ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজতের ধৃষ্টতা বেড়েছে ॥ শাহরিয়ার কবির

প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে নির্মূল কমিটি হতাশ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ জুন ২০১৭

প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে নির্মূল কমিটি হতাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি জামায়াতের নেতাদের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক বিষয় মনে করেন, যা আমাদের হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ শুনানিকালে তিনি সম্পূর্ণ অযাচিত ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের সম্পর্কে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সকল মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। তার সময়েই, দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে একটি হয়েছে। তিনি যেসব বক্তব্য রেখেছেন তা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কোন অর্থে জামায়াতের নেতাদের মতো প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক বিষয় মনে করেন, আমরা তার ব্যাখ্যা দাবি করছি। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজত আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর হেফাতের ধৃষ্টতা আরও বেড়েছে। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে মন্থরতা এবং মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উল্লম্ফন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর হেফাজতে ইসলামের ধৃষ্টতা বেড়েই চলেছে। সুপ্রীমকোর্টের ভাস্কর্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হেফাজত উল্লসিত হয়েছে। এর পরই রাতের অন্ধকারে ভাস্কর্য অপসারণ ও পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এমন নাটকটি দেশবাসী দেখেছেন। এর ফলে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক ভাস্কর্য ভাঙ্গার হুমকি প্রকাশ্যে দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তার সরকারকে উৎখাতের জন্য রাজধানীতে বর্বর তা-ব চালিয়েছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও তারা বলেছিলে নাস্তিক। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জামায়াত-হেফাজতকে আর ছাড় দেয়া হবে না। তখন হেফাজতে নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নি সংযোগ ও সন্ত্রাসের জন্য শতাধিক মামলা হয়েছে। অথচ এর পর হেফাজতের মতো উগ্র মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতি সরকার হঠাৎ কেন নমনীয় হয়েছে এর ব্যাখ্যা সরকারকে দিতে হবে। শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রিভিউ শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন এবং ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা নির্মূল কমিটিকে হতাশ এবং উদ্বিগ্ন করেছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের মামলা চলাকালে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি কোন্ বিবেচনায় ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জামায়াতের মতো নেতিবাচক অর্থে রাজনৈতিক বিষয় মনে করেন, আমরা তার ব্যাখ্যা দাবি করছি। সংগঠনের সভাপতি বলেন, প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর দুটি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে একটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এই ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেয়ার জন্য নোটিস করেছেন বার বার। এছাড়াও কুখ্যাত রাজাকার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা চলাকালে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি (প্রধান বিচারপতি) দেখা করেছেন এবং কথা বলেছেন; যা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে যেমন হতাশ এবং ক্ষুব্ধ করেছে তেমনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও গণহত্যাকারীদের উল্লসিত করেছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, দেশে হেফাজত ইসলাম ও মৌলবাদী সংগঠনগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, একদিন খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই তারা হিজাব পড়িয়ে ছাড়বে। তারা ভাস্কর্য ভাংচুর ও উচ্ছেদে প্রকাশ্যে নেমেছে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বিগত ১৫ মে ২০১৭, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের ওপর রিভিউ দরখাস্ত শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক এবং অযাচিতভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের সম্পর্কে সংবাদপত্রে যা পড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি সামসুল হুদা, শিল্পী হাশেম খান, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, স্থপতি রবিউল হাসান, ক্যাপ্টেন অবঃ আলমগীর সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সহসাধারণ সম্পাদক ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকবর টাবী, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল প্রমুখ।
×