ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিকায়নের অপেক্ষায় পাঁচ বছর পার

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৩ জুন ২০১৭

আধুনিকায়নের অপেক্ষায় পাঁচ বছর পার

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনের আধুনিকায়ন কাজ থমকে আছে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে। ২০১২ সালের ১০ জুন এটির আধুনিকায়নের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পেরিয়ে গেছে আর ৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে আধুনিকায়নের নামে ফেলে রাখা হয়েছে বিশাল এ মিলনায়তনটি। এদিকে মিলনায়তনকেন্দ্রিক নগরীর মণিবাজারও এখন ভুগছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। এক সময় জমজমাট এ মণিবাজারে এখন প্রাণ হারিয়ে ভুতুড়ে বাজারে পরিণত হয়েছে। ফাঁকা হয়ে গেছে বেশিরভাগ দোকানপাট। তবে সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, শীতাতপ ও সাউন্ড সিস্টেমের কাজ শুধু বাকি রয়েছে। শীঘ্রই এ মিলনায়তনটি জেলা পরিষদকে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনের নাম বদলে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান মিলনায়তন করা হয়েছে। ২০১১ সালে নতুন নামফলক লাগিয়ে এটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর আরও ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি এক সময়ের মুখর এ মিলনায়তনটি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ মিলনায়তন সংস্কারে নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১১ সালের ৪ নবেম্বর। ২০১২ সালের ১০ জুন এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কথা ছিল, মিলনায়তনের কাঠামো ঠিক রেখে চেহারা পাল্টে যাবে। সৌন্দর্য বর্ধনসহ আধুনিকায়ন হবে ভেতর ও বাইরের। বসবে নতুন সাউন্ড সিস্টেম স্থাপন। পুরনো গ্যালারি তুলে দিয়ে বসবে আধুনিক গ্যালারি। ওপরে ফলস সিলিংসহ ছাদে জিঙ্ক এ্যালুমিনিয়ামের শিট লাগানো হবে। বিদ্যুতের জন্য নিজস্ব সাব-স্টেশনও বসানোর কথা ছিল। অন্য কাজগুলো কোন রকমে হলেও এখনও লাগানো হয়নি ভেতরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও সাউন্ড সিস্টেম। তা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দিয়ে মিলনায়তনের উদ্বোধন করে সিটি কর্পোরেশন। উদ্বোধনেরও পর প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি এ মিলনায়তনটি। জানা গেছে, নগরীর সিএ্যান্ডবি মণিবাজারে অবস্থিত এ মিলনায়তনটি জেলা পরিষদের। এতে ধারণক্ষমতা সাড়ে আটশ। আগে একদিনের জন্য এ মিলনায়তন ভাড়া দেয়া হতো তিন হাজার টাকায়। এ রকম সুবিধার ও মানসম্মত মিলনায়তন রাজশাহীতে আর নেই। একসময় এ মিলনায়তন ঘিরে চলত রাজশাহীর সাংস্কৃতিক কর্মকা-। জমজমাট থাকত পাশের মণিবাজার। তবে দীর্ঘ সময় ধরে আধুনিকায়নের নামে মিলনায়তনটি বন্ধ থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রাজশাহীর সংস্কৃতিচর্চা ও সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। রাজশাহীতে আরও বেশকিছু মিলনায়তন থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া ও আধুনিক না হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে। মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে মিলনায়তনের প্রধান ফটক। ভেতরে কেবল সুনসান নীরবতা। চালুর আগেই নষ্ট হয়ে গেছে মিলনায়তনের সৌন্দর্য বর্ধন কাজ। অব্যাহত থাকায় নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। এর ঠিক উল্টো চিত্র মিলনায়তনের নিচতলার ব্যক্তি মালিকানাধীন রেস্তরাঁয়। সেখানকার মিলনায়তনটি সবসময় মুখর অনুষ্ঠান আয়োজনে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, চার কেটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মিলনায়তনটির আধুনিকায়ন কাজে হাত দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নে তিন কোটি ২৩ লাখ, আধুনিক সিট স্থাপনে ৫৩ লাখ ও আধুনিক বৈদ্যুতিক ও সাউন্ড সিস্টেমে ব্যয় হয় ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভেতরের নতুন আসন ব্যবস্থার জন্য ঠিকাদারের নিজস্ব তহবিল ৫৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে রাসিক। কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও সাউন্ড সিস্টেমের কাজের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় এ কাজ হয়নি। এ নিয়ে দরপত্র হলেও টাকা না পাওয়ায় কাজে হাত দেননি ঠিকাদার। আর সিটি কর্পোরেশনের টাকা অন্য খাতে খরচের সুযোগও নেই। বর্তমানে মিলনায়তনটি জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরের কথা তারা ভাবছেন বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী। তবে যেনতেনভাবে মিলনায়তন বুঝিয়ে নেবেন না বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘদিনেও মিলনায়তনের আধুনিকায়ন কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তারা ফিরিয়ে দিতে চাইছে। তিনি জানিয়েছেন, যে প্রক্রিয়া সিটি কর্পোরেশন নিজেদের আওতায় নিয়েছিল, সেই প্রক্রিয়ায় ফেরত দিতে হবে। তিনি বলেন, এতদিন মিলনায়তনটি চালু হলে রাজশাহীবাসী এতে সেবা পেতেন। জেলা পরিষদেরও আর্থিক ভিত শক্তিশালী হতো।
×