ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এবার মৌসুমি অপরাধীরা উধাও

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৪ জুন ২০১৭

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এবার মৌসুমি অপরাধীরা উধাও

শংকর কুমার দে ॥ পুলিশের ভাষায় ‘মওসুমী অপরাধ’। রমজান মাসের শুরুতেই দেখা যায় ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ভুয়া ডিবি বা র‌্যাব, প্রতারক চক্রের তৎপরতা। রমজানের শুরুতেই এ ধরনের অপরাধীদের তৎপরতা শুরু হয় এবং ঈদ ঘনিয়ে এলেই এ ধরনের অপরাধীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের রমজানের শুরু থেকেই মওসুমী অপরাধের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। পবিত্র রমজান মাস ও ঈদের পর প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত মাসাধিকালব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশের উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবারের মওসুমী অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে রমজানের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে বিশাল আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহসহ কয়েকটি জেলায় গ্রেফতার হয়েছে বেশ কয়েকজন জেএমবির জঙ্গী ও আবিষ্কৃত হচ্ছে জঙ্গীগোষ্ঠীর গোপন আস্তানা। অন্যান্য বছরের রমজান মাসের মওসুমী অপরাধ দমনের চেয়ে এবারের অপরাধ দমনের ধরন পাল্টে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মুখে মওসুমী অপরাধীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর কেবল রাজধানী ঢাকাতেই মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। রাজধানীর অন্তত ৩ শতাধিক স্পটে ছিনতাইকারীরা ছিনিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা, যা উদ্ধার হওয়ার ঘটনা নেই বললেই চলে। দেদারছে চাঁদাবাজি করে সন্ত্রাসীরা। প্রতিবছর রমজান মাস শুরু হলেই ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে ওঠে এ ধরনের মওসুমী অপরাধীরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবারের রমজানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মুখে মওসুমী অপরাধীরা উধাও। এ ধরনের অপরাধ এখনও তেমন ঘটার খবর পাওয়া যায়নি। মওসুমী অপরাধীদের পাকড়াও করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। ডিএমপি সূত্র জানায়, এবারের রমজান মাস ও ঈদ সামনে রেখে অতীতের মতো অজ্ঞান পার্টি যাতে অভিনব উপায়ে নানা কৌশলে পথচারী, যাত্রীদের কিছু খাইয়ে বা মুখে রুমাল ধরে অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য জনগণ, পথচারী, যানবাহন আরোহীসহ সর্বস্তরের মানুষকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। অপরাধীরা যাতে নির্জন বা সুবিধাজনক স্থানে ছিনতাই তো করতে না পারে বিশেষ করে মোটরসাইকেল, বেবিট্যাক্সি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের মাধ্যমেও ছিনতাই করতে না পারে সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কারণ ছিনতাইকারীদের কাছে ছিনতাইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে মহিলাদের ভ্যানেটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ও রিক্সারোহী মহিলা যাত্রীদের স্বর্ণালঙ্কার হচ্ছে ছিনতাইকারীদের বড় টার্গেট। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, রমজানে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, অজ্ঞান পার্টির অপরাধীদের তৎপরতাও বেড়ে যায়। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, ফুটপাথ ইত্যাদি স্থানে ওঁৎ পেতে থাকা নানা ধরনের অপরাধীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তিনি বলেন, রাজধানীর থানাগুলোতে যেসব জিডি হয়েছে সেইসব জিডির সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে ডাকাত দলের ৩০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা র‌্যাব, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা করছিল। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রাজধানীতে এই ধরনের আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় আছে। তবে অস্ত্র চোরাচালানী চক্র, মাদক ব্যবসায়ী ও জঙ্গীগোষ্ঠী যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে না পারে সেইদিকেই সর্বাধিক সতর্ক দৃষ্টি রেখে অভিযান জোরদার করা হয়েছে, যা গোটা রমজান মাস ও ঈদের পরও অব্যাহত থাকবে।
×