ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুষার প্রসূন

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ রহস্যাবৃত ঘরে বাস করে আমার ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২ জুন ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ রহস্যাবৃত ঘরে বাস করে আমার ভাবনা

একটি রহস্যাবৃত ঘরে বাস করে আমার ভাবনা। আবার প্রেম-ঘৃণা, জানা-অজানা, মানুষ-মহাকাল, শব্দ-নৈঃশব্দ, পঞ্চভূত-পঞ্চইন্দ্রীয় সবকিছুর বসবাস ঐ ভাবনারই মধ্যে। এদের কাউকে এড়াতে পারি না। ফলে বেরিয়ে আসতে পারি না। সেই স্কুলবেলা থেকেই দেখছি শব্দের মাধ্যমে একটা ঘোর তৈরি হয়ে মাথার ভেতরে সবসময় খেলা করে বেড়াচ্ছে। আবার সেই শব্দগুলো কখন দানা বেঁধে কবিতায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে বলতেই পারব না। জীবন ও ব্রহ্মা- পরিভ্রমণের জারিত রসের মধ্যে কোন দর্শনের জন্ম না হলে কবিতার সঙ্গে একান্ত আলাপ জমে ওঠে না। বিশেষ কোন চিন্তা এসে ধরা না দিলে বাড়াবাড়ি করতে যাই না। কবিতার প্রেমে পড়ে আর কিছু না হোক কবিতা সামান্য কয়েকটা লিখেছি। এদের মধ্যে দু’একটা থেকে গেলেই নির্বাণ। এর বেশি চাওয়া নেই। ** সময়ের বসবাস ঢেউয়ের অস্তিত্বে থাকে অস্থিরতা, বন্দরে বন্দরে সে লিখে রাখে ভাঙনের পরিচয়, চিরদিন মাঝিরা ভাসতে থাকে অদৃশ্য চোখের জলে, হয়ত দৃশ্য বলতে কিছু নেই...! সামনে সীমানা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছো...অসুখের মত লম্বা ত্রিসিমানা, কেন বারবার আমাদের জাগিয়ে রেখে- বিশ্রাম নিতে সন্ধ্যার সীমান্তে নিজেকে লুকাও... হারিয়ে যাই... অনেক আঁধারবর্ষ অতিক্রম করে ফিরে আসি- রোডের নিয়নে মুখস্থ করি রঙিন সিগনাল, অবাক ভাবনাগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে ল্যাম্পপোস্টের উদারতায়... একদিন ট্রাফিকের রঙিন হাত নেমে যায়, দুনিয়া কাঁপিয়ে চলে যায় পৃথিবীর সমস্ত গতি... সকলেই যেন গন্তব্যহীন। যায় আলোকবর্ষ, আঁধারবর্ষ থেকে আরও দূরে... যেখানে বাস করে কেবলমাত্র সময়, আপন অহংকারে... ** বৃত্ত ও শূন্যের মাঝখানে বৃত্ত ও শূন্যের মাঝখানে সকল চিত্রকল্প উধাও আছি তাদেরই প্রতিবেশী হয়ে খোঁজ করি গণিতের কৌশল শুক্রাণু, ডিম্বাণু থেকে এই ‘আমি’ অবধি স্মরণের গভীরতা তল ছুঁতে গিয়ে সময়ের বিপরীত থেকে ধেয়ে আসা দেহকোষ খসে যায়। গড়িয়ে চলা পাথর ক্ষুদ্র হতে থাকে তাতে তুমি রঙিন প্রলেপ দিয়ে মধ্যমার আঙটি বানিয়ে তুলে দাও মুগ্ধতা করতলে পিঁড়ি পেতে বসে। সামনে অবাধ জল, অবাধ্য সাঁতার জ্যোতিষ্কের কানামাছি আমার জ্যোতি কেড়ে তৃষ্ণা বাড়িয়ে মার্বেল বানায়। কিছু রেখা ও রঙ পশ্চিমে হেলে পড়ে শুন্য থেকে মহাশূন্য বরাবার খেলা চলতেই থাকে অথবা যেখান থেকে ধারণার জন্ম হয়েছিলো সেখান থেকে আবারও গোলকধাঁধা তৈরি হয়। ** একটা খেয়াল একাধিক যন্ত্রানুষঙ্গ একটা খেয়াল একাধিক যন্ত্রানুষঙ্গ সবমিলে ধ্বংসের গান হয়, হয়ে গেলে সৌরম-লের মত একটা বিরহকাব্যের কনসেপ্ট আর যা লিখতে হবে আমাকেই। খ-িত মেধায় পারিনা বলেই চাইছি তোমার সমান করে নাও। সঙ্গম হবে তোমার সঙ্গে। না চাইব পৃথক নারী, না বিস্তীর্ণ অরণ্য, না সমুদ্র- সবই তো তোমার ভুলের ছাপচিত্র- অহেতুক কাঁধে নিয়ে বয়ে চলা একটা কালচে সরাইগ্রামের দিকে... প্রতিদিন... যদি কখনও বাঁক নিয়েছি- সেখানেও বোধহীন বিড়ম্বনা, অন্নপূর্ণার পরিবার খালি হাতে বেড়াতে আসেন, ঝোলায় রাখেন অসীমের দরপত্র, মুখে রাখেন আখেরী মুনাজাতের শৈল্পিক গভীরতা অথচ এ দেহ বহনে অক্ষম। বড় হয়ে উঠি দিনের শেষে, অথচ বয়সের কাঁটা ঘুরিয়ে পাঠিয়ে দাও নিয়তির কোলে, দুধপানরত... নিষ্পাপ...। উচ্চতা পেয়েও ক্ষুদ্র হয়ে যাবার আপেক্ষিক অক্ষরবৃত্তে ঘুরছি... গ্রহ-নক্ষত্রের চতুর মাত্রায় আর কত ঘোরানোর ইচ্ছা পুষে রাখ? ** এই জমির মালিক ‘এই জমির মালিক, দু’টো শালিক।’ এত এত উড়াল পথের পথিক, পালাচ্ছে উড়ে সুখ, মেঘের নরম তলপেট, হাওয়া মে উড়তা ওড়না, সময়ের অস্থিরতা, খোঁপায় রাখা গন্ধরাজ, বিমানবালা... সবই ঘুরেফিরে উড়ছে। তাদেরকে না দেখে, যে শালিক দু’টো এইমাত্র ভূপৃষ্ঠে বসেছে কিছু কথা বলার উদ্দেশে, তাদের কেন উড়িয়ে দিতে চাওয়া? পৃথিবী কেনার দলিল কার হাতে থাকে, কিসের উপর ভর করে উড়িয়ে দেওয়া? যারা নিজের নাম লিখে রাখে জমি দখলের আদিম মত্ততায়, তারা তো সবই হারায়, হারাতে হারাতে মাটির গভীরে নতজানু সময়। তবু ভুল এক সান্ত¡নায় লিখে রাখা, ‘এই জমির মালিক, সুজাউদ্দিন বণিক।’ আত্মহারা আপন মানুষগুলো এইভাবে একদিন অতিথি পাখি হয়ে চলে যায় নিজের জমি চিনে নিতে, অন্ধ কফিনের প্রবাসে... ** ভ্রমণের পা-ুলিপি দেহের সামনে দিয়ে একটি পথ ভ্রমণের পা-ুলিপি নিয়ে শুয়ে আছেÑ পড়ার ভান করে কিছুদূর এগিয়ে গিয়েছি নিঃশব্দে। ভ্রমণজ্ঞানহীন এই আমি পড়তে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছি। যেতে হবে বহুদূর তবু চড়ুইভীতি আমাকে ধরে রাখে দেহের চুম্বকে। এভাবে কী যাওয়া যায়। চোখে জ্বালিয়ে রেখে আলো আঁধারির যোগফল তোমার নক্ষত্র পাহারা দিচ্ছে আমার প্রতিটি দেহকোষ। ছাড়পত্র হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকি মানুষের বেশ ধরে। রোমাঞ্চ কুড়াবার দল কুয়াশার সঙ্গে মিছিলে নামে শাদা এ্যাপ্রোন পরে। উলঙ্গ আদিমতা কেন যে ভুল করে পরে আছে পোশাকের সাময়িকী, কখন যে সে টান মেরে খুলে নেয় কে জানে! বিষ্ময় ঝুলে থাকে কপালে। প্রশ্ন খুলে বসে থাকি মনের দরজায়। ধারালো একাকীত্ব লম্বা হয়। সামনে দিয়ে একটু একটু করে হারাতে থাকে রোমাঞ্চ, কুয়াশা, সাদা এপ্রোন -ভুল গন্তব্যে। পাঠক হারিয়ে ফেলে অচিন পথ ফলে ভ্রমণের পা-ুলিপি নিয়ে সে চিরকাল পথেই শুয়ে থাকে।
×