ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শহরে হাঁটু পানি ॥ ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৪ জুন ২০১৭

শহরে হাঁটু পানি ॥ ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ একরাতের বৃষ্টিতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। শহরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সরকারী-বেসরকারী বাসভবনসহ পৌর এলাকার বেশিরভাগ রাস্তায় জমেছে হাঁটু পানি। ভেসে গেছে মাছের ঘের। কোথাও কোথাও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। শহরবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুুপুর থেকে রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। বিমানবাহিনীর যশোরের মতিউর রহমান ঘাঁটির আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গেছে, এদিন যশোরে ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায়ও টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। শনিবার যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, প্রবল বৃষ্টিতে ডুবে গেছে শহরের বেশিরভাগ এলাকা। বিশেষ করে শহরের দক্ষিণাংশ শংকরপুর, বেজপাড়া এবং পশ্চিমাংশ খড়কি-কারবালা এলাকার বহু বাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ঘরের ভেতর হয়ে পড়েছেন জলবন্দী। এসব এলাকার বাসাবাড়ির রান্নাঘরে পানি ওঠায় বেশিরভাগ বাড়িতে রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে গেছে। অতিবর্ষণে ভেসে গেছে চাঁচড়া এলাকার অধিকাংশ মাছের ঘের। শুধু ঘের নয়, এলাকার বিভিন্ন স্কুল মাঠে পানি থৈ থৈ করছে। দেখলে মনে হয় সমস্ত অঞ্চল নদী হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভারি বর্ষণে শহরের বেজপাড়া, বারান্দিপাড়া, বকচর, শংকরপুর ইছাহাক সড়ক, মিশনপাড়া, সিএ্যান্ডবি রোড, পুরাতনকসবা টালিখোলা, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়া, চোপদারপাড়া, কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, খড়কি, চোরমারা দীঘিরপাড়, ষষ্টিতলাপাড়া, বাগমারাপাড়া, এমএম কলেজ এলাকা, খড়কী, সার্কিট হাউস রোড, টিবি ক্লিনিকপাড়া, নাজিরশংকরপুর, ছোটনের মোড়, আনছার ক্যাম্প মোড়, বারান্দীপাড়া কদমতলা, লিচুবাগান এলাকা, আবরপুর মোড় এলাকার খোয়ার রাস্তা এলাকা, বিশ্বাস পাড়াসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচে পড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। শহরবাসীর বক্তব্য-গোটা শহরের পানি শংকরপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হরিণার বিলে পড়ে। সেখান থেকে মুক্তেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ড্রেন দখল, ড্রেনের শেষ মাথার সরু পাইপ এবং হরিণার বিলে নানাভাবে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়াতেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এছাড়া পৌরসভার ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পানি বিকল্প দিক দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরীতে নিষ্কাশনের জন্য গত বছর জেলা প্রশাসক নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু সে বিষয়ে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় এ তিন ওয়ার্ডের পানিও জমে এ এলাকায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পানি নিষ্কাশনে যশোরের বেশিরভাগই আরসিসি ড্রেন হলেও শেষ মাথায় তা হয়েছে আরসিসি পাইপ ড্রেন। পানি প্রবাহের উৎস্য মুখে বৃহদাকার ড্রে আর নির্গমন মুখে সরু পাইপ। এটা কোন ধরনে উন্নত প্রকৌশল পরিকল্পনা এ প্রশ্ন শহরবাসীর। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, শংকরপুর বাস টার্মিনালের আগে ড্রেন থেকে শেষ মাথায় সরু পাইপের সংযোগস্থান তিন ফুট নিচে। সেখানে নির্মাণের সময় পাইপের নিচে সিসি ঢালাই দেবার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা ঢালাইয়ের বদলে মাটি দিয়ে ভরাট করেছেন। ফলে ক্রমাগতভাবে পাইপ মাটিতে ভরাটসহ বসে যাচ্ছে। পানি প্রবাহের নির্গমন মুখ একে তো সরু, তার উপর ময়লা মাটিতে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থা শহরের দক্ষিণাংশের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের। এ ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন রেললাইন সংলগ্ন চোপদারপাড়া ও জমাদ্দারপাড়ার মানুষ। এ এলাকার প্রায় শতভাগ বাড়িঘরেই এখন হাঁটু পানি। বাসিন্দারা তিন দিন ধরে রান্না করতে পারেননি। টিবি ক্লিনিক এলাকার সিথি প্রষা নামে এক কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে আসতে হলে এখন নৌকায় করে আসতে হবে।’ তিনি জানান, ‘বর্ষা ঋতু ছাড়াও যে কোন সময় বৃষ্টি হলেই আমাদের এ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। রাতে শুকনা ঘর দেখে ঘুমিয়ে পড়ি। আর সকালে উঠে দেখি খাটের নিচে পানি থৈ থৈ করছে। শহরের বাগমারাপাড়ার বাসিন্দা রবিন পাল জানান, তাদের এলাকার কয়েক ঘর বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা জানান, এ জলাবদ্ধতা যতটা না প্রাকৃতিক, তারচেয়ে বেশি মনুষ্যসৃষ্ট। পৌরসভার অনুমোদন না নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, পৌরসভার ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অব্যবহৃত পানি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উপর দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। আবার ৭ নম্বর ওয়ার্ড তুলানামূলক নিচু এলাকা। তিনি জানান, সাময়িক এ জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
×