ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সালেহা চৌধুরী

বিড়াল মোরগ ও নেংটি ইঁদুর

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩ জুন ২০১৭

বিড়াল মোরগ ও নেংটি ইঁদুর

এক ছোট নেংটি ইঁদুর মায়ের গলা ধরে বলে - মা আমি একটু দূরে যাব। দেখতে এই পৃথিবীটা কেমন। মা বলেন - বাবারে তুই বড়ই ছোট। সাবধানে যাস। নেংটি ইঁদুর বলে - আমাকে নিয়ে ভয় পেয়না তুমি। আমি সবকিছু দেখে শুনে ঠিকই বাড়ি ফিরে আসব। মা বলেন - সাবধানে যাস। এই পৃথিবীর সব খানেই বিপদ। দেখেশুনে না গেলে মুশকিল। আর তা ছাড়া তুই এক ছোট নেংটি। নেংটি ইঁদুর মাকে আশ্বস্ত করে বাড়ি থেকে বের হয়। বলে - ভয় পেয়না আমি সবকিছু দেখে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসব। দুইদিন পর ফিরে আসে সেই ছোট ছটফটে নেংটি ইঁদুর। বলে - মা আমি কত কিছু যে দেখেছি বলে শেষ করতে পারব না। মা বলেন - বল এক এক করে কি দেখলি। নেংটি ইঁদুর বলে - দেখেছি তো অনেক কিছু। কিন্তু দুটো জিনিস কিছুতেই ভুলতে পারছি না। মা বলেন - কি সেই দুটো জিনিস। একটি বড় পাখির মতো জিনিস। মুখে এক টুকরো খাবার নিয়ে সারা উঠান কঁ কঁ করে বেড়াচ্ছে। দেখলেই ভয় লাগে। মাঝে মাঝে এমন কঁ কঁ করে তোমাকে কি বলব। মা নেংটি ইঁদুরের কথা শুনে হাসেন। কিছু বলেন না। বলেন - খালি এই দেখেছিস? - আরে না। খালি এই দেখব কেন। শোনো বলছি আর কি দেখেছি। মা পান খেতে খেতে পা ছড়িয়ে বসে বলেন - বল আর কি দেখেছিস। নেংটি ইঁদুর বলে - আর একটি ধবধবে সাদা নরম খরগোশের মতো জিনিস দেখেছি। মাগো সে জিনিস দেখতে এতো সুন্দর সে কথা তোমাকে কি বলব। আর কথাও বলে নরম সুরে। বলে মাঝে মাঝে “মিউ”, মানে হ্যালো। আমি দূর থেকে সেই সুন্দর জিনিস দেখে ভাবলাম এতো অপুর্ব এই মিউ মিউ। কি এর নাম হতে পারে। আগের কঁ কঁর চাইতে অনেক ভদ্র ও শান্ত। এমন নরম মনে হয় ওকে নিয়ে একটু খেলি। মা বাটা থেকে একটি পান মুখে পোরেন। তারপর মুখের চুন মুছে বলেন - বাবারে আগের যে কঁ কঁ নামের জিনিস দেখেছিস ও কিছু নয় এক মোরগ। বড় ভাল ও। তোকে কিছুই করতো না। - বলছো কি বলে সেই নেংটি। ওরে কঁ কঁ শুনে আমার তো পেটের ভেতর হাত পা চলে গিয়েছিল। ভাবখানা এই আমি রাজা। আমার মাথায় লাল মুকুট আছে। আমি একটা ছোট নেংটি আমার কোন সম্মানই নেই। মাথায় লাল মুকুট পরে উনি একেবারে মহারাজা। - লাল মুকুট? ওতো ওর ঝুঁটি রে বাবা। ওতে ভয়ের কিছু নেই। - আর ওই ধবধবে তুলার বলের মতো জিনিস। চুপচাপ শুয়ে মাঝে মাঝে “মিউ মিউ” করে? ও অবশ্যই খুব ভাল তাই না? মনে হয় ওর পেটে আর শরীরে লাফালাফি করি। এত নরম দেখতে। তুলার বলের মতো একেবারে। মা হাসেন। নেংটি ইঁদুরের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন Ñ বাবারে ওই জিনিস দেখার পরেও প্রাণ নিয়ে তুই আমার কাছে ফিরে এসেছিস? নেংটি মায়ের কথা বুঝতে পারে না। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে - তোমার কথার মানে কি? ওই তুলতুলে জিনিস যে শুধু শুয়ে থাকে তাকে নিয়ে আবার কি ভয়? সেতো জোরে কথা পর্যন্ত বলে না। - বাবারে বলেছিলাম না এই পৃথিবী আমাদের জন্য বড় ভয়ানক জায়গা। তুই এখনো অনেক ছোট। সব কিছু না জেনে এই পৃথিবী দেখেতে বেরিয়েছিলি। তারপর ফিরে এসেছিস। শোন ওই তুলার বলের মতো জিনিস যে কেবল মিউ মিউ করে নাম বেড়াল। ওর চাইতে ভয়ানক শক্র আমাদের আর কেউ নেই। একবার ওর সামনে আমাদের কেউ পড়লে প্রাণ নিয়ে আর ফিরে আসে না। কপ করে গিলে ফেলে হাড় হাড্ডি শুদ্ধো। মায়ের এমন কথায় অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো সেই নেংটি। মা ওকে বললেন এ কথা ভালোমতো মনে রাখিস Ñ শুধু চেহারা দেখে কখনোই কাউকে বিচার করতে যেতে নেই। বরং লাল ঝুঁটির মোরগটা যতই কঁ কঁ করুক ওই হলো ভালা। আর চুপচাপ যে তুলোর বলের মতো শুয়ে আছে সেই আমাদের সবচাইতে বড় শত্রু। চেহারা দেখে কোনদিন আর কারো বিচার করবি না। নেংটি মার গলা জড়িয়ে বলে - ইস বেঁচে যে ফিরে এসেছি এই তো অনেকরে মা। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×