ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএমপিআইএ’র সংবাদ সম্মেলন

মোবাইলের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় বাধাগ্রস্ত হবে ডিজিটালের লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৪ জুন ২০১৭

মোবাইলের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় বাধাগ্রস্ত হবে ডিজিটালের লক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় দেশের সব মানুষের হাতে তথ্যপ্রযুক্তি পৌঁছে দেয়ার সরকারের প্রতিশ্রুতি বাধাগ্রস্ত হবে। স্মার্ট বা এ্যানড্রয়েড মোবাইল সেটের ওপর এবার ৩৪ দশমিক ৫০ ভাগ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে স্মার্ট বা এ্যানড্রয়েড ফোনের দাম শতকরা ১০ ভাগ বেড়ে যাবে। স্মার্ট বা এ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি কোনভাবেই মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব না। বর্তমানে দেশে স্মার্ট বা এ্যানড্রয়েড ব্যবহারকারীর সংখ্যা শতকরা ৩০ ভাগ। সরকার চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর জি) নেটওয়ার্ক এ বছরই চালু করতে যাচ্ছে। এ নেটওয়ার্ক স্মার্ট বা এ্যান্ড্রেয়ট ফোন ছাড়া চলবে না। ফিচার ফোন দিয়ে কথা বলা ছাড়া ডাটা আদান-প্রদান করা সম্ভব না। সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে দেশে ব্যাপকহারে অবৈধ পথে মোবাইল সেট চলে আসবে। বর্তমানে ২০ ভাগের বেশি মোবাইল সেট দেশে আসছে অবৈধ পথে। মোবাইল ফোনের দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণে চোরাচালান বা অবৈধ পথে মোবাইল আসার পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) সংবাদ সম্মেলনে এ কথা তুলে ধরেছে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব লিখিত বক্তব্যে বলেন, দেশে ১৩ কোটি মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ৭ কোটি গ্রাহকই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। শতভাগ আমদানিনির্ভর মোবাইল ফোনের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। একটা স্মার্ট ফোন বর্তমানে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। কিন্ত বাজেটে দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণে ওই মোবাইল সেট এখন কিনতে হবে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। কত ভাগ মানুষ বাড়তি দাম দিয়ে একটি স্মার্ট বা এ্যানড্রয়েড ফোন কিনতে পারবে তা ভেবে দেখার বিষয়। বরং এতে চোরাচালান উৎসাহিত হবে। এ অবস্থায় আমরা মনে করি বাজেট প্রস্তাবনায় কিছু সামঞ্জস্যতা আনা প্রয়োজন। দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজন শিল্প নেই। বিএমপিআইএ মনে করে অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠান দেশে শিল্প স্থাপনের জন্য আগ্রহী। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির ফলে সরকার মোবাইল ফোনের খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য এইচএস কোড প্রণয়ন করেছে। এবারের বাজেটে এটা একটা ভাল দিক। তবে দেশে দক্ষ জনবল তৈরি করা এবং শিল্প স্থাপনের জন্য একটা সময়ের প্রয়োজন। দরকার সরকারের একটা সুষ্ঠু নীতিমালা। আমরা সরকারের পরিষ্কার কোন নীতিমালা পাইনি। আইফোন, স্যামসং, সিমফনি, নোকিয়াসহ বাজারে যেসব কোম্পানির মোবাইল চলছেÑ তারা প্রত্যেকেই দেশে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন সেটা স্পষ্ট না। তাই তারাও আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছে। মোবাইল সংযোজন শিল্প গড়ে তুলতে কম করে হলেও এক বছর সময় লাগবে। দক্ষ জনবল ও কারখানা গড়ে তুলতে বিরাট অঙ্কের টাকার প্রয়োজন। এখানে এককভাবে বা যৌথভাবে শিল্প গড়ে তুলতে হলেও কিছুটা সময় দেয়া প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ইন্টারনেট। দেশের ১৩ কোটি মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ৭ কোটি গ্রাহকই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আমরা মনে করি মোবাইল ও ট্যাব ছাড়া ল্যাবটপ ও কম্পিউটার থাকবে না বললেই চলে। মোবাইল ফোনে এখন সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছে। একটা স্মার্ট মোবাইল ফোন থাকলে আর কিছুর দরকার হয় না। একটা মোবাইল সেট দিয়ে সব কাজই করা সম্ভব। আমদানিনির্ভর এ শিল্পে হঠাৎ করে মূল্য বাড়িয়ে দেয়ায় মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা খুব একটা বাড়বে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুল্ক ও মূসক নীতিমালা বলবৎ রাখার জন্য। তাহলে আগামী তিন বছরের মধ্যে মোবাইল সেট বিক্রির ৯০ শতাংশই দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করব।
×