ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রায়ান ফাং

হ্যাকারদের হাতে ৪ দেশের পরমাণু অস্ত্রের তথ্য

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৩ জুন ২০১৭

হ্যাকারদের হাতে ৪ দেশের পরমাণু অস্ত্রের তথ্য

হ্যাকারদের হাতে বিভিন্ন দেশের পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর গোপন তথ্য আছে এবং তারা সেটা প্রকাশও করে দিতে পারে বলে চাঞ্চল্যকর খবর বেরিয়েছে। হ্যাকার গ্রুপটি নিজেদের ‘শ্যাডো ব্রোকার’ বলে পরিচয় দিয়েছে। এই সেই গ্রুপ সেটি ক’দিন আগে বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলা করে বিপুল অঙ্কের অর্থ বাগিয়ে নিয়েছিল। গ্রুপটি হুমকি দিয়েছে যে আগামী দিনগুলোতে তারা আরও অনেক গোপন কম্পিউটারের তথ্য ফাঁস করে দেবে। এমনকি বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি লোকের পরিচালিত উইন্ডোজ ১০এর তথ্যাবলীও প্রকাশ করে দেবে। গোপন তথ্যাবলীর মধ্যে চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর তথ্যও আছে। শ্যাডোজ ব্রোকার’-এর মুখপাত্র সম্প্রতি এক ব্লগ পোস্টে উল্লেখ করেন যে ‘এ জাতীয় কিছু কিছু গোপন কম্পিউটার তথ্য মাসওয়ারি ভিত্তিতে প্রকাশ করা হতে পারে। সোজা কথায় এ হলো এক নতুন চাঁদাবাজি ব্যবসার অংশ। চাঁদাভিত্তিক যে ব্যবসার মডেলটি স্পটিকাই, নেটফিক্স, ব্লু এপ্রোন এবং আরও অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে সফল প্রমাণিত হয়েছে শ্যাডোজ ব্রোকারও তত্ত্ব¡গতভাবে সেই মডেলটি অনুকরণ করার চেষ্টা করছে- তবে তা ভিন্ন কৌশলে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে লেখা ব্লগ পোস্টে বলা হয় প্রতি মাসে লোকে সদস্য পদের ফি দিয়ে প্রতি মাসে যেসব তথ্য ছাড়া হবে শুধুমাত্র সেগুলোই পাবে। এই ঘটনা থেকে দেখা যায় যে শ্যাডো ব্রোকারের মতো গ্রুপগুলো বাণিজ্যিক দিক দিয়ে উত্তরোত্তর উৎকর্ষতা অর্জন করেছে। শ্যাডো ব্রোকার্স তো ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ভীতিকর প্রযুক্তিগত সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। আর এই গ্রুপটি কম্পিউটার তথ্যের গোপন ব্যবসার যে কৌশল তুলে ধরেছে তার সঙ্গে বাস্তব জগতের বাণিজ্যিক বাজারের সদৃশ্য আছে। শ্যাডো ব্রোকার্সের উদ্দেশ্য এবং ক্ষমতা-সামর্থ্য সম্পর্কে কোন সূত্র পাওয়া যায় কি না তার জন্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ব্লগ পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখছেন। মার্সি হুইলার নামে দীর্ঘদিনের এক নিরপেক্ষ গবেষক বলেছেন যে শ্যাডো ব্রোকার্সের পোস্ট মাইক্রোসফট ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ) উভয়ের মাথায় হাতুড়ির ঘা মেরেছে। কারণ স্যাডো ব্রোকার্স যদি আরও কোন তথ্য ফাঁস করে দেয়, তা হলে মাইক্রোসফটের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এনএসএর তথ্য এই গ্রুপটি তো আগেই গত এপ্রিলেই ফাঁস করে দিয়েছিল। মাইক্রোসফটের তৈরি সফটওয়্যারের দুই সেট তথ্য ফাঁস করার পর আরেক দফা তথ্য ফাঁসের হুমকি দিয়ে গ্রুপটি মাইক্রোসফট ও মার্কিন সরকারের মধ্যে বিরোধ বাঁধিয়ে তুলবে বলে মন্তব্য করেছেন হুইলার। মাইক্রোফট ক’দিন আগে ডিজিটাল অস্ত্র মজুদ করার জন্য এনএসএর সমালোচনা করেছিল। মাইক্রোসফট তার পণ্যের নিরাপত্তা দুর্বল করার জন্য সরকারের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তার যারা প্রবক্তা তারা মনে করে সরকারের ওই উদ্যোগ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে। তাদের হাতে বিভিন্ন সরকারের পারমাণবিক কর্মসূচীর তথ্য আছে শ্যাডো ব্রোকার্সের এই দাবিটা অতিমাত্রাময় দুশ্চিন্তার কারণ বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জোসেফ লরেঞ্জো হল। তিনি বলেন, গ্রুপটি ইতোমধ্যে প্রমাণ দিয়েছে যে সাঙ্কেতিক কোড ভেঙ্গে গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার যথেষ্ট ভাল সুযোগ তাদের আছে। এর আগে শ্যাডো ব্রোকার্স তাদের হ্যাকিংয়ের সাজসরঞ্জাম সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তেমন একটা কেউ তখন এগিয়ে আসেনি। এখন মাসিক চাঁদার মডেলটি থেকে মনে হয় যে গোপন তথ্যাবলী আরও অনেক লোকের হাতে গিয়ে পৌঁছবে এবং এভাবে তা অনেক ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক সূত্র ॥ ওয়াশিংটন পোস্ট
×