ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশ জালের সঙ্গে তারা বুনছেন স্বপ্নের জাল

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৩ জুন ২০১৭

ইলিশ জালের সঙ্গে তারা বুনছেন স্বপ্নের জাল

মিলন মাঝি। ২০ বছর ধরে মাছ ধরেন। গত মৌসুমে স্মরণকালের সবচাইতে বেশি মাছ ধরা পড়ায় তার ঋণের বোঝাা কিছুটা হলেও কমেছে। তাই এ বছর ইলিশের ভরা মৌসুম আসার আগেই মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ইলিশ শিকারে যাওয়ার জন্য ভোলা সদরের ইলিশা মেঘনা নদীর তীরে জাল বুনছেন। নৌকা (সাবার) মেরামত করছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ১৫টি জাল ও একটি নৌকা তৈরি করেছেন। গত বছর ভাল ইলিশ পড়ায় এক বুক আশা নিয়ে নদীতে যাওয়ার জন্য এই ব্যস্ততা। তার মতো কয়েক হাজার জেলে আসন্ন ইলিশের ভরা মৌসুমে নদী ও সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য নতুন উদ্দীপনায় স্বপ্নের জাল বুনছে। মেঘনার তীরে জেলেপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ ব্যস্ত পুরনো জাল রিপুর কাজে। কেউ বা নতুন জাল বুনতে ব্যস্ত। আবার কেউ নৌকা, ট্রলার ঠিক করছে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, কেউ বসে নেই। সেলিম মাঝি জানান, আগে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই ইলিশের মৌসুম শুরু হতো। আমরা মাছ ধরতে যেতাম। এখন মৌসুম পাল্টে গেছে। আষাঢ় থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম থাকে। গতবার ভাল ইলিশ পাওয়ায় তিনিও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৩০ হাজার টাকার জাল কিনেছেন। কথা হয় কাঠ মিস্ত্রি ইউসুব মিয়ার সঙ্গে। জেলেদের নতুন নতুন মাছধরার নৌকা ট্রলার তৈরি করতে তিনিও ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে তাঁর মতে মৌসুম শুরু হলে ব্যস্ততা আরো কয়েক গুন বেড়ে যায়। তবে ইলিশ মৌসুমের আগেই জেলেরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। হঠাৎ করে জলদস্যুদের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় তাদের মনে রয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। ইলিশা মাছ ঘাটের জেলে রুহুল আমিন জানান, কয়েক মাস আগে কালীগঞ্জ মেঘনা নদীতে ১৫ দিনের ব্যবধানে তাঁর ২টি মাছ ধরা ট্রলার, জাল ডাকাতরা লুট করে নিয়ে যায়। কোন রকমে প্রাণরক্ষা পেলেও ট্রলার উদ্ধার করতে পারেননি। আসন্ন মৌসুমে যদি বেশি ইলিশ ধরা পড়ে, সেই আশায় ৭০ হাজার টাকা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার তৈরি করেছেন। জেলে রুহুল আমিনের মতো আলমগীর মাঝি পাটোয়ারি বাজার সংলগ্ন এলাকায় জলদস্যুদের কবলে পড়েন। পরে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ট্রলার ছাড়িয়ে আনেন। জেলে ওমর ফারুক বলেন, আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাছ ধরার জন্য জাল বুনছি। কিন্তু মেঘনার জলদস্যুর উপদ্রব বন্ধ না হলে আমাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। আড়তদার হাসান কেরানি জানান, তিনিসহ ভুট্টু বেপারী ও আবুল হাজারি ইলিশের ব্যবসা করেন। গত মৌসুমে ভাল মাছ পড়ায় হাসান কেরানির ১০ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। তাদের মেঘনার মাঝের চর বৈরাগী, মধুপুর, ইলিশাঘাট ও চডার মাথাসহ মোট চারটি মৎস্যঘাটে আড়ত রয়েছে। তাদের এক হাজার জেলেকে দুই থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাদন দেয়া হয়েছে। এতে অন্তত পৌনে এক কোটি টাকা জেলেদের কাছ তাদের অগ্রিম দেওয়া রয়েছে। আসন্ন মৌসুমে ইলিশ পড়লে তাদের আশা লাভসহ চালানের অনেক বড় অংশ ঘরে তুলতে পারবে। -হাসিব রহমান, ভোলা থেকে
×