ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

ঈদ বাজারকে ঘিরে চাঙ্গা অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৪ জুন ২০১৭

ঈদ বাজারকে ঘিরে চাঙ্গা অর্থনীতি

প্রতিবছরই বড় হচ্ছে দেশের ঈদের অর্থনীতি। বাড়ছে এই অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। ঈদে অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, শিল্প উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে। এই উৎসবে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে আর্থিক লেনদেনসহ গোটা অর্থনীতি তথা দেশজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় প্রভাব পড়ে। বর্তমানে গোটা অর্থনীতি আবর্তিত হচ্ছে ঈদ বাজারকে ঘিরে। ঈদের সময় সারাদেশেই অর্থের প্রবাহ বাড়ে। ছোট ছোট খাত হলেও সব মিলিয়ে তা বিপুল পরিমাণের অর্থনীতিতে রূপ নেয়। ঈদ এবং রোজাকে কেন্দ্র করে শহর বা গ্রামের উভয় এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় ব্যয় করার জন্য দেশের সবাই কিছু না কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখে, অর্থের জোগান রাখে। ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকারও প্রতিবছর বাড়ছে। ঈদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এতদিন পোশাক, খাবার এবং জুতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন মানুষ ঘরের আসবাবপত্র, ফার্নিচার সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক পণ্য কিনছে। একইভাবে মানুষ ঈদ উপলক্ষে একে অন্যকে উপহার দিচ্ছে বা পাঠাচ্ছে। ব্যয় করছে সাধ্য অনুযায়ী। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চাঙ্গা হয়ে উঠেছে অর্থনীতি। শহর-গ্রামে বইছে কেনাকাটার আমেজ। রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনের জোয়ার উঠেছে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী টাকার প্রবাহ বাড়ে। এই টাকার বড় অংশ ব্যয় হয় খাবার-দাবার, পোশাক, ভ্রমণ, ভোগ-বিলাস এবং প্রসাধনীতে। ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির এই বিস্তার এখন শাড়ি থেকে শুরু করে গাড়িতে গিয়েও ঠেকেছে। ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার ৬০ হাজার কোটি টাকা। রোজার শুরুতেই ব্যাপক হারে বেড়েছে ব্যাংকিং খাতে লেনদেন। একই সঙ্গে রেকর্ড গতিতে দেশের অর্থনীতিতে জমা হয়েছে প্রাসীদের রেমিট্যান্স। ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে পণ্য উৎপাদনের ধুম পড়েছে। ঈদের কারণে এগুলোর বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। এ চাহিদা মেটাতে ওই এলাকায় তাঁত মালিক ও তাঁতীদের ঘুম নেই। বগুড়া, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের লুঙ্গি ও তাঁতের কাপড় সারাদেশে ব্যাপকভাবে চলছে বলে এদের হাতেও কাজের চাপ। মুন্সীগঞ্জের রুহিতপুরী তাঁতের কাপড়ের চাহিদাও তুঙ্গে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের তাওয়ালের চাহিদা ঈদের সময় ব্যাপক। নরসিংদীর বাবুরহাটে ক্রেতার চাপ সামলাতে হচ্ছে একই অবস্থা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তাঁতের পাইকারি বাজারে। রূপগঞ্জের রূপসীর জামদানি শাড়ি সারাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও চলে যাচ্ছে এই ঈদকে কেন্দ্র করে । তাছাড়া গার্মেন্টস পল্লীতে ঈদকে সামনে রেখে চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কারখানার কারিগররা রাত-দিন বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত। কারও যেন একটু দম ফেলার ফুরসত নেই। মেয়েদের থ্রি-পিস, ছেলেদের প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট থেকে শুরু করে ছোটদের পোশাক সবকিছুই তৈরি হচ্ছে এ পল্লীতে। এ ছাড়া সেখানকার পাইকারি পোশাক মার্কেট ও শোরুমলগুলোতে ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের বাজার ধরতে প্রায় ব্যবসায়ীরা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পিস পাঞ্জাবি তৈরি করেন। এই পাঞ্জাবি তৈরি করতে এক কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করতে হয়। আর এই বিনিয়োগের ৮০ শতাংশ টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন শুধু মুনাফার আশায়। বাকি ২০ শতাংশ আগের বছরের লাভের থেকে বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা ।
×