ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন

মোরার আঘাতের পর বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৩ জুন ২০১৭

মোরার আঘাতের পর বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও জাতিসংঘ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা, আন্তর্জাতিক রেড ক্রসসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন ইতোমধ্যেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোরার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে জাতিসংঘ, বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারী সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা এই গ্রুপ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করবে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের অফিসের বরাত দিয়ে রিলিফওয়েব জানিয়েছে, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আর্থিক সংস্থান ও অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। মোরা আঘাতের পরেই প্রতিবেশী ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ভারতীয় নৌ বাহিনীর জাহাজ আইএনএস সুমিত্রা ত্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের মধ্যে থেকে ভাসমান ৩৩ জনকে উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণ হস্তান্তর করা হয়। ঢাকার জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোরার আঘাতের পর জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। মোরার আঘাতের পর বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশের মানুষের বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থা একযোগে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পদক্ষেপে কাজ করছে। এসব সংস্থা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ অফিস জানায়, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও মোরার আঘাতে আক্রান্ত হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোহিঙ্গা নাগরিকসহ তিন লাখেরও বেশি নাগরিক মোরার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব লোকদের দ্রুত অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ও তার বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ইউএনআইটিএ-আর) অপারেশনাল স্যাটেলাইটের (ইউএনওএসএটি) তথ্য অনুযায়ী গত ৩০ মে প্রায় এক কোটি ৭৪ হাজার মানুষের ওপর দিয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। ন্যাশনাল হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও হেলথ সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে ৬ জন নিহত, ১৩৬ জন আহত হয়। তবে সরকারী তথ্যমতে, প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষ। প্রায় ৫২ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষের আশ্রয় প্রয়োজন। আক্রান্ত এলাকার মধ্যে কক্সবাজার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। এ জেলায় প্রায় ১৭ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে বসবাসকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অভিবাসীদের ঘর-বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বর্তমানে আশ্রয়, খাদ্য, জ্বালানি ও রান্নার প্রয়োজনীয় শুকনা স্থানের সঙ্কটে রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ (৮ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন) টাকা এবং এক হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছে। নৌবাহিনীর ২টি জাহাজে করে দূরবর্তী দ্বিপসমূহেও এসব সাহায্য পৌঁছে দেয়া হবে। ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পে ও বসতিদের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) পক্ষ থেকে ১২২ মেট্রিক টন বিস্কুট বিতরণ করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকায় প্লাস্টিকের শিট, দড়িসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য রেড ক্রস এ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইএফআরসি) জরুরী খাদ্য, পানি ও আবাসন ব্যবস্থার জন্য ১ লাখ ৭ হাজার ডিজাস্টার রিলিফ ইমার্জেন্সি ফান্ড (ডিআরইএফ) সংগ্রহ করেছে।
×