ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদীপারের মানুষের দিনরাত পাহারা

বরিশালে বালুখেকোরা ফের বেপরোয়া

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৫ জুন ২০১৭

বরিশালে বালুখেকোরা ফের বেপরোয়া

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী বালুখেকো একটি সিন্ডিকেট টোকেন দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে প্রচুর রাজস্ব তেমনি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর দুই পারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে ভাঙ্গনকবলিত এলাকাবাসীর মাঝে চলমান তীব্র ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নেয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার খয়রাবাদ নদীর উত্তর নারাঙ্গল এলাকার। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত খয়রাবাদ নদীতে দীর্ঘদিন থেকে মেসার্স অন্যা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। সূত্রমতে, ওই প্রতিষ্ঠানটি কলসকাঠী ইউনিয়নের ৫৬নং উত্তর নারাঙ্গল মৌজার ৪১৯নং দাগ এলাকার নদী ইজারা নিলেও তারা ৪১৮নং দাগ ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে এলাকার তীরবর্তী নিচু এলাকা ভরাটের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় বালু বিক্রি করে আসছে। রাত-দিন সমানভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে অসাধু স্বার্থান্বেষী চক্রের পকেট ভারি হলেও নদীর তীরবর্তী কৃষকের ফসলি জমি ও নদীপারের বাসিন্দারা ভাঙ্গনের মুখে পড়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বালুখেকো চক্র দীর্ঘদিন থেকে সরকারী বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে উপজেলা প্রশাসনকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। অন্যা এন্টারপ্রাইজের ড্রেজারের লোড গণনার কাজে নিয়োজিত শাহাবুদ্দিন মল্লিক তার কাছে থাকা ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদের একটি ফটোকপি দেখিয়ে বলেন, উত্তর নারাঙ্গল খয়রাবাদ নদীর ৪১৯ ও ৪১৮ দাগ তাদের নামে লিজ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪১৮নং দাগ লিজের আওতাভুক্ত নয়। স্থানীয় আব্দুল খালেক জানান, অবৈধ বালুখেকোদের হাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অপরদিকে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মধ্য রাকুদিয়া গ্রামের পাশদিয়ে বহমান সুগন্ধা নদীরপারের মাটিকাটা নিয়ে ইটভাঁটি মালিক-শ্রমিক ও গ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন মুহুর্তে ওই এলাকায় বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষ। এদিকে সংঘর্ষ এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবি ও শনিবার ওই এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। ইটভাঁটি মালিক সমিতির নেতারা তাদের ক্ষমতার দাপটে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেয়ার হুমকি ও এক বাড়িতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইটভাঁটি মালিক-শ্রমিকদের প্রতিহত করতে গত কয়েকদিন থেকে ভাঙ্গনকবলিত নদীপারের মধ্যরাকুদিয়া গ্রামবাসী একজোট হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে দিনরাত সুগন্ধা নদীরপারে পাহারা বসিয়েছেন। মধ্যরাকুদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, মধ্যরাকুদিয়া গ্রামের সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গনকবলিত এলাকার নদীপারের মাটি বেশ কিছুদিন ধরে কেটে নিচ্ছেন দোয়ারিকা এলাকার ভাঁটির মালিকরা। এতে নদী ভাঙ্গন আরও তীব্র হওয়ায় ভুক্তভোগী কয়েক শ’ গ্রামবাসী সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরও গত মঙ্গলবার দোয়ারিকা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের সালাম ব্রিকসের শ্রমিকরা ট্রলার নিয়ে নদীপারের মাটি কাটতে এলে গ্রামবাসী তাদের বাধা প্রদান করেন। এসময় স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আলাউদ্দিন শরীফ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাগর হোসেন খাদেমকে মাটিকাটা শ্রমিকরা ট্রলারে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে কয়েক শ’ গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে মাটিকাটা শ্রমিকদের নদীতে ঘিরে ফেলে তিনটি ট্রলারসহ ১৫ মাটিকাটা শ্রমিককে আটক করে আলাউদিন শরীফ ও সাগর হোসেন খাদেমকে উদ্ধার করেন। ওই ঘটনার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার মুনা ব্রিকসের মালিক বাচ্চু শরীফ ও মাটির দালাল রব শরীফ তাদের দলবল নিয়ে স্থানীয় রিয়াজের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে রিয়াজকে অপহরণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে হামলাকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
×