ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্মাদনার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আজ

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৪ জুন ২০১৭

উন্মাদনার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উন্মাদনার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আজ। এটি কেবল একটি ম্যাচ নয় গোটা ক্রিকেট বিশ্বই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়া। গ্রেট ইমরান খানের মতে ব্যাট-বলের লড়াই ছাপিয়ে যেখানে স্নায়ুর চাপটাই বড় হয়ে ওঠে। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে উপমহাদেশের শক্তিধর দুই দেশের বৈরী সম্পর্ক পুরনো। মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর দীর্ঘদিন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর-উত্তেজনা যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নয়। এই অবস্থায় বিশ্বকাপসহ আইসিসির ইভেন্টগুলোতে দু’দেশের ক্রিকেট ঘিরে চলে তুমুল উন্মাদনা, ক্রিকেট ছাপিয়ে সেটি হয়ে ওঠে বাড়তি কিছু। বার্মিংহামের এজবাস্টনে তেমনি এক উন্মাদনার ওয়ানডেতে মুখোমুখি বিরাট কোহলি ও সরফরাজ আহমেদের দল। সাবেক ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী প্রতিপক্ষকে পাত্তা দিচ্ছেন না। সাম্প্রতিক নৈপুণ্যের বিচারে কোহলিরা ম্যাচটা অনায়াশে জিতবে বলে মনে করেন ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’। অন্যদিকে পাকিস্তান গ্রেট ইনজামাম-উল হক বলেছেন, তার দল কেবল ভারত ম্যাচটা নয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিততেই ইংল্যান্ডে পা রেখেছে। যিনি আবার বর্তমানে প্রধান নির্বাচক। আয়োজনটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বলেই শহীদ আফ্রিদির ফেবারিট পাকিস্তান, সাবেক স্পিডস্টার শোয়েব আকতারও আশাবাদী, আশাবাদী মোহাম্মদ আমিরের মতো তুখোড় পেসার আছে বলে। আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারত তৃতীয় স্থানে, শীর্ষ দুই দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান সামান্য। অন্যদিকে আটে থাকা পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশেরও পেছনে। তবে র‌্যাঙ্কিংয়ের অবস্থান দিয়ে দু’দলের লড়াইয়ের চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। কোহলির নেতৃত্বে দেশে-বিদেশে দুর্দান্ত খেলছে ভারত। টেস্টে এক নম্বরে উঠে এসেছে, ওয়ানডেতেও শক্ত অবস্থানে। অন্যদিকে গত দুই বছর রঙিন পোশাকে পাকিস্তানের অবস্থা ভাল যাচ্ছিল না। সম্প্রতি আজহার আলিকে সরিয়ে সরফরাজকে অধিনায়ক করা হয়েছে। আরব আমিরাত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে দারুণ দুটি সাফল্যের স্মৃতি সঙ্গী করে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। মোহাম্মদ আমির, জুনায়েদ খান, ওয়াহাব রিয়াজ, হাসান আলিদের নিয়ে পেস আক্রমণ দুর্দান্ত। ব্যাটিংয়ে আহমেদ শেহজাদ, আজহার আলি, বাবর আজম, সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ আর শোয়েব মালিক। ভারতের ব্যাটিং বরবরাই বিশ্বসেরা। সুপার কোহলির সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, আইপিএলে ভাল করে ফিরে এসেছেন দিনেশ কার্তিক। টিম-ইন্ডিয়ার বোলিংও এখন বেশ শক্তিশালী আর বৈচিত্র্যপূর্ণ। পেস আক্রমণে ভাল করছেন ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ। স্পিনে রবীন্দ্র জাদেজা ও রচিচন্দ্রন অশ্বিনের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সব মিলিয়ে লড়াইটা হতে পারে ভারতীয় ব্যাটিং ও পাকিস্তানের পেস বোলিংয়ের মধ্যে। সেই ১৯৭৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মুখোমুখি ১২৭ ওয়ানডের ৭২টি জিতে এগিয়ে পাকিস্তান। তবে বিশ্বকাপে ছয় দেখায় এখন পর্যন্ত জয় নেই তাদের। আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চার দেখায় তিন জয় পাকিস্তানের। এই দিকটাই ইনজামাম-সরফরাজদের মানসিকভাবে এগিয়ে রাখছে। ওয়ানডেতে শেষ পাঁচ দেখায় তিনবার জয় ভারতের। ২০১৫ বিশ্বকাপে এ্যাডিলেডে সর্বশেষ ম্যাচটাতে ৭৬ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছিল ধোনির দল। ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারেন শোয়েব মালিক, যিনি এর আগে তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দু’দলের ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরির মালিক তিনিই (২০০৯, সেঞ্চুরিয়নে ১২৮ রান)। সেই ম্যাচে ৫৪ রানে জিতেছিল পাকিস্তান। এই নিয়ে এজবাস্টনে (ভেন্যু) তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। অধিনায়ক হিসেবে কোহলি-সরফরাজ দু’জনের জন্যই এটি প্রথম আইসিসির টুর্নামেন্ট। ভারত অধিনায়ক হিসেবে কোহলি ২০০৮ সালে অনুর্ধ-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন। একইভাবে পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক সরফরাজ ২০০৬ সালে অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে ভারতকে হারিয়েই কাপ জিতেছিলেন। এবার ভারতীয় দলের মোট ৯ জন ক্রিকেটার গতবার (২০১৩) চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে ছিলেন। তারা হলেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, দীনেশ কার্তিক, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব। অন্যদিকে গতবার পাকিস্তানের হয়ে খেলা কেবল শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ হাফিজ আর জুনয়েদ খানই কেবল এবার স্কোয়াডে আছেন।
×