ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

দক্ষিণ চীন সাগরে বেজিংয়ের সামরিক উপস্থিতি মানব না

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৪ জুন ২০১৭

দক্ষিণ চীন সাগরে বেজিংয়ের সামরিক উপস্থিতি মানব না

দক্ষিণ চীন সাগরে মানবসৃষ্ট দ্বীপগুলোতে চীনের সামরিক স্থাপনা নির্মাণ যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এক নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তৃতাকালে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস একথা বলেন। খবর বিবিসি। এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, চীনের এ ধরনের পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করবে। একই সঙ্গে ম্যাটিস উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বেজিংয়ের ভূমিকারও প্রশংসা করেন। চলতি বছর পিয়ং ইয়ং পরিচালিত কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়ানোর কিছুক্ষণ পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ যাবত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়ানো হয় এবং নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রই সর্বসম্মতভাবে এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। এদিকে উত্তর কোরিয়ার মদদদাতা দেশ হিসেবে চীনের ভূমিকা নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। চীন তার মূল ভূখ-ের বাইরে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার মধ্যে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের মাধ্যমে সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগের সব ব্যবস্থাই চূড়ান্ত করেছে। এসব দ্বীপে বিমান উঠানামার জন্য রানওয়ে নির্মাণসহ অন্যান্য সামরিক স্থাপনা তৈরিতেও দেশটি মনোনিবেশ করেছে। এতে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ব্রুনেইসহ আশপাশের অন্যান্য দেশ তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। এসব দেশের পক্ষ নিয়ে সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এ এলাকায় কোন দেশের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় অতিরিক্ত হিস্যা দাবির বিরোধিতা করছি। এবং আমরা কোন দেশকে এককভাবে জবরদস্তিমূলক সীমানা পরিবর্তনের মাধ্যমে ভৌগোলিক স্থিতি বিনষ্টের চেষ্টা মানি না এবং মানব না। কেবল প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসই নয়, এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন, জাহাজ চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে তার স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। এবং তার কথার সুর ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, আমরা চীনকে দুটি কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই। আর তা হলো কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে যেসব দ্বীপ ইতোমধ্যেই নির্মিত হয়ে গেছে সেগুলোতে তাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা বা অবস্থান না করা। এর জবাবে বেজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এ এলাকায় চীন তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এর পর পরই এসব দ্বীপকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে এর আশপাশের সমুদ্রে নৌ টহল দেয়া শুরু করেছে চীন। ইতোপূর্বে উত্তর কোরিয়া এবং বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিশ্বের দুটি শক্তিধর দেশ ধীরে ধীরে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুরের সাংগ্রিলা ডায়ালগ ফোরামে জেনারেল ম্যাটিস চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর প্রতি আশ্বাসবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনই এশীয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এ এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বিরাট বাধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্প্রতি একটি মার্কিন বিমান দক্ষিণ চীন সাগরের আকাশসীমায় ঢুকে পড়লে তাকে ধাওয়া করে দুটি চীনা জঙ্গী বিমান পঞ্চাশ গজের মধ্যে এসে পড়ে, যা ছিল একটি বিপজ্জনক মুহূর্ত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে উভয় পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে এবং গোয়ার্তুমি পরিহার না করলে বিশ্ব শান্তির জন্য বিপজ্জনক কিছু একটা ঘটে যেতে পারে।
×