২ জুন টেকনাফের অদূরে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সদস্যরা হাবিব উল্লাহ, নিয়ামত উল্লাহ, আবু বক্কর ও আব্দু ছালাম নামে আরও ৪ জেলেকে উদ্ধার করে। একই ট্রলারে অবস্থানকৃত অপর ৪৫ জন জেলের ভাগে কী ঘটেছে, তা অজানা রয়ে গেছে তাদের পরিবারের নিকট। সাগরে নিখোঁজ ৪৫ জেলের সন্ধানে স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবাসহ স্বজনরা প্রতিদিন সাগরপাড়ে যাওয়া-আসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারপরও তাদের হারিয়ে যাওয়া বুকের ধনের খোঁজ না পেয়ে প্রায় উন্মাদ বনে গেছেন দুখিনী মা। জানা গেছে, পিতার সঙ্গে পুত্র, নানার সঙ্গে নাতি, মামার সঙ্গে ভাগিনা, ভাইয়ের সঙ্গে ভাই, শ্বশুরের সঙ্গে জামাইসহ একই পরিবারে ৩-৪ জন করে জেলে নিখোঁজ রয়েছে মহেশখালীর পুঠিবিলায়। ১ ও ২ জুন উদ্ধার হওয়া জেলেরা জানান, ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার সিগন্যালের পর অসতর্কতার কারণে ৩০ মে ভোর রাতে মোরার কবলে পড়ে তাদের ৪টি ফিশিং ট্রলার সাগরে ডুবে যায়। এরপর তারা কে কোথায় বা কোন দিকে গিয়ে ঠেকেছে, তাদের আর জানা নেই। নিখোঁজ জেলেরা হলেন, পুঠিবিলা এলাকার আমানুল করিম, ইয়াছিন, নুরুল হোসেন, খলিল আহাম্মদ, কবির আহাম্মদ, শাহাব মিয়া, গোলাম হোছন, শহিদুল্লাহ, মোক্তার, আরফাত, মোলভি জহির, মামুন, মমতাজ বাবুর্চি, শুক্কুর, আমান উল্লাহ, ফরিদুল আলম, মিজান, নজরুল ইসলাম, আমান উল্লাহ, এহেসান, মীর কাশেম ওরফে মেইট্যা, সার্জান, সোহেল, এমরাম, জাবের, আনছার ড্রাইভার, বেলাল, সাবাহ উদ্দিন, নুরুল আহমদ, খুশিল্যা, মলই, নুরুল হোছন, রফিক, কালু মাঝি, আজাদ, শামশুল, এয়াদাত উল্লাহ, ছৈয়দ উল্লাহ, জাবেদ উল্লাহ, ফজল করিম, শহিদুল্লাহ, ইছাহাক, জনি, আলতাজ, মোতালেব, আবু হামিদ ও খায়রুল আমিন।
×