ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা ট্রাম্পের ॥ প্রতিবাদে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ

বিশ্বব্যাপী নিন্দা, ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৩ জুন ২০১৭

বিশ্বব্যাপী নিন্দা, ক্ষোভ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বর্তমান চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূল নয়, এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি তিন ট্রিলিয়নের ডলারের মতো হ্রাস পাবে এবং ৬৫ লাখ মার্কিন নাগরিক বেকার হয়ে পড়বে। আমি নির্বাচিত হয়েছি পিটসবার্গের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে, প্যারিসের জনগণের নয়। ভবিষ্যতে আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণ করে এমন ধরনের কোন চুক্তি হয় তবে তা নিয়ে তিনি আলোচনা করতে প্রস্তুত আছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কেননা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের ১৮৭টি রাষ্ট্র নিজ নিজ দেশে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ দেড় থেকে দুই এককে কমিয়ে আনবে। যুক্তরাষ্ট্র একাই বিশ্বের ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে। এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে তার ওপর চুক্তি মেনে চলার আর কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না। দেশটি এখন পূর্ণোদ্যমে তার কয়লা শিল্পসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য শিল্প কারখানা চালু করতে পারবে। পক্ষান্তরে এতদিন যেসব উন্নয়নশীল দেশ এবং পৃথিবীর দ্বীপদেশ ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাসমূহে বিরূপ জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আর্থিক অনুদান বা সাহায্য প্রদান করা হতো সে তহবিলে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুত অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দেবে। ট্রাম্পের গৃহীত এই পদক্ষেপের প্রতি নিজ দেশের কিছু শিল্পোদ্যোক্তা ও রিপাবলিকান ছাড়া খুব কম মানুষই স্বাগত জানিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনকে এই মর্মে অভিযুক্ত করেন যে, তারা ভবিষ্যতকে অস্বীকার করল। সিনেটের রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককোনেল অবশ্য এটিকে আমেরিকার জ্বালানি খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে সহায়ক হবে বলে সমর্থন করেছেন। এ ছাড়া পুরো বিশ্ব ট্রাম্পের জলবায়ু চুক্তিবিরোধী অবস্থানকে নিন্দা ও কঠোর সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে দারুণ হতাশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করে বলেন, গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস ও বিশ্ব নিরাপত্তা বিধানে এটি একটি বড় ধাক্কা। সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের মতো নরডিক দেশগুলো ট্রাম্পের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণ করে নতুন কোন চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মান নেতৃবৃন্দ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কানাডার পরিবেশমন্ত্রী ক্যাথরিন ম্যাককেনা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ট্রাম্পকে ফোন করে তার হতাশার কথা জানিয়ে বলেন, এই চুক্তি ভবিষ্যত প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার ক্ষণটিকে দুঃখময় দিবস হিসেবে অভিহিত করেছে। নিউজিল্যান্ডের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী পলা বেনেট বলেন, ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি ছেড়ে যাওয়ার পক্ষে যা যা বলেছেন তা সব ভুল। তিনি যুক্তি দেখান যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম অর্থই এই তহবিলে প্রদান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ জাপানের পরিবেশমন্ত্রী কোইচি ইয়ামামোতো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন মানবতার বিপক্ষে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল। এদিকে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ডিজনীর প্রধান নির্বাহী রবার্ট ইগের এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এলন মাস্ক দুইজনই হোয়াইট হাইসের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
×