ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আশরাফ গনি সরকারের নিরাপত্তা সামর্থ্য প্রশ্নবিদ্ধ

আফগান যুদ্ধ আর কত দূর

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২ জুন ২০১৭

আফগান যুদ্ধ আর কত দূর

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল কয়েক বছর ধরে তুলনামূলক শান্ত ছিল। নিয়মিত ব্যবধানে সহিংস হামলার খবর তেমন একটা আসেনি। বুধবার রাজধানী কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলা এটিই দেখিয়ে দিল যে দেশটি এখনও বিশ্বের অন্যতম অনিরাপদ এলাকা। এছাড়া আকস্মিক বড় কোন হামলা প্রতিরোধের সামর্থ্য এখনও সরকারী বাহিনী আয়ত্ত্বের বাইরে। হামলার দায় এখনও পর্যন্ত কোন গ্রুপ স্বীকার করেনি। খবর এএফপি, ডেইলি টাইমস ও গার্ডিয়ানের। বুধবার হামলা আফগান সরকারের বেসামরিক লোকজনকে রক্ষার সামর্থ্য নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ওই হামলায় ৮০ জন নিহত ও ৩ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। নিহত ও আহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন। কাবুলের সরকারী ও সামরিক স্থাপনাগুলো অতি সুরক্ষিত। কিন্তু বেসামরিক স্থাপনাগুলোর অবস্থা সে রকম নয়। পশ্চিমা দেশগুলোর আর্থিক ও সামরিক সহায়তা সত্ত্বে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকার জনগণের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিন বছর আগে আমেরিকা ও ব্রিটেন আফগানিস্তানে তাদের মিশন শেষ করেছে। আফগান সরকারকে তাই এখন পুরো দেশের নিরাপত্তা দেখতে হচ্ছে। কোন পশ্চিমা দেশই এখন আর দেশটিতে নতুন করে যুদ্ধে জড়ানোর আগ্রহ বোধ করছে না। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়েছিল। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র মিশন গুটিয়ে নেয়ার পর থেকে দেশটিতে ক্রমাগত সহিংসতা ও গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে থাকে। কয়েকজন যুদ্ধবাজ নেতার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় পুরো দেশ। এরই পটভূমিতে ধর্মীয় কট্টরপন্থী গ্রুপ তালেবানের উত্থান ঘটে। ২০০১ সালে তালেবান উৎখাতের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়। যা চলে প্রায় দেড় দশক পর্যন্ত। হামলার দায় এখনও পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেনি। যাকে কিছুটা অস্বাভবিক বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া শুধু বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করে হামলাও অনেকটা বিরল ঘটনা। বিস্ফোরকগুলো একটি ট্যাঙ্কারের মধ্যে লুকানো ছিল। এর সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সাধারণত পয়ঃনিষ্কাশন নালা পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, ভুলবশত নির্ধারিত সময়ের আগেই বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। ঘটনা যাই হোক এই ঘটনা একদিকে জনমনে যেমন উৎকণ্ঠা বহু দূর বাড়িয়েছে। তেমনি এটি গনি সরকারের সক্ষমতা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন করার সুযোগ এনে দিয়েছে। এদিকে বুধবারের হামলার নিন্দা করেছে তালেবান। এক বিবৃতিতে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, তালেবান বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে এ হামলার নিন্দা জানায়। কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এ ধরনের হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের ভুগতে হয়। স্প্যানিশ নিউজ এজেন্সি ইএফইতে ওই বিবৃতি প্রকাশিত হয়। আহতদের কাবুলের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আফগানিস্তানের জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক মুখপাত্র। ওই বিস্ফোরণ স্থলটি ভারতীয় দূতাবাস থেকে কয়েক শ’ মিটার দূরে এবং ভারতীয় দূতাবাসের সব কর্মী নিরাপদ আছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। হেলমান্দ, কান্দাহার ও নানগারহারের মতো পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চরমপন্থী গ্রুপগুলোর নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছিল। এসব এলাকায় বোমা হামলা নৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। কিন্তু কাবুল ছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত। বুধবারের হামলা ছাড়াও সম্প্রতি কাবুলে বেশকিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পুরো কাবুল প্রদেশে বেসামরিক লোকজন নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে স্থানীয় জাতিসংঘ মিশন এ বছর এপ্রিল মাসেই সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিল। হেলমান্দে ২৭ মে বোমা হামলায় ১৮ জন নিহত হন। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমম্বয়হীনতা বাড়ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
×