ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আক্ষেপ-হতাশাতেই কি ডুবতে থাকবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৩ জুন ২০১৭

আক্ষেপ-হতাশাতেই কি ডুবতে থাকবে বাংলাদেশ

একটুর জন্য হচ্ছে না। হয় কিছু রান স্কোরবোর্ডে কম জমা হচ্ছে। নয়ত আর কয়েকটা উইকেট ফেলে দিলেই হত। এ আক্ষেপ আর কতদিন চলবে? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩০৫ রান করে হারার পরও যেমন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কণ্ঠে আর ২০ থেকে ৩০ রান কম হওয়ার আক্ষেপ, হতাশার সুর বেজেছে। মাশরাফি বলেছেন, ‘তামিম আউট হওয়ার পরের বলেই মুশফিক আউট হয়েছে। দুইজন সেট ব্যাটসম্যান পরপর দুই বলে আউট হয়েছে। এটাই আমাদের সমস্যা তৈরি করেছে। এরপর সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বিররা ছিল। কিন্তু ওভার ৬ থেকে ৭টি ছিল। তবে এমন উইকেটে ২০ থেকে ৩০ রান কম হয়েছে।’ বিগত দিনগুলোতে এমনই হচ্ছে। ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ভারতের বিপক্ষে চ্যাাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৪ রানেই অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে নিজেদের সামলে নিয়ে তামিম ইকবালের ১২৮ রান ও মুশফিকুর রহীমের ৭৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন শ’ রানের বেশি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বোলাররা ব্যর্থ হন। আর তাতে করে ৮ উইকেটে হারও হয়। আক্ষেপও থাকে। যে আক্ষেপ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৪১ রান করেও হারতে হয়েছে, আয়ারল্যান্ডে খেলা তিনজাতি সিরিজেও ছিল, এমনকি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও ছিল। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে যে বাংলাদেশ এত বড় স্কোর করেও লড়াই করতে পারল না, সেটিই সবাইকে বেশি পোড়াচ্ছে। এর পেছনে একটাই কারণ সবার সামনে ধরা পড়েছে। সেটি হচ্ছে একজন বোলার কম নিয়ে খেলা। ব্যাটসম্যান একজন বেশি নিয়ে খেলা। মাশরাফিও তা মেনেছেন। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছে। স্কোরবোর্ডে বেশি রান জমা করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু ইংল্যান্ড দল যে ব্যাটিংয়েও ভাল তাতে বোলার আরেকজন বাড়িয়ে নিলে ভাল হতো না? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে মাশরাফির সামনে এমন প্রশ্ন ছুড়ে যেতেই বলেছেন, ‘আসলে ব্যাটসম্যানদের স্বাধীনতা দিতেই এমনটি করা হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা ভালও করেছে। তবে এটাও ঠিক, আমরা আরেকজন বোলার নিয়ে খেলতে পারতাম।’ প্রশ্ন উঠেছে, ক্রিকেটাররা কী ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? ফিটনেস সমস্যায় ভুগছেন? শুরুতে সাসেক্সে প্রস্তুতি ক্যাম্প হয়েছে। এরপর আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজ খেলা হয়েছে। তারপর দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামতে হয়েছে। টানা ক্রিকেটের মধ্যেই আছেন ক্রিকেটাররা। ক্লান্তি থাকাটাও স্বাভাবিক। মাশরাফি জানিয়েছেন, ‘আমরা ব্রাইটনে খেলেছি। ছেলেরা প্রস্তুতি ম্যাচসহ ৮ থেকে ৯ ম্যাচ টানা খেলেছে। তবে বোলাররা এবং খেলোয়াড়রা ফিট আছে। কোন অভিযোগ নেই।’ ৩০৫ রান প্রচুর, নাকি ৩৩০-৩৪০ হলে ভাল হত? মাশরাফির সামনে এ প্রশ্ন যে ছুড়ে যাবে, তা তিনিও জানতেন। তাইতো বলেছেন, ‘মাঝ পথে আমরা উইকেট নিতে পারেনি। এটা মূল পয়েন্ট। তবে এটাও ঠিক, আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছি। ৩৩০-৩৪০ দুর্দান্ত স্কোর হত। কিন্তু আমরা পারিনি। শেষদিকে দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়েছে।’ শেষ ৬ ওভারে ৪৬ রান করেছে বাংলাদেশ। এখানে আরও ৩০-৪০ রান হলে ঠিক ছিল না? তবে রান কম হয়েছে ঠিক। এরপরও বাংলাদেশের ভাল করার সুযোগ ছিল। যদি ২২ রানে থাকা মরগান আউট হয়ে যেতেন। মরগানের ক্যাচ ধরার পর তামিম অনেক উৎসাহ দেখান। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল ঘাসে ছোঁয়া লেগেছে। আম্পায়াররাও তাই আউট দেননি। আম্পায়াররা অবশ্য আগেই নটআউট সিঙ্গেল দেন। থার্ড আম্পায়ারও তাই খুব বেশি এ নিয়ে দেখেননি। তামিম এজন্য উত্তেজনাও দেখান। অনেক ক্ষোভও দেখান। এ নিয়ে মাশরাফিকে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘আমি মাঠ থেকে এসেছি। তাই কিছু এখনই বলতে পারছি না। তবে আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিই চূড়ান্ত।’ সঙ্গে এও যোগ করেন, ‘ও (তামিম) পুরো আত্মবিশ্বাসী ছিল। এটা ক্যাচ। তার বিশ্বাস ছিল। আম্পায়াররা হয়ত বা ওখান থেকে আরও ভাল দেখেছে। তবে দিনশেষে ফিল্ডার যে থাকে তার অনুভূতিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সে এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করে ক্যাচটা হয়েছে। তবে সেটা আরও ক্লোজ করে দেখলে ভাল হত। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে কিনা আমি জানি না। তবে আরেকটু ক্লোজ করে দেখলে হয়ত আরও ভাল বোঝা যেত।’ অনেক বাংলাদেশী সমর্থক ওভাল স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে এসেছিল। এমন সমর্থন কী আশা করেছিলেন মাশরাফি? তিনি জানান, ‘লন্ডনে অনেক বাংলাদেশী বসবাস করে। তারা এসেছে এবং সমর্থন দিয়েছে। শুধু ওভালেই নয়, সর্বশেষ বিশ্বকাপে (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে), এমনকি আয়ারল্যান্ডেও তিনজাতি সিরিজে তারা মাঠে এসেছে। সমর্থনও দিয়েছে। আমরা কিছু দিতে পারিনি। তবে তাদের ধন্যবাদ। তারা এসেছে এবং সমর্থনও দিয়েছে।’ শুরু থেকে সবকিছুই পরিকল্পিত মনে হচ্ছিল। শেষে গিয়ে যদিও জয়টা আসেনি। ম্যাচে আসলে কী পরিকল্পনা ছিল? মাশরাফি জানান, ‘আমরা চিন্তা করেছি যদি সাত ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলি, তাহলে এখানে ২৬০ বা ২৮০ করে জেতা সম্ভব না। জেনিয়ুইন পাঁচটা বোলার থাকার পরও। সেক্ষেত্রে আমরা যদি ৩৩০ করতে পারি, অন্য দলের ওপর চাপ তৈরি করে যদি ৩৩০ করতে পারি, তাহলে হয়ত এক্সট্রা বোলার নিয়ে ২০ থেকে ৩০টা রান কনসিডার করতে পারি। আমরা আসলে যে চিন্তা করেছি, সেই লাইনেই ছিলাম। কিন্তু তামিমের আউটটার পর মুশফিকও আউট হলো। পরপর দুইটা সেট ব্যাটসম্যান আউট হয়ে নতুনরা এসে ওভাবে রানটা করতে পারেনি। ৩২০ অন্তত হওয়ার কথাই ছিল। ঠিকমতো ব্যাটিং যদি হত ৩২০ রানই হত। কিন্তু করতে পারিনি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তাছাড়া আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা দ্রুত উইকেট পাওয়ার পরও হেলস এবং রুটের উইকেট চাচ্ছিলাম, যেভাবেই হোক একটা উইকেট চাচ্ছিলাম। আমার মনে হয় ওরাও খুব ভাল হ্যান্ডেল করেছে। মুস্তাফিজকে ওরা খুব ভাল হ্যাান্ডেল করেছে। উইকেটটা না পাওয়াতে ওদের পার্টনারশিপটা বড় হয়ে গেছে। তারপর আবার মরগানের উইকেটটা যদি ওই সময় পাওয়া যেত, তাহলে হয়ত বা চাপ তৈরি হত। তখনও ৭ করে রান লাগে। একটা-দুইটা উইকেট পড়লে ৮ থেকে ৯ রানে চলে যেত। তখন কঠিন হয়ে যেত।’ ৩০৫ রান করার পর ইংল্যান্ডকে চাপে রাখার কথা। যেভাবে জিতেছে ইংল্যান্ড এত সহজেই জেতার কথা না। কষ্ট করে, লড়াই করেই জয় তুলে নেয়ার কথা। আমাদের বোলিংটা ভাল হয়নি? মাশরাফি জানান, ‘ধরেন ৩০৫ রান যে কোন উইকেটেই কঠিন। এটাতো স্বাভাবিক। তবে বোলিং যে আপ টু দ্য মার্ক হয়নি, তা তো বলতেই হবে। কিন্তু ইংল্যান্ডের সম্প্রতি যত ম্যাচ দেখবেন সবগুলোই ৩৩০, ৩৪০ করে হচ্ছে। সেই রান আবার চেজও হচ্ছে। ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার যেটা ম্যাচ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ত জিততে পারেনি। ৭ বলে ৭ রান লাগত। দুর্ভাগ্য এ রকম পরিস্থিতিতে জিততে পারেনি। তবে ৩২০-৩০ করেও নিরাপদে থাকা খুব কঠিন। অন্যান্য দলের পাঁচ থেকে ছয়জন জেনুইন বোলার থাকার পরও। আমরা আসলে ওই সুযোগটাই নিচ্ছি। যে কোন একদিকে আমাদের যেতে হবে। আমরা বোলিং হেভি করে। বা ব্যাটিং হেভি করে। আমরা আসলে চেষ্টা করছিলাম যে আমরা ৩৪০ বা ৩৩০ করতে পারি কিনা। অতিরিক্ত একটা ব্যাটসম্যান নিয়ে। তখন আমাদের পার্টটাইম বোলারও যদি ৭০ কিংবা ৮০ রান দেয়, উইকেট যদি একটা দুইটা বের করে নেয়া যায়, আমরা ওই ম্যাচে টিকে থাকতে পারব। তবে এই উইকেটে আসলে ৩০০ ঠেকাতে হলে আরও এক্সট্রা অর্ডিনাারি বোলিং এবং কিছুটা লাক লাগবে। অথবা মুস্তাফিজের যেমন কয়েকটা এজ হয়েছে, সেগুলো যদি কিপারের হাতে যেত, তাহলে হয়ত আমরা ম্যাচে ফিরে আসতে পারতাম।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হয়নি। এবার সামনে অস্ট্রেলিয়া। তাদের বিপক্ষে কি কিছু হবে?
×