ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রি

কাক্সিক্ষত দরপ্রস্তাব না আসায় হতাশ ট্রেকধারীরা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৪ জুন ২০১৭

কাক্সিক্ষত দরপ্রস্তাব না আসায় হতাশ ট্রেকধারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের শেয়ার দরে কাক্সিক্ষত দর প্রস্তাব আসেনি। যদিও কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের দরপ্রস্তাবের প্রক্রিয়া শেষ করে ডিএসই। বৃহস্পতিবার সম্ভাব্য কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের দরপ্রস্তাবের সময়সীমা শেষ হয়েছে। ডিএসইর পক্ষ থেকে বিস্তারিত দর না জানানো হলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে কাক্সিক্ষত দর আসেনি। ফলে ডিএসইর ট্রেকধারীরা খুবই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। কারণ যেখানে বৃহস্পতিবারে লেনদেন শুরু হওয়া নূরানী ডাইংয়ের দর ২০.৮০ টাকায় শেষ হয়েছে। এছাড়া তল্পি-তল্পাহীন অনেক কোম্পানিরই দর ৫০ টাকার ওপর রয়েছে। সেখানে ডিএসইর মতো প্রতিষ্ঠানের এমন দরে হতাশ হয়েছেন অনেক ট্রেক হোল্ডার। একাধিক ট্রেকধারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেখানে নামসর্বস্ব কোম্পানি বাজারে আইপিও ছাড়লেও ৫০ গুণের বেশি আবেদন পড়ে। তালিকাভুক্তির পরেই দর ওঠে ইস্যুমূল্যের চেয়ে কয়েকশ গুণ। সেখানে ডিএসইর মতো প্রতিষ্ঠান যার ১২শ কোটি টাকার ওপর স্থায়ী আমানত এবং দুটির বেশি বিল্ডিং রয়েছে, তার প্রতিটি শেয়ারের দর ২০ থেকে ৩০ টাকা হবে। সেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না। এটি কোম্পানি হিসেবে বাজারে ছাড়লেও ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকায় শেয়ার দর উঠবে। তাই ডিএসইর উচিত হবে শেয়ার বিক্রির সময় আরও বাড়ানোর আবেদন করা। পানির দরে কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে এই শেয়ার তুলে দেওয়া যায় না। নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, স্টক এক্সচেঞ্জটির শেয়ারের জন্য লংকাবাংলা ও ডেল্টা লাইফের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় কনসোর্টিয়াম ও স্থানীয় দুটি ব্যাংকই বেশি দরপ্রস্তাব করেছে। এদিকে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দিয়ে কার্যত সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাব করেছে ব্রামার্স এ্যান্ড পার্টনার্স এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন বিদেশী কনসোর্টিয়াম। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ডিএসই শেয়ারের জন্য সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩০ টাকা। অন্যদিকে সর্বনিম্ন দরের সুনির্দিষ্ট অংক নির্ধারিত না হলেও তা ২০ টাকার কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ে সর্বোচ্চ দরপ্রস্তাব করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকটি কোনো কনসোর্টিয়ামের অংশ হিসেবে দরপ্রস্তাব করেনি। কৌলশগত বিনিয়োগকারী হিসেবে তারা স্টক এক্সচেঞ্জটিতে কী মূল্যসংযোজন করবে, সে বিষয়ে কোনো প্রস্তাবের কথাও জানা যায়নি। সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারা স্টক এক্সচেঞ্জটির ২ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনবে না। প্রস্তাবিত দরের মধ্যে এর পরই রয়েছে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নেতৃত্বাধীন স্থানীয় কনসোর্টিয়ামটি। সেখানে স্থানীয় অন্তত সাতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে। এগুলো হলো, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লংকাবাংলা ফিন্যান্স, পূবালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, শান্তা হোল্ডিংস, ইউনাইটেড হোল্ডিংস ও র‌্যাংগস মটরস। তারা ডিএসইর প্রায় ১৭ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব গৃহীত হলে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে তারা কি কি করবে এরও একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় কনসোর্টিয়াম হিসেবে অনুমোদন পেলে আমরা ডিএসইর পর্ষদে বিদেশী কোন এক্সপার্টকে বসাতে চাই, যিনি স্টক এক্সচেঞ্জটির পরিকল্পিত উন্নয়নযজ্ঞ বাস্তবায়নে সহায়ক হবেন। ডিএসইর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, গত এক বছরে তিনটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কৌশলগত বিনিয়োগ সম্পর্কে সমঝোতা স্মারক সই করেছে তারা। এগুলোর নেতৃত্বে ছিল ব্রামার্স এ্যান্ড পার্টনার্স এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। পরবর্তীতে এর মধ্যে লংকাবাংলা ও ডেল্টা লাইফ একত্রিত হয়ে দেশী বিনিয়োগকারীদের আরও বড় কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে। বৃহস্পতিবার দরপ্রস্তাবে তৃতীয় অবস্থানে ছিল ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড। স্থানীয় এ বাণিজ্যিক ব্যাংকটিও কোনো কনসোর্টিয়ামের অংশ হিসেবে যায়নি। ২৫ টাকা দরে তারা ডিএসইর ২ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কিনতে চায়। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারী হিসেবে কার্যত ব্রামার্স এ্যান্ড পার্টনার্স নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামটির নাম উঠে এসেছে। বাংলাদেশে নিবন্ধিত ব্রামার্স এ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ছাড়া সেখানে সবই বিদেশী প্রতিষ্ঠান। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সময় গেল বছর কনসোর্টিয়ামটির অংশ হিসেবে নাসডাক, বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (সিডিসি), জার্মান কেএফডব্লিউ, হংকংভিত্তিক কিংসওয়ে ক্যাপিটালের নামও প্রকাশ করেছিল ডিএসই। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ঠিক কী প্রস্তাব করেছে, এ বিষয়ে কোন পক্ষই কিছু জানাতে রাজি হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ প্রস্তাবের অংশ হিসেবে বর্তমান অবস্থায় প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ২০ টাকার বেশি দাম পাবে না ডিএসই। এ হিসাবে স্টক এক্সচেঞ্জটির শেয়ারের জন্য কার্যত এটিই সর্বনিম্ন দর হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ৩০ জুনের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির চুক্তি করতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে সময় বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত হিসাবে রাখা ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে। বর্তমানে ডিএসইর অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার ৫০০ এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রায় ৪৫ কোটি শেয়ার বিক্রির বাধ্যবাধকতা আছে। অন্যদিকে দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) প্রায় ১৫ কোটি ৮৭ লাখ শেয়ার বিক্রি করতে হবে।
×