ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আল-আমিন

বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একদিন

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৪ জুন ২০১৭

বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একদিন

বিশ^বিদ্যালয় মানেই ক্লাস, পরীক্ষা,এ্যাসাইনমেন্ট, টিউটরিয়াল প্রেজেন্টেশন আর পরীক্ষার চাপ। একেবারে যান্ত্রিক জীবন। কিন্তু এসবের পাশাপাশি একটু সময় পেলেই মন আকাশে উড়তে চায়। একাডেমিক ব্যস্ততার পাশাপাশি নানা ধরনের কর্মকা-ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মুখরিত করে তোলে বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। রংপুর নগরী থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ^বিদ্যালয়টি প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রীর পদচারণায় মুখরিত। সারাবছর ধরেই এই ক্যাম্পাসে থাকে কোন না কোন অনুষ্ঠান। যেমন-বইমেলা, বৈশাখী মেলা, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সময়ে র‌্যাগ-ডে উপলক্ষে কনসার্টের আয়োজন, জব ফেয়ার, ক্যারিয়ার আড্ডাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। এছাড়া ডিবেটিং ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, থিয়েটার ক্লাব, কালচারাল ক্লাব ও ফটোগ্রাফি ক্লাবের নিয়মিত কার্যক্রম তো আছেই। ্ক্যাম্পাসে যে আড্ডা, সেই আড্ডার বেশিরভাগ আলোচনাই ক্যারিয়ারভিত্তিক। তবে সেখানে সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকসহ অন্যসব বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়। আর এই আড্ডাই জানাশোনার পরিধিকে আরও প্রসারিত করে তোলে। বিকেল হলেই বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে হারমোনিয়াম নিয়ে বন্ধুরা মিলে একত্রিত হয়। গাইতে থাকে বেসুরো গলায় অসংখ্য গান। কেউবা বাঁশি নিয়ে এক কোণায় বসে আপন মনে বাজাতে থাকে। লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালীদ হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর গল্প না দিলে যেন পড়াশোনার প্রতি আগ্রহই বাড়ে না। বিভাগ থেকে বছরে দুই একটা ট্যুর ছাড়া তেমন কোন ট্যুর হয় না। অবশ্য মাঝে মধ্যে সেটাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই বিশ^বিদ্যালয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মাধ্যমে মনটাকে পড়াশোনার প্রতি দৃঢ় করতে বিকেল হলেই ছুটে আসি এই সবুজ ঘেরা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। শুধু যে আড্ডা দেই এমনটা নয়। এই আড্ডার মাঝে উঠে আসে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়। একই বিভাগের শিক্ষার্থী সবিতা রায় ও ওমর ফারুখ বলেন, ‘নতুন বিশ^বিদ্যলয় হিসেবে ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়ার মতো যথেষ্ট সুন্দর জায়গা আছে। সুযোগ পেলেই বন্ধুরা মিলে গান করি, কবিতা আবৃত্তি করি এসব নিয়ে আড্ডাতে মেতে উঠি সবাই। আড্ডার মাধ্যমে একজন অপর জনের কাছ থেকে অজানাগুলো জেনে নেয়। আমি মূলত ক্যাম্পাসের আড্ডাকে বিনোদনের মাধ্যমগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট মনে করি। কারণ আমি এই আড্ডার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারছি, যা কখনও স্কুল কলেজে শিখতে পারিনি। এভাবেই যেন বন্ধুদের সঙ্গে হাসি খুশি আর আনন্দে কাটাতে পারি প্রত্যেকটা দিন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রুকুজ্জামান বলেন, ক্লাসের পড়াশোনার পাশাপাশি সময় পেলেই রুমে না থেকে ছুটে আসি ক্যাম্পাসে সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। শুধু পড়াশোনা করি এমনটা নয় সবাই মিলে আড্ডাও দেই। মূলত সব সময় রুমে বসে পড়া ভাল লাগে না, তাই সবাই মিলে আড্ডা দেয়ার জন্য আসি সেখানে অনেক কিছু জানা হয় যা রুমে থাকলে সম্ভব নয়। তাই নতুন কিছু জানার আগ্রহ থেকেই সবাই মিলিত হই ক্যাম্পাসে। মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আর এই আলোচনায় সামাজিক, রাজনৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে নতুন ধারণা নেয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছুই উঠে আসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মাধ্যমে। পক্ষে-বিপক্ষে চলে আলোচনা। সব বন্ধু একসঙ্গে থাকা মানে অফুরন্ত আনন্দ, এর মাঝে অজানা থেকে কিছু জানার অন্যতম জায়গা হলো আমাদের সবুজ শ্যামল ক্যাম্পাস। এই সকল শিক্ষার্থীর মতো বিশ^বিদ্যালয়ে প্রায় প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিকেলে এমনই ভাবে পড়াশোনা, আড্ডা,গান,বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় নিমগ্ন হয়ে উঠে এই সবুজ ঘেরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। যেমন- প্রশাসনিক ভবনের চতুর্দিকে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী পাশে, ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এবং বকুলতলা ও কৃষ্ণচূড়া রোডের পাশে। আর এই শত শত শিক্ষার্থী বিকেলের আড্ডায় যেন মুখরিত হয়ে উঠে উত্তরের আলোকবর্তিকা বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হয়। তাহলে তার চেষ্টাও অনেক গুণ বেড়ে যায়। ঠিক এমনি ভাবে প্রত্যেকে এক একটা লক্ষ্য নিয়েই এই ক্যাম্পাসে আসে। কেউ চেষ্টা কম করে না বটে কিন্তু কারও চেষ্টা করার প্রতি আগ্রহটা কিছু কম থাকার কারণে হয়ত তার লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশ^বিদ্যালয় জায়গাটা হলো সার্বজনীন সেখানে শুধু ক্লাসের পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার মাধ্যমে অনেক অজানাকে জানতে চায় তারা। বিশ^ সম্পর্কে জানতে এবং নিজের দেশকে নিয়ে ভাবতে নিজের সংস্কৃতিকে আরও উন্নত করতে এসব তরুণের ভাবনা হলো যে, “আমরা পড়বো,জানবো, শিখবো, নিজের দেশের জন্য সর্বদা কিছু একটা করবো।”
×