ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

এ্যাবেনোমিক্সের যুগে জাপানের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৪ জুন ২০১৭

এ্যাবেনোমিক্সের যুগে জাপানের অর্থনীতি

সম্প্রতি জাপানজুড়ে বহুল আলোচিত শব্দ এ্যাবেনোমিক্স। জাপান বাদেও সেদিকে পাখির চোখে তাকিয়ে আছেন সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর সেটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির যে কোন বাঁকের প্রতি বিশেষজ্ঞরা আগ্রহী হবেন সঙ্গত কারণেই। এ্যাবেনোমিক্স শব্দটির উদ্ভব মূলত জাপানের অর্থনীতিকে ঘিরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিনজো এ্যাবের পরিকল্পনা থেকে। আর এর সুফলও মিলছে বাস্তবে। গত এক দশকের মধ্যে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন সবচেয়ে বেশি। বিশেষত এ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়িয়ে গেছে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা। বছরের প্রথম কোয়ার্টারে এই বৃদ্ধি ০.৫% যেখানে এক বছরে মোট প্রবৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার ছিল ২.২%। এই তথ্য জানাচ্ছে যে, জাপান গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে রফতানির প্রসার, দেশের অভ্যন্তরে অর্থ প্রবাহের বৃদ্ধি এবং আগামী ২০২০ এর টোকিও অলিম্পিককে সামনে রেখে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। সম্প্রতি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দরপতনে রফতানিকারকরা লাভবান হয়েছেন নানাভাবে। একদিকে তাদের পণ্যের মূল্য যেমন বেশি পেয়েছেন, বাজার প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে গেছেন তারা তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার অর্জনও বেশি। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শিনজো এ্যাবে জাপানি ক্রেতাদের প্রতি মুক্তহস্তে ব্যয়ের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন এই বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে, তার সেই আহ্বান কাজে লেগেছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে ঘিরে মিঃ এ্যাবের মহাপরিকল্পনা যা ‘এ্যাবেনোমিক্স’ নামে অভিহিত হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য গত দুই দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জড়তা কাটিয়ে নতুন গতি সঞ্চার। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ‘মটেলি ফুল’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড ক্যু বলেন, এই উপাত্ত প্রমাণ করে যে, এ্যাবেনোমিক্স জাপানের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ধনাত্মক ভূমিকা পালন করছে। ক্যু আরও বলেন, ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে উন্নয়নের এই গতি অব্যাহত থাকবে।’ সেই সঙ্গে তিনি এ্যাবেকে সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে, ‘মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কের ফলে যদি ভবিষ্যত ডলারের আরও দরপতন ঘটে তবে অর্থনৈতিক এই প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’ জেমস কোমির অপসারণকে ঘিরে বিতকর্, ট্যাক্স এবং পুনর্গঠন সংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ইতোমধ্যেই। মনে রাখতে হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকায় মার্কিন শেয়ার বাজার ও ডলারের মূল্য এখন অন্য যে কোন প্রধান মুদ্রার তুলনায় বিগত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ্যাবেকে বিবেচনায় রাখতে হবে এই দরপতন তার জন্য হতে পারে বড় আঘাত। গত দুই দশকের অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে শিনজো অ্যাবে তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার হাত ধরে জাপান প্রবেশ করল অর্থনীতির এক নতুন যুগে। যা পরিচিতি পেয়েছে এ্যাবেনোমিক্স নামে।বাস্তবতা বলছে এই পরিকল্পনার সুফলও পাচ্ছেন সাধারন জাপানিরা। কিন্তু এ নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। এ্যাবেকে একদিকে মোকাবেলা করতে হবে বৈশ্বিকসহ অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জাপানের অন্যতম বৃহৎ বানিজ্যিক অংশিদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলী মোকাবেলার ওপর নির্ভর করছে তার সাফল্য। তাকে বিবেচনায় রাখতে হবে এশিয়ার উদিয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোকে। শুরুটা যদি দিনের পূর্বাভাস হয়ে থাকে তাহলে বলতেই হয়, শিনজো এ্যাবের হাত ধরে এ্যাবেনোমিক্সের যুগে পা রাখা জাপান সাফল্যের আশা করতেই পারে।
×