ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পূর্ণ বিবরণ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২ জুন ২০১৭

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পূর্ণ বিবরণ

মাননীয় স্পীকার ১৭৬। এতক্ষণ বাজেট নিয়ে আমি যে বক্তব্য রেখেছি তাতে মোট রাজস্ব আদায়ের হিসাব হলো ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। তার সঙ্গে বৈদেশিক সূত্রে প্রাপ্ত সহায়তার হিসাব হলো ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। কিছুটা বাজেট ঘাটতি রেখে মোট ব্যয়ের হিসাব হচ্ছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এর সিংহভাগ জোগাড় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। রাজস্ব আহরণের উৎস হলো মাত্র চারটি। যথা- আয় ও কর্পোরেট কর, আমদানি ও রফতানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক। চলতি বছরের সংশোধিত এবং আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী এগুলোর হিসাব হলো: ১৭৭। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট। এ বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের প্রাক্কলন হচ্ছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে আমাদের সরকার গত ৮ বছরে রাজস্ব বোর্ডকে ব্যাপকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রদান করেছে। রাজস্ব বোর্ডের প্রতিটি বিভাগে জনবল বৃদ্ধি হয়েছে এবং তাদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও আয়কর, আমদানি ও রফতানি শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর বিভাগের আধুনিকায়ন বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ বিভাগগুলোতে অটোমেশন প্রক্রিয়াও ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিগত ৮ বছরে আমরা মোটামুটিভাবে এ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি যে, রাজস্ব প্রদান হয়রানির বিষয় নয় বরং রাজস্ব প্রদান জাতীয় দায়িত্ব। গত বাজেটে আমি আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১৫ লাখে উন্নীত করার কথা বলেছিলাম এবং করদাতা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ২৫ লাখের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলাম। সৌভাগ্যবশত এ দু’টি লক্ষ্যমাত্রা আমরা অতিক্রম করেছি। এবারে এই বছরে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১৬ লাখের মতো এবং করদাতা নিবন্ধনের তথা ই-টিআইএন ধারীর সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ। ১৭৮। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দিন দিন বড় হচ্ছে। আগামী দুই দশকে বাংলাদেশ বিশ্বের ত্রিশটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটিতে উন্নীত হবে। অর্থনীতির আন্তর্জাতিকতাও ক্রমশ বাড়ছে। অনেক নতুন বিদেশী বিনিয়োগও দেশে আসছে। আমরা বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক অর্থায়ন পদ্ধতি (ওহহড়াধঃরাব ঋরহধহপরহম গবপযধহরংস) প্রবর্তনকে উৎসাহিত করছি। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীগণ করনীতির ধারাবাহিকতা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছেন। সে প্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে করনীতি সংস্কারে আরো তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে: (ক) করনীতির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা, (খ) প্রায়োগিক স্পষ্টতা এবং (গ) ব্যবসা পরিচালনা সহজীকরণ। ১৭৯। এ বছরের বাজেটেও কর হার না বাড়িয়ে কর পরিপালন বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আহরণে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবও বাজেটে রয়েছে। বাজেটে উপস্থাপিত প্রস্তাবাবলী বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের কর পরিপালন সংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হবে এ প্রত্যাশা করছি। ১৮০। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের অংশ হিসেবে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ জারি করা হয়। তবে এতদিন ধরে বাস্তবায়ন হয়েছে আংশিকভাবে। ২০১৬ সালে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা গেজেট করা হয়েছে। এই আইনটি নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে যথেষ্ট আপত্তি আমরা সযতেœ বিবেচনা করেছি। এ বিষয়ে, আমাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, এই আইনটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তবে, এজন্য এ আইনের যথেষ্ট সংস্কার সাধনের প্রস্তাব আমি এখন উপস্থাপন করবো। ১৮১। আমরা জানি যে, বিশ্বে অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্য যেভাবে প্রসারিত হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে আমদানি ও রফতানি শুল্কের গুরুত্ব চলে যাবে। বর্তমানে আমরা অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য যেমন- কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, তথ্য-প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতের পণ্যে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহত বা মওকুফ সুবিধা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব দিয়েছি। ১৮২। বাণিজ্য উদারীকরণের লক্ষ্যে ডড়ৎষফ ঞৎধফব ঙৎমধহরুধঃরড়হ (ডঞঙ) এর আওতায় ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ থেকে ঞৎধফব ঋধপরষরঃধঃরড়হ অমৎববসবহঃ (ঞঋঅ) কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ এ অমৎববসবহঃ অনুমোদন করেছে । এটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে আমদানি-রফতানি সহজ ও দ্রুত হবে যা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইতোমধ্যে অফাধহপব জঁষরহম ব্যবস্থা চালু হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সকল স্টেকহোল্ডারদের মাঝে অনলাইন ইন্টারফেস স্থাপনের লক্ষ্যে ঘধঃরড়হধষ ঝরহমষব ডরহফড়ি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করছে। একই ধারাবাহিকতায় সৎ ব্যবসায়ীদের বাড়তি প্রণোদনা হিসেবে দ্রুততার সাথে পণ্য খালাসের ও অপরাপর সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে অঁঃযড়ৎরংবফ ঊপড়হড়সরপ ঙঢ়বৎধঃড়ৎ (অঊঙ) কর্মসূচীটি পাইলট হিসেবে প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি। কাস্টমস ব্যবস্থায় ব্যবহৃত অঝণঈটউঅ ডড়ৎষফ সিস্টেমে ইএক্সপি (ঊীঢ়), ই-পেমেন্ট (ঊ-ঢ়ধুসবহঃ) চালু হয়েছে। ১৮৩। ব্যবহার সুবিধা এবং উন্নত বিশ্বে অনুসৃত উত্তম চর্চা (ইবংঃ চৎধপঃরপবং) অন্তর্ভুক্ত করে বাংলা ভাষায় প্রণীত কাস্টমস আইন, ২০১৭ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। সে লক্ষ্যে, কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত অঝণঈটউঅ ডড়ৎষফ সিস্টেম বন্ড মডিউল, ভ্যালুয়েশন মডিউল, অকশন মডিউল, মামলা মডিউল, বন্দর ও কাস্টমস এর মধ্যে কানেকটিভিটি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মডিউল ইত্যাদি কাজ সমাপ্ত করে উক্ত সিস্টেমকে আরো দক্ষ ও কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিচারাধীন রাজস্ব সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ (অউজ) কার্যক্রমকে আরো জোরদার ও গতিশীল করার পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। ১৮৪। দেশের সম্মানিত আয়করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে চলতি অর্থবছরে ৩৭০ জন সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী এবং ১৪৭ জন দীর্ঘসময় আয়কর প্রদানকারী মিলে মোট ৫১৭ জন করদাতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সৎ করদাতাদের উৎসাহিতকরণে এবং নতুন নতুন করদাতাকে করের আওতায় আনার লক্ষ্যে ট্যাক্স কার্ডের ব্যাপ্তি সম্প্রসারণ করে এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১৪১টি সম্মানসূচক ট্যাক্স কার্ড প্রদান করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো পরিবারের সকল সদস্য কর দিলে সে পরিবারকে আমি ‘কর বাহাদুর’ পরিবার হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করছি। ১৮৫। রাজস্ব আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজের গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য বিসিএস কর একাডেমি এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং প্রথমবারের মতো এদের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। ১৮৬। দেশের মুদ্রামোবাইল পাচার রোধকল্পে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (ঘইজ), বাংলাদেশ ব্যাংক (ইই), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (ইঋওউ) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইওউঅ) একত্রে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (ঈওঈ) ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করা হয়েছে। ১৮৭। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এড়ড়ফ এড়াবৎহধহপব ধহফ গড়ফবৎহ গধহধমবসবহঃ (এএগগ) পদ্ধতির আওতায় কাজ করছে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। করদাতাদের মাঝে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বকেয়া রাজস্ব আদায়ে ‘রাজস্ব হালখাতা’ কর্মসূচী গ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। যুগোপযোগী কর নীতি, দক্ষ কর ব্যবস্থাপনা এবং সম্মানিত ব্যবসায়ীসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক্কলিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং আমদানি ও রফতানি শুল্ক প্রত্যক্ষ কর: আয়কর মাননীয় স্পীকার ১৮৮। একটি আদর্শ কর ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার বিগত কয়েক বছরে করনীতি ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার এনেছে। বাংলাদেশে আগে রিটার্ন দাখিলের একটি শেষ তারিখ আইনে ছিল, কিন্তু সেটা কখনোই খুব একটা মানা হতো না। সবাই অপেক্ষা করে থাকতেন সময় কবে বাড়ানো হবে। এ সংস্কৃতির পরিবর্তন আমরা করতে পেরেছি। গত বাজেটে আমরা উন্নত বিশ্বের মতো কর দিবস বা ঞধী উধু এর ধারণা প্রবর্তন করেছি এবং তা সকলে গ্রহণ করেছেন। প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের কর দিবস। আয়কর পরিপালনে (ঞধী পড়সঢ়ষরধহপব) এটি একটি মাইলফলক। আমাদের অন্যান্য সংস্কারগুলোও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছেন। কর নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিল সংখ্যা আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। আগামী দশকের মধ্যে আয়কর খাতে মোট কর রাজস্বের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ আহরণের যে পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে সে লক্ষ্য অর্জনের পথে আমরা খুব ভালোভাবে অগ্রসর হচ্ছি। আমি এখন প্রত্যক্ষ করের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো মহান সংসদে উপস্থাপন করছি। করমুক্ত সীমা ও করহার ১৮৯। এ বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মহিলা করদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণীর করদাতাদের জন্য এ সীমায় ছাড় ছিল। বাংলাদেশ করমুক্ত আয়ের সীমা কত হওয়া উচিত এ বিষয়ে প্রতি বছরই বেশ বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক ও আলোচনা হয়। করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণে একটি নীতিগত দর্শন থাকা উচিত। মাথাপিছু আয়ের অনুপাত ও মূল্যস্ফীতি - এ দুটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারিত হতে পারে। বাংলাদেশে করমুক্ত আয়ের সীমা মাথাপিছু আয়ের ২০০ শতাংশের বেশি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ অনুপাত ১০০ শতাংশের মধ্যে থাকে। এছাড়া আমাদের মুদ্রাস্ফীতিও এ মুহূর্তে কম, পাঁচ শতাংশের মতো। ফলে আগামী বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ও করহারে কোন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থলে ৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করছি। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের আমরা একটি সম্মানজনক হার ইতোপূর্বেই নির্ধারণ করে দিয়েছি। সারণি ৫ -এ কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের জন্য করহার উল্লেখ করা হলো: উল্লেখ্য, সকল ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের জন্য এ করমুক্ত সীমা আরো ২৫ হাজার টাকা বেশি হবে। ১৯০। বিদ্যমান আইনে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এবং কর্পোরেশনের বাইরের অন্যান্য এলাকার কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্য করদাতাদেরকে যথাক্রমে ৫ হাজার, ৪ হাজার ও ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে হয়। অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম করের এ হার বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। কোম্পানি করহার ১৯১। আমরা প্রায়ই বলি যে আমাদের কর্পোরেট করহার খুব বেশি। কিন্তু খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, সে ধারণা ঠিক নয়। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ। আমাদের এ করহার বৈশ্বিক গড়হার (২৪.২৯ শতাংশ) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। অনেক আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক গড় করহারের তুলনায় কিন্তু আমাদের করহার কম। নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির জন্য বিদ্যমান এ করহার ৩৫ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে প্রণোদনা প্রদানের স্বার্থে পাবলিকলি-ট্রেডেড এবং নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহারের এ ব্যবধান বজায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাংক, বীমা, মোবাইল ফোন কোম্পানি ইত্যাদির ক্ষেত্রে, যাদের করহার ৪০ শতাংশের বেশি, তা আমরা আগামীতে পর্যায়ক্রমে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছি। তবে যেহেতু এ বছর অন্য কোন ক্ষেত্রে করের হার বাড়ছে না, তাই রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আমি বিদ্যমান কোম্পানি করহার আগামী অর্থবছরের জন্য বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। সারণি’ ৬ -এ কোম্পানি করদাতার জন্য প্রস্তাবিত করহার উল্লেখ করা হলো: সমতা ও ন্যায্যতা ১৯২। সারচার্জ: অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে আয় ও সম্পদের বৈষম্য বাড়ার একটি সম্পর্ক থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এর ফলে সমাজে আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়ার যে ঝুঁকি রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি-করদাতার নিট সম্পদ সারচার্জ একটি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। দেশে একটি কার্যকর সম্পদ কর আইনের প্রচলন না হওয়া পর্যন্ত এ সারচার্জ বাহল রাখা প্রয়োজন। আমি ব্যক্তি-করদাতার নিট পরিসম্পদের প্রদর্শিত মূল্যের ভিত্তিতে আরোপিত সারচার্জের বিদ্যমান হার বহাল রাখার প্রস্তাব রাখছি: ১৯৩। নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অতিক্রম করলে ন্যূনতম সারচার্জের পরিমাণ ৩ হাজার টাকা বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। ১৯৪। সিগারেট, বিড়িসহ সকল তামাকজাত পণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব পণ্য ভোগের কারণে স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী করদাতার উক্ত ব্যবসায় হতে অর্জিত আয়ের উপর ২.৫ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায়ে সহায়তা এবং ব্যবসা পরিচালনা সহজীকরণ ১৯৫। তৈরি পোশাক শিল্প: দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতিতে এ খাত নানা চাপের মুখে আছে এবং উৎসে কর প্রদানের প্রত্যাহারপূর্বক নগদ সহায়তা দাবি করছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতকে আমরা সবসময় নানাবিধ প্রণোদনা ও বিশেষ কর সুবিধা প্রদান করে আসছি। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিতে নিয়োজিত করদাতাগণ বর্তমানে ০.৭০ শতাংশ হারে উৎসে কর এবং হ্রাসকৃত ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিচ্ছেন। আগামী বছর আয়করের হার আরো হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। ১৯৬। গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো খাত: অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় নির্মিত হধঃরড়হধষ যরমযধিুং, বীঢ়ৎবংংধিুং, ভষুড়াবৎং, বষবাধঃবফ ধহফ ধঃ-মৎধফব বীঢ়ৎবংংধিুং, ংঁনধিু ইত্যাদি অবকাঠামো খাতকে শর্তসাপেক্ষে কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি। ১৯৭। এ ছাড়াও প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায়ে সহায়তা এবং ব্যবসায় পরিচালনা সহজীকরণের জন্য আরও যেসব প্রস্তাব রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: ক) অনিবাসী মূল কোম্পানির সাথে সমন্বিত হিসাব রাখার সুবিধার্থে মূল কোম্পানির ব্রাঞ্চ অফিস ও লিয়াজোঁ অফিস এবং সাবসিডিয়ারি বা হোল্ডিং কোম্পানির সাবসিডিয়ারিকে অভিন্ন হিসাব বছর অনুসরণের সুযোগ প্রদান; খ) অষঃবৎহধঃরাব ওহাবংঃসবহঃ ঋঁহফ -কে কর অব্যাহতি প্রদান; এবং গ) তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি তালিকা পুনর্বিন্যাস করে নতুন কয়েকটি খাতকে কর অব্যাহতির আওতায় আনা। পোশাক শিল্পের বিশেষ অবস্থা ১৯৮। সবুজ কারখানার কর সুবিধা: টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য রাখার লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ দূষণরোধ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমরা এবারের করনীতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি সম্পৃক্ত করছি। তৈরি পোশাক খাতের যে সকল কোম্পানি-করদাতার কারখানার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৎববহ নঁরষফরহম পবৎঃরভরপধঃরড়হ থাকবে সে সকল কোম্পানির করহার ১৪ শতাংশে হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। সামাজিক দায়িত্ব ১৯৯। সামাজিক দায়িত্ব আমাদের করনীতির অন্যতম ভিত্তি। গত বাজেটে আমরা সামাজিক দায়িত্ব পালনের অনেক ক্ষেত্রে কর সুবিধার প্রস্তাব করেছিলাম। আগামী বছরের জন্য এক্ষেত্রে আরও যেসব প্রস্তাব রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: ক) বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট হতে প্রাপ্ত সম্মানী বা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, দুস্থভাতা বা অনুরূপ কল্যাণভাতার উপর কর অব্যাহতি; খ) সকল জাতীয় পদক/পুরস্কারের অর্থ ও সুবিধাকে কর অব্যাহতি; গ) ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে উন্নত মানের বাস ও মিনিবাস প্রচলনে প্রণোদনা প্রদানের স্বার্থে অবচয় পরিগণনায় বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২৫ লাখ টাকার যে সর্বোচ্চ ক্রয় সীমা ছিল তা প্রত্যাহার; ঘ) ঊষফবৎষু ঈধৎব ঐড়সব -এর আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান; এবং ঙ) পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখার স্বার্থে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান। আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা ২০০। বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাকে আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী করে পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চাসমূহ কর আইন ও কর ব্যবস্থাপনায় সংযোজন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো- ক) অনলাইনে রিটার্ন, আপীল আবেদন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদনসহ বিবিধ আবেদন গ্রহণ; খ) সিস্টেম জেনারেটেড আদেশ, নোটিস, সনদ ইত্যাদি ইস্যু; গ) করদাতার হিসাব, বিবরণী, দলিল, উপাত্ত ইত্যাদি ইলেকট্রনিক বিন্যাসে বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে কর বিভাগের নিকট দাখিলের বিধান প্রবর্তন। আইন ও বিধির সহজীকরণ, স্পষ্টীকরণ ও পরিপালন ২০১। কর পরিপালন সহজ করা, প্রায়োগিক অস্পষ্টতা দূর এবং কর ফাঁকির ক্ষেত্র বন্ধ করার জন্য আইনী সংস্কারের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো: ক) আয়কর রিটার্ন দাখিলের আওতা সম্প্রসারণ করে ব্যবসা বা পেশার নির্বাহি (বীবপঁঃরাব) বা ব্যবস্থাপনা (সধহধমবসবহঃ) পদে নিয়োজিত বেতনভোগী কর্মীর জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা; খ) কর নিবন্ধনের আওতা সম্প্রসারণ; গ) তুলনামূলক কম সম্পদ রয়েছে এরূপ করদাতাদের কর পরিপালন আরো সহজ করার জন্য সম্পদ বিবরণী দাখিলের শর্ত আরো শিথিল করা; ঘ) কর অডিট পদ্ধতি আরো সহজ, স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করা; ঙ) কয়েকটি ক্ষেত্রে উৎস করের হার পুনর্বিন্যাস ও প্রায়োগিক অস্পষ্টতা দূরকরণ; এবং চ) কর ফাঁকির ক্ষেত্রে কর মামলা পুনউন্মোচনের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, পুনউন্মোচিত কর মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আরো সহজ, স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করা এবং প্রায়োগিক অস্পষ্টতা দূর করা। কর ব্যবস্থাপনার সংস্কার ২০২। প্রত্যক্ষ করের আইনী সংস্কারসমূহ পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক সংস্কারও প্রয়োজন হবে। বিগত অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি তিনটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করের প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয় উল্লেখ করেছিলাম: ক) উৎস কর খাতের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য একটি কেন্দ্রীয় উৎস কর ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে ইলেক্ট্রনিক উৎস কর ব্যবস্থা প্রচলন এবং কেন্দ্রীয় উৎস কর ইউনিটের অধীনে উপযুক্ত সংখ্যক উৎস কর মনিটরিং অঞ্চল গঠন; খ) আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী কর তথ্য ইউনিট গঠন করা যা দেশের অন্যান্য সিস্টেমের সাথে আন্তঃসংযুক্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর তথ্য লাভ করবে এবং কর ফাঁকি উদঘাটন ও করদাতা চিহ্নিতকরণে কাজ করবে; গ) আন্তর্জাতিক কর ফাঁকি রোধ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও তার উপর প্রযোজ্য কর পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থাপনার একটি উপযুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো সৃজন। ২০৩। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। আগামী বছরের মধ্যে এ ইউনিটগুলো কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি। ২০৪। এ ছাড়া আয়কর ব্যবস্থাপনাকে সম্মানিত করদাতাদের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে নতুন কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। তার ধারাবাহিকতায় যশোর ও কুষ্টিয়ায় দুটি নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় কর অফিস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানের ৮৭ উপজেলার অতিরিক্ত আরো ১০৩টি উপজেলায় আয়করের সার্কেল অফিস খোলার প্রস্তাব করছি। ২০৫। প্রত্যক্ষ করে গৃহীত সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনীতির কর-অনারোপিত খাতগুলো করের আওতায় আসবে এবং বাংলাদেশের কর সংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মাননীয় স্পীকার ২০৬। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আহরিত রাজস্বের মধ্যে স্থানীয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সরকারের গৃহীত নানামুখী সংস্কার কর্মসূচী, সম্মানিত করদাতা ও ভোক্তাদের কর প্রদানে ইতিবাচক মনোভাব এবং রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিকতার ফলশ্রুতিতে এ খাতে রাজস্ব আদায়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির নিরিখে মূল্য সংযোজন কর খাত থেকে আরো বেশি পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে। অত্যুত্তম রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা ২০৭। ভ্যাট আমার কাছে শুরু থেকে একটি অত্যুত্তম কর বলে মনে হয়। তবে, এ করের আওতায় কোন পণ্য উৎপাদনে বা সেবা প্রদানে বিভিন্ন পর্যায়ে যে হিসাব রাখতে হয় তা’ ভ্যাট সংগ্রহকারী কতিপয় ব্যবসায়ীরা রাখতে চান না। তাই এ ভ্যাটকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আমাকে বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করতে হয়। আমার মনে হয় টার্নওভার কর এবং ভ্যাটমুক্ত সীমা বাড়িয়ে আমি ব্যবসায়ীদের সন্তুষ্ট করতে পারব। ১৯৯১ সাল থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হয়েছে এবং তাতে ভোক্তারা ও ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আমি ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশেই বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। ঙহষরহব ঠঅঞ জবমরংঃৎধঃরড়হ এবং জবঃঁৎহ ঝঁনসরংংরড়হ প্রক্রিয়া ২০৮। ২০০৯ থেকেই মূল্য সংযোজন কর আইন সংস্কারের বিষয়ে আমরা শিল্প ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে নতুন আইন পাস হয় এবং ক্রমান্বয়ে তার বিধান কার্যকরী হতে থাকে। ইতোমধ্যে আইনটি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে এবং উক্ত আইনের আওতায় ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬’ জারি করা হয়েছে। আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ঠঅঞ ঙহষরহব চৎড়লবপঃ নামে একটি প্রকল্প ২০১৩ সালে গ্রহণ করেছিল এবং এর আওতায় নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কাজ সুষ্ঠুরূপে এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পের আওতায় করদাতাদের ঙহষরহব জবমরংঃৎধঃরড়হ কার্যক্রম গত ২৩ মার্চ, ২০১৭ খ্রি. তারিখে শুরু হয়েছে এবং ঙহষরহব জবঃঁৎহ ঝঁনসরংংরড়হ কার্যক্রম শীঘ্রই চালু হবে। এছাড়া নতুন আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে অনলাইন ভিত্তিক ইঁংরহবংং চৎড়পবংং উবংরমহ এর কার্যক্রম ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঠঅঞ ঙহষরহব ঝবৎারপব ঈবহঃৎব স্থাপন ২০৯। নতুন আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঠঅঞ ঙহষরহব চৎড়লবপঃ এর আওতায় দুই লাখেরও অধিক করদাতাকে আইনের সার্বিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং এ কার্যক্রম বর্তমানেও চলমান রয়েছে। একইসাথে, নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারমূলক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আইনটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এর আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট দফতরসমূহ করদাতা উদ্বুদ্ধকরণমূলক অসংখ্য সভা, সেমিনার, ওয়ার্কসপ আয়োজনসহ এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআই ও দেশের বিভিন্ন চেম্বারের সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ’ সম্পন্ন করেছে। অংশীজনদের সাথে এ ধরনের উদ্যোগ বর্তমানেও চলমান রয়েছে। করদাতাদের মধ্যে প্রশিক্ষক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও চেম্বারের প্রায় ২০০ প্রতিনিধিকে ঞঙঞ হিসেবে সনদ প্রদান করা হয়েছে, যাঁরা অন্যান্য ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভ্যাট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। দেশের সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের জন্য ভ্যাট বিষয়ে প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন বিষয়ে সম্মানিত করদাতা এবং সাধারণ জনগণের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে- যার নম্বর ১৬৫৫৫। যে কেউ এই নম্বরে ফোন করে ভ্যাট সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে তাঁর প্রশ্নের জবাব পেতে পারেন। এছাড়া যে সকল করদাতার নিজস্ব ইন্টারনেট সুবিধা নেই, তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ১৬টি ঠঅঞ ঙহষরহব ঝবৎারপব ঈবহঃবৎ (ঠঙঝঈ) থেকে রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ, রিটার্ন দাখিল ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন। ভ্যাট বিভাগ ছাড়াও আয়কর বিভাগের কমিশনারদের কার্যালয়ে ও শুল্ক বিভাগের কাস্টম হাউজে ‘হেল্পডেস্ক’ এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে ‘ভ্রাম্যমাণ হেল্পডেস্ক’ স্থাপন করা হয়েছে। ভ্যাট আইন পুরোপুরি কার্যকরকরণ ২১০। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আগামী ১ জুলাই, ২০১৭ খ্রি. তারিখ থেকে পুরোপুরি কার্যকর করার লক্ষ্যে রাজস্ব প্রশাসনও প্রস্তুত। হিসাব সংরক্ষণের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের সুবিধার্থে এ আইনের বাস্তবায়ন ইতোপূর্বে দু’বার পেছানো হয়েছিল। তবে, ব্যবসায়ীদের সাথে পুনঃপৌনিক আলোচনা এবং সে আলোকে আইনের কতিপয় কাঠামোগত সংস্কার সাধনের মাধ্যমে আইনটি বাস্তবায়নের পথে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও এখন নতুন ভ্যাট আইন গ্রহণে প্রস্তুত। এ প্রেক্ষিতে, আমি এ মহান জাতীয় সংসদে আগামী ১ জুলাই, ২০১৭ খ্রি. তারিখ হতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ পুরোপুরিভাবে কার্যকর করার প্রস্তাব করছি। ইঁংরহবংং চৎড়পবংং-এর সঙ্গে আইনের সমন্বয় এবং ভ্যাট সংগ্রহকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ২১১। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনটি গত ২০১২ সালে মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। প্রায় ৫ বছর ইতোমধ্যে অতিবাহিত হওয়ায় ব্যবসার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতির অগ্রগতি এবং আধুনিক নঁংরহবংং ঢ়ৎড়পবংং এর সাথে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ এর সুসমন্বয় অত্যাবশ্যক। সে কারণে আইনটির সফল বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালার সংস্কারের বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে, একটি বিষয়ের দিকে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেটি হলো, আমাদের দেশে ভ্যাটের আওতায় নিবন্ধিত সাড়ে আট লাখ শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু মূসকদাতার সংখ্যা মাত্র ৩২ হাজার। তাতেই স্পষ্ট যে, মূল্য সংযোজন কর অত্যন্ত সীমিত ক্ষেত্রে বহাল আছে। রিটার্ন প্রদানকারী নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আগামী দুই অর্থবছরে আমরা ৬০ হাজারে উন্নীত করতে চাই। আমি এখন নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬ -এর পদ্ধতি সহজীকরণ বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব এ মহান সংসদে উপস্থাপন করছি: মূসক ও ঞঁৎহড়াবৎ ঞধী অব্যাহতির সীমা ২১২। প্রথমেই বলবো যে, মূল্য সংযোজন কর বর্তমানে এক অভিন্ন হারে প্রয়োগ করা হবে। হারটি হবে ১৫ শতাংশ এবং এইটি আগামী তিন বছর অপরিবর্তিত থাকবে। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সমাজের সুপারিশ অনুসারে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার স্বার্থে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা তাঁদের অনুরোধ মোতাবেক বিদ্যমান ৩০ লাখ টাকা হতে বৃদ্ধিপূর্বক ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি অর্থাৎ মাসে গড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারধারী প্রতিষ্ঠানের কোন করই দিতে হবে না। এ ধরনের কোন সুবিধা ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে ছিল না। একইসাথে, ব্যবসায়ীদের চাহিদা মোতাবেক টার্নওভার করের সীমা বিদ্যমান ৮০ লাখ টাকা হতে বৃদ্ধিপূর্বক ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি অর্থাৎ যে সকল প্রতিষ্ঠানের মাসিক টার্নওভারের পরিমাণ গড়ে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে তাঁরা মাত্র ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর পরিশোধের সুযোগ পাবেন। এটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নেই। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রস্তাব অনুসারে নতুন ভ্যাট আইন ও বিধিমালার পদ্ধতিগত সহজীকরণ সংক্রান্ত কতিপয় অন্যান্য সংশোধন আনা হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতির তফসিল ২১৩। নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন আমদানি পর্যায়ে বা সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের সুযোগ রাখা হয়নি। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর মূল কাঠামোর সাথে সঙ্গতি রাখার জন্য এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পূর্বের অর্থাৎ ১৯৯১ সালের আইনের ভ্যাট অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রথম ও দ্বিতীয় তফসিল এবং অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ও আদেশসমূহ একীভূত করে এবং তার সিংহভাগ অব্যাহতি অক্ষুণœ রেখে নতুন ভ্যাট আইনের প্রথম তফসিল প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করছি। পর্যায় ভিত্তিক অব্যাহতির প্রেক্ষিতে ংঁঢ়ঢ়ষু পযধরহ এর এক বা একাধিক পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী কোন পর্যায়ে অব্যাহতি না থাকলে রেয়াত গ্রহণের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সম্পূর্ণ ভ্যাটের ভার বিশেষ একটি পর্যায়ের উপর অর্পিত হয়। এতে করে অব্যাহতির সুবিধাটি সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবার ঊহফ ঠধষঁব -তে প্রতিফলিত না হওয়ায় সাধারণ জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে কর বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই বলে থাকেন যে, কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য সবচেয়ে বেশি কর দেয়। তাই সকল স্তরে ভ্যাট আরোপ ও রেয়াত গ্রহণের ব্যবস্থা থাকায় বিশেষ কোন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর ওপর ঠঅঞ এর নঁৎফবহ তৈরি হবে না। পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের (ঝঁঢ়ঢ়ষু ঈযধরহ) অন্তর্ভুক্ত সকলকে মূল্য সংযোজনের পরিমাণের উপর ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে আমাদের ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। তথাপি নতুন আইনটি বাস্তবায়নের স্বার্থে এবং সকল স্তরের ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রথম তফসিলে ১৯৯১ সনের আইনের অব্যাহতিপ্রাপ্ত ৫৩৬ টি ঐ.ঝ. ঈড়ফব ভুক্ত আইটেমের পরিবর্তে প্রায় ১০৪৩ টি ঐ.ঝ. ঈড়ফব ভুক্ত আইটেমকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করছি। পূর্বের ন্যায় নতুন আইনের প্রথম তফসিলে বর্ণিত ভোগের নিমিত্ত নির্ধারিত মৌলিক খাদ্য সংক্রান্ত কতিপয় ক্ষেত্র যেমন: চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি ও আঁখের গুড়, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, তরল দুধ, প্রাকৃতিক মধু, বার্লি, ভুট্টা, গম ও ভুট্টার তৈরি সুজি, লবন ইত্যাদিসহ প্রায় ৫৪৯টি পণ্যের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। এছাড়াও, ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের উপর এবং গণ-পরিবহণ সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। কৃষি, গবাদি পশু ও মৎস্য চাষ খাত সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪০৪টি ক্ষেত্রে এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক কার্যক্রম, অলাভজনক সাংস্কৃতিক সেবা প্রভৃতির ক্ষেত্রেও পূর্বের ন্যায় ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। প্রস্তাবিত ব্যবস্থার ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বিদ্যমান মূল্য অনেকাংশে কিছুটা হ্রাস পাবে এবং কোন অবস্থাতেই কোন পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। ভ্যাট আরোপের নতুন তফসিল ২১৪। ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে আমদানি পর্যায়ে সর্বমোট ১৪৩১ ট্যারিফ লাইনের বিপরীতে বিভিন্ন হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত ছিল। অন্যদিকে, মূ?
×