ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে স্থিতিশীল দ্রব্যমূল্য

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৪ জুন ২০১৭

রমজানে স্থিতিশীল দ্রব্যমূল্য

বছর ঘুরে পবিত্র রমজান মাস উপস্থিত। এ মাস এলেই লোকজন সাধারণ ভোগ্যপণ্য আগেই ক্রয় করে। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ জনগণের মোটামুটি ধারণা হয়েছে এ মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। তাই এ বছর সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি-রফতানি অফিসে ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ফলে ব্যবসা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এসেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘রমজান মাস উপলক্ষে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে তাই এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।’ একশ্রেণীর কালোবাজারী অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ান। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে খাদ্যপণ্য মজুদ ও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ক্রেতা সাধারণকে ঠকিয়ে ও সঙ্কটের আবহ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা অমানবিক, ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শামিল। দেশের সুযোগসন্ধানী মজুদদার, মুনাফাখোর ও অসৎ ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দেশের সীমিত আয়ের মানুষের জীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বাজার-প্রক্রিয়াকে রক্ষার জন্য ইসলাম মজুদদারি, মুনাফাখোরি, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও দালালির মতো কার্যক্রমকে অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন পাস করেছে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আগামী জুলাই থেকে আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে। নতুন ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইনের কারণে পণ্যমূল্য বাড়বে না বলে মনে করছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে হিসাব রাখলে এবং উপকরণ কর রেয়াত নিতে পারলে বরং কিছু ক্ষেত্রে পণ্যমূল্য কমতে পারে। নতুন ভ্যাট আইন দেশের ভোক্তাদের জন্য ‘সহনীয় হবে’ মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘ভ্যাটের পরিমাণ ১৫ শতাংশের কম নির্ধারণ করা হবে। ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর কিছু থাকবে না। ভ্যাটের হার কমলেও পরিধি বাড়ার কারণে ভোক্তাদের ওপর কোন চাপ পড়বে না। এ খাতে সরকারের আয়ও বাড়বে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, নতুন ভ্যাট আইনে মূল্যস্ফীতি হওয়ার সুযোগ নেই। এই আইন বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জনগণের মাঝে মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে মূল্য না বাড়িয়ে দিতে পারে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সরকার কর্তৃক ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ-প্রক্রিয়াকে আরবীতে ‘তাসয়ির’ বলা হয়। ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা, জবাবদিহি ও জনসেবামূলক ভূমিকা মাহে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য সমাজের প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীকে সৎমনোভাবাপন্ন, নির্লোভ, মহৎপ্রাণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা দরকার। মজুতদারি, ধোঁকাবাজি, সুদি লেনদেনসহ সব ধরনের প্রতারণামূলক আদর্শবিবর্জিত কার্যাবলী রোধ করা প্রয়োজন। রমজানের প্রাক্কালে তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্যের স্ফীতি ঘটাতে না পারেন সে ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ‘ন্যায্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সেল’ গঠন করে শহর, নগর, বন্দর, গ্রাম সর্বত্রই সর্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারির আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে তাদের কার্যকলাপ রোধে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। ফলে সাধারণ লোকজন নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য ন্যায্যমূল্যে পাবে বলে আশা করা যায়।
×