ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক লেনদেনে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধিতে অর্থ পাচার হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ জুন ২০১৭

ব্যাংক লেনদেনে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধিতে অর্থ পাচার হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্যাংক লেনদেনে আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সংগঠনের নেতারা মনে করেন, ১৫ শতাংশ একক ভ্যাট হারের প্রভাবে এসএমই ও প্রান্তিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ভোক্তার ওপর করের ভার বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তাই ব্যাংকিং সেক্টর থেকে আবগারি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ও ভ্যাটের হার পুনঃবিবেচনার দাবি করেছে সংগঠনটি। শনিবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার তথ্য জানিয়ে এসব দাবি করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। আগামী অর্থবছরের বাজেটকে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব আখ্যা দিয়ে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, অন্তত ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে বাজেটে ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি পরিলক্ষিত হয়নি। এসব দাবি পুনঃবিবেচনা করতে হবে। বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক খাতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসব ভাতা প্রদানের ঘোষণা রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সহায়তা করবে। আমরা ভালকে ভাল বলছি; তবে এও বলছি, অন্তত ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে আমাদের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি। ব্যাংক লেনদেনে আবগারি শুল্ক বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এতে আমানতকারীরা আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবে। এছাড়া অর্থ ব্যাংক চ্যানেলে না গিয়ে ইনফর্মাল চ্যানেলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। তাছাড়া স্বাস্থ্যহানি করে এমন পণ্য ছাড়া অন্য কোন খাতে আবগারি শুল্ক আরোপ সমীচীন নয়। সুতরাং ব্যাংকিং সেক্টর থেকে আবগারি কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্র্থনৈতিক কার্যক্রমের বার্ষিক টার্নওভার সীমা ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, বর্তমানে যা ৩০ লাখ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। ক্ষুদ্র, গ্রামীণ উদ্যোগ, কুটিরশিল্প ইত্যাদি প্রান্তিক খাতের বিকাশে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বা দোকানদারদের হিসাব সংরক্ষণের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে আরও অব্যাহতি এ সীমা আরও বৃদ্ধি করার বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। টার্নওভার করের সীমা এক কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষিতে টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে টার্নওভার করের সীমা পাঁচ কোটি বা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে মূসক আইনের ৩১ ধারায় বর্ণিত ৩ শতাংশ অগ্রিম কর সম্পর্কিত বিধান বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, যদিও আমরা হ্রাসকৃত হারে বিভিন্ন স্তরে মূসক হার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলাম কিন্তু বাজেটে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাটের পরিবর্তে সিঙ্গেল রেট ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশের শিল্প খাত বিশেষ করে এসএমই ও প্রান্তিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে সব ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী হিসাবপত্র সঠিকভাবে না রাখতে পারায় রেয়াত নিতে সক্ষম নন তাদের ওপর করের বোঝা বেড়ে যাবে, যার প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়বে। এতে মূলস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। তাই হ্রাসকৃত হারে বিভিন্ন স্তরে মূসক পুনঃবিবেচনার প্রস্তাব করছি। তিনি আরও বলেন, তামাকজাত পণ্য যেমন বিড়ি উৎপাদনে যে পরিমাণ কর বৃদ্ধি করা হয়েছে অনুরূপভাবে সিগারেটের ক্ষেত্রেও আনুপাতিক হারে কর বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি। সিগারেট ও বিড়ির সঙ্গে যদি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তবে তা ঠিক হবে না। পর্যটন খাত বিকাশমান খাত। পর্যটন খাতে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল। আমরা এ খাতে বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, রাজস্বের ক্ষেত্রে হার না বাড়িয়ে করের পরিধি বাড়ানোর পক্ষে আমরা। এনবিআরকে এ সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরাও ভ্যাটের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তর তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনের নেতাদের কাছেও জানতে চান বিভিন্ন তথ্য। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান, বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম ওসমান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিপিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
×