ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৫ জুন ২০১৭

অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

বিপুল অস্ত্র উদ্ধার দেশে এই প্রথম নয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহর থেকে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা উদ্বেগজনক। এর আগে গত বছর উত্তরার দিয়াবাড়ী খাল থেকেও একই ধরনের বহু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। দুটি ঘটনাতেই উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে মিল থাকার পাশাপাশি এগুলো দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে তৈরি হচ্ছে, নাকি জঙ্গীদের কোন অপতৎপরতার জন্য এসব অস্ত্র জমা করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রকেটলঞ্চার ও হ্যান্ড গ্রেনেডের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। একজন মাদক ব্যবসায়ীর দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এত অস্ত্র উদ্ধার রহস্যজনকই বলা যায়। এর আগে হবিগঞ্জের নির্জন বনাঞ্চল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও বিপুলসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। বড় ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা একদিকে যেমন মানুষকে শঙ্কামুক্ত করে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়, অন্যদিকে আবার এ বাস্তবতাও সামনে নিয়ে আসে যে কোথায় না জানি অবৈধ অস্ত্রভাণ্ডার মজুদ করা আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার সন্ধান এখনও পাচ্ছে না। অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাব আকস্মিকভাবেই এসব উদ্ধার হচ্ছে। আকস্মিক খবরের ভিত্তিতে নয়, অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নিয়মিত বা রুটিন অভিযান পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছিত। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার ক্ষেত্রে যেমন দিয়াবাড়ি বা পূর্বাচল খালের মতো আরও অনেক খাল, জলাশয়ে হঠাৎ হঠাৎ অভিযান পরিচালিত হওয়া দরকার। এ থেকে অস্ত্রবাজরা বার্তা পাবে। বড় ধরনের অস্ত্র মজুদ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে। সন্দেহজনক লেক বা পুকুর জলাশয় যদি নির্জনতম অঞ্চলে থাকে তবে সেখানে সন্দেহজনক মানুষের গতিবিধি নজরদারির আওতায় আনা জরুরী। পূর্বাচল লেকে নিশ্চয়ই একদিনে এত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হয়নি। আমাদের গোয়েন্দারা তৎপর হলে তাদের নাকের ডগা দিয়ে এত অস্ত্র এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পরিবহন করা কি সম্ভবপর হতো? গুলশানের হলি আর্টিজানের হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে অপারেশনে ব্যবহৃত হতে পারল সেটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে আছে। মোট কথা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নিয়মিতভাবে রুটিন অভিযান পরিচালিত হওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনি সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনের তল্লাশিও জোরদার করা সমীচীন। অস্ত্র কারা মজুদ করে? অস্ত্র তো আর কোন গঠনমূলক ভাল কাজে ব্যবহৃত হয় না। অস্ত্র ব্যবহার করা হয় ধ্বংসের জন্য, মানব হত্যার জন্য। অস্ত্রের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটনের মধ্য দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা কঠিন নয়। ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে জনমনে অনাস্থা, ভীতি তৈরি হয়। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বিপন্ন হয় ওঠে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে খসড়া রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক জঙ্গী আস্তানার সন্ধান এবং সেগুলো থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। আইজিপি বলেছেন, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে এসব অস্ত্র মজুদ করা হয়েছিল। আমরা আশা করব, গোয়েন্দা সংস্থা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে বিশেষ কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
×