ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার

লংগদুতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পাহাড়ীরা ঘরে ফিরছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৪ জুন ২০১৭

লংগদুতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পাহাড়ীরা ঘরে ফিরছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি ॥ রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা যুবলীগ নেতা হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল হক বাদী হয়ে ১৫ জনকে সরাসরি নাম দিয়ে ও আরও অজ্ঞাত ২ শতাধিক লোককে আসামি করে লংগদু থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে এ মামলার ৭ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আসামিরা হলো সাইফুল, শাহালম, তৌহিদ, আবুল কালাম, শরিফুল, মোখতার ও শরিফ। এদেরকে শনিবার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, জোন কমান্ডার ও পুলিশ সুপার সাঈদ তারেকুল হাসান ও অকুস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওইদিন দুপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদে সার্বজনীন একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ২ পাহাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। শনিবার বিকেল থেকে লংগদুতে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বৃষ্টির কারণে পুড়ে যাওয়া পাহাড়ী পল্লীতে এখনও লোকজন ফিরে আসেনি বলে জানা গেছে। তবে অনেকেই পরিস্থিতি বুঝে এলাকায় ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এদিকে বাঙালীরা ও তাদের নেতা নয়ন হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় এ ব্যাপারে জোরালো দাবি উঠানো হয়েছে। ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর বৃহস্পতিবার থেকে লংগদুতে পাহাড়ী বাঙালী উত্তেজনা শুরু হয়। শক্রবার এই উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ ধারণ করে। এ সময় কয়েক হাজার লোক নয়নের শোকে কাতর হয়ে পড়ে। এই সুযোগে কিছু দুর্র্বৃত্ত পাহাড়ী পল্লীতে আগুন দেয়। আগুন কয়েক গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে কয়েকশ’ ঘর ও দোকান পুড়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর পর থেকে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। এলাকায় যৌথ বাহিনীর টহল দল মোতায়েন থাকায় এলাকার পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে আসছে। কিছু পাহাড়ী তাদের বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে এলাকায় আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় জেএসএস, ইউপিডিএফ ও নাগরিক সমাজ থেকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান জনকণ্ঠেকে বলেন লংগদু উপজেলায় একটি হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে কাউকে দোষ দেয়া মোটেও ঠিক হয়নি। এ ঘটনায় ২৫০ পাহাড়ী বাড়ি ঘরে আগুন দেয়াটা দুঃখজনক। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। তেমনি নয়নকে যারা হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে জানান। তিনি বলেন, পাহাড়ীদের ঘর বাড়িতে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সৃষ্ট ঘটনার জন্য কারা দায়ী এবং এ বিষয়ে কাদের গাফিলতি ছিল তা খুঁজে বের করার জন্য একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করার দাবি জানান তিনি। লংগদুর সিদ্ধান্ত হয় যে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে তাদের বাড়িঘর না হওয়া পর্যন্ত তিনটিলা মন্দির ও লংগদু হাইস্কুলে আশ্রয়ে রাখা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এদিকে, যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখা। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নয়নকে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকা-ের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে উপজাতীয় সন্ত্রাসী ও ষড়যন্ত্রকারীরা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তা বাঙালীদের ওপর দোষ চাপানোর অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারও চালাচ্ছে দেদার। দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা যা প্রচার করেছে তা কোনটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয়ার ছবি, কোনটি টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণের আবার কোনটি বরিশালে বিস্কুটের গোডাউনে আগুন লাগার ছবি। সংগঠনের পক্ষ থেকে এহেন মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করে অপপ্রচারকারীদের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, নয়ন হত্যাকা-ের তিন দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের বদলে সাধারণ বাঙালীদের গণগ্রেফতার চালাচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সংগঠন নেতৃবৃন্দ এ গণগ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় কঠোর কর্মসূচী দিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ইউপিডিএফের বক্তব্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাঙ্গামাটি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক শান্তি দেব চাকমা এক বিবৃতিতে লংগদুতে পাহাড়ী-বাঙালীদের মাঝে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বিষয়টি পরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি পাহাড়ের পরিবেশকে অশান্ত করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো চলছে। বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, এ হত্যার ঘটনায় কারা জড়িত তা পরিষ্কার না করে উস্কানিমূলক ঘটনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় যারা এসব করছে তারা সকলেই চিহ্নিত। বিবৃতিতে তিনি পাহাড়ে অপারেশন উত্তরণের জের বলে দায়ী করেন।
×