ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

থিয়েটারেই আমার আনন্দ ॥ মঞ্চদাস রফিক নটবর

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৫ জুন ২০১৭

থিয়েটারেই আমার আনন্দ ॥ মঞ্চদাস রফিক নটবর

মঞ্চদাস রফিক নটবর। একজন মঞ্চকর্মী। পাশাপাশি অসংখ্য টিভি নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। পেশায় ঢাকা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক। গাজীপুরের কাপাসিয়ার সন্তান রফিক নটবর সম্প্রতি ঢাকা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের প্রযোজনা ‘আমি রফিক বলছি’ নাটকে অভিনয়ে মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। মঞ্চের ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। সংস্কতি অঙ্গনে পথ চলা শুরুর দিকটা জানতে চাই। মঞ্চদাস রফিক নটবর : উদীচী, কাপাসিয়া শাখা থেকে পথ চলা শুরু। সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে গণসঙ্গীত করত উদীচী। পরে ঢাকায় এসে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গে যুক্ত হই। সারাদেশে গানের দল নিয়ে ঘুরতাম আমরা। গানের প্রতি ভালবাসা থেকে অভিনয়ে যুক্ত হওয়া ? মঞ্চদাস রফিক নটবর : শুরুর দিকে গানের প্রতি বেশি মনোযোগ থাকলেও পরবর্তীতে উদীচীর নাটক বিভাগে যুক্ত হই। এখানে ড. ইসরাফিল শাহীন এবং আশিষ খন্দকারের তত্বাবধানে প্রযোজনা ভিত্তিক কর্মশালায় অংশ নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিরকুমার সভা’ নাটকে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হই। তবে মহড়া করেও প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারিনি। গাজীপুরে ফিরে গিয়ে উদীচীর সঙ্গে যুক্ত হই। এর মধ্যে পালাকারের অধিকর্তা আমিনুর রহমান মুকুল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার উৎসাহে মাত্র ১২০০ টাকা বেতনে চাকরি নিয়ে থিয়েটার করতে ঢাকায় আসি। বাবার কাছে শিখেছিলাম ‘কাজেই আনন্দ’। থিয়েটারই আমার এখন কাজ। এর পুরোটাই আমার আনন্দ, আমার সৃষ্টির প্রকাশ। থিয়েটারে যুক্ত হলেন কিভাবে? মঞ্চদাস রফিক নটবর : লেখক ও নাট্যকার গোলাম শফিক ভাইয়ের পরামর্শে পালাকারে যোগ দেই। এই দলে ১০ বছরে ‘বিবিসাব’, ‘বাসন’, ‘প্রজ্ঞাপারমিতা’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘ডাকঘর’, ‘কালবেলা’ নাটকে কাজ করেছি। আমিনুর রহমান মুকুল, শামীম সাগর, অনিকেত পাল বাবু, শাহরিয়ার খান রিন্টু, ইকতারুল ইসলাম, সেলিম হায়দারের কাছে অভিনয় শিখেছি। ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ নাটকের নির্দেশক মঞ্চসারথী আতাউর রহমানের সান্নিধ্য পেয়েছি। এরপর চারুনীড়মের ২৬তম ব্যাচে যোগ দেই। অভিনেতা-শিক্ষক গাজী রাকায়েতের সান্নিধ্যে চারুনীড়মে শিক্ষকদের সহচর্য আমাকে ঋদ্ধ করেছে। গাজী রাকায়েত নির্দেশিত ‘অবাক দেশ এবং বুড়ো’ ও ‘শেষ নবাব’ নাটকে অভিনয় করেছি। এখন ঢাকা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের ‘আমি রফিক বলছি’ নাটকে অভিনয় করছি। ২০১৬ সাল থেকে দলের সঙ্গে আছি। এ দলের পথিকৃত প্রিয় মানুষ লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদ ভাইয়ের হাত ধরে এগিয়ে চলছি। ‘আমি রফিক বলছি’ নাটকটি প্রশংসিত হয়েছে? মঞ্চদাস রফিক নটবর : ‘আমি রফিক বলছি’ নাটকটি রচনা করেছেন ওপার বাংলার নাট্যকার মানিক রায় চৌধুরী। নির্দেশনা দিয়েছেন গুণী নির্দেশক গাজী ফারুক। গত বছর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নাটকটি প্রথম মঞ্চায়ন হয়। এটি একক অভিনয়ের হলেও একটি কোরাস টিম যুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে এবং দেশের বাইরে নাটকের১৩টি প্রদর্শনী হয়েছে। নাটকটির ১০০টি প্রদর্শনী করার ইচ্ছা পোষণ করি। নাটকের বিষয়বস্তু কী? মঞ্চদাস রফিক নটবর : দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নিল একটি দেশ, বাংলাদেশ। আজ স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী উদযাপনের প্রাক্কালে আত্মহুতি দেয়া সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শত শত গণকবর আর বধ্যভূমি থেকে জেগে উঠে যদি আমাদের কাছে জবাবদিহিতা চায়, যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা আত্মহুতি দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছি, তার মর্যাদা কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছো? শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে? মোট কথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয়েছে নাটকে। সেটাই নাটকের প্রাণ। একক অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ? মঞ্চদাস রফিক নটবর : অভিজ্ঞতার ঝুড়ি এত বেশি ভারি হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ের গভীর থেকে খুব ভালবাসতে শিখেছি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়- নাটকে আমি যেন আমার পিতৃপুরুষের চরিত্রটিকেই নিজের মধ্যে ধারণ করছি। পাশাপাশি মানুষের তথা দর্শকের ভেতরে এই ভালবাসার প্রভাব ঘটাতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মঞ্চ নাটকের বর্তমান অবস্থা কেমন? মঞ্চদাস রফিক নটবর : আজকের দিনে মঞ্চ নাটকের থিয়েটার দল চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। তবুও আমরা থিয়েটারের মানুষরা আশাবাদী। মঞ্চকে ভালবাসার কারণেই আমরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছি। মঞ্চ নাটকের খরচ উঠে আসে না, তবুও আমরা দর্শকের জন্য কাজ করছি। দেশের সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারাকে আরও বেগবান করার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের বিশ্বাস সুদিন আসবেই। মঞ্চের পাশাপাশি তো টিভি নাটকেও কাজ করছেন? মঞ্চদাস রফিক নটবর : ‘সাপলুডু’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘পাখাল’, ‘ব্রেসলেট’, ‘গোল্ডেন স্বর্ণা’, ‘পাখি এবং মানুষেরা’, ‘কাজী সাহেবের তিন পুত্র’, ‘চৌধুরী বাড়ির তা-ব লীলা’, ‘ফুল, ভ্রমর এবং আততায়ী’, ‘মোহ এবং স্বপ্ন ভঙ্গের একরাত্রি’, ‘বি-পজেটিভ’, ‘বিপদ ডটকম’ প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেছি। তবে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করতে চাই। আপনি তো চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন? মঞ্চদাস রফিক নটবর : ‘কাজের মানুষ’, ‘বাবার জন্য যুদ্ধ’, ‘মাই ডার্লিং’, ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘ভয়ঙ্কর রাজা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি। এছাড়া‘যোগফল শূন্য’, ‘তোফায়েল দ্য টি স্টল বয়’, ‘বোধ’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। পাশাপাশি কিছু তথ্যচিত্রেও কাজ করেছি।আরএফএল বালতি, ম্যাগী নুডুলস, নাটিভো (কীটনাশক) প্রভৃতি বিজ্ঞাপনে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। -সাজু আহমেদ
×